ফিলিস্তিনে গণহত্যা : জুমায় দেশের সব মসজিদে বিশেষ দোয়া
চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরের বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত
স্টাফ রিপোর্টার: ইসরায়েলি বর্বরতায় নিহত ফিলিস্তিনিদের রুহের মাগফেরাত এবং আহতদের সুস্থতা কামনায় দেশের সব মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর এই বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। সম্প্রতি ফিলিস্তিনের গাজায় নির্মম গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে বর্বর ইসরায়েলি বাহিনী। অবরুদ্ধ গাজায় খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি এবং গাজাবাসীকে দুর্ভিক্ষের মুখে ফেলেছে। ইতিহাসের জঘন্যতম বর্বরোচিত গণহত্যায় মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ভ্রাতৃপ্রতিম ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি গভীর শোক, সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এজন্য দোয়া ও মোনাজাত আয়োজন করা হয়।
এদিকে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে সারাদেশের মানুষ। চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে জেলা-উপজেলা শহরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজেদের অবস্থান থেকে রাস্তায় নেমে এসে প্রতিবাদ মিছিল করেছেন ও সমাবেশে সামিল হয়েছেন। সমাবেশ বক্তারা বলেন, ফিলিস্তিনে যা ঘটছে, তা শুধু তাদের ধ্বংস নয়, এটা বিশ্ব মুসলমানদের নিঃশেষ করার একটি ষড়যন্ত্র। মুসলিম বিশ্ব কার্যকরভাবে ঐক্যবদ্ধ হলে ইহুদিরা এতটা সাহস দেখাতে পারত না। বক্তারা আরও বলেন, ‘বিশ্বের কয়েকটি পরাশক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনে বহু আগেই ফিলিস্তিনে গণহত্যা শুরু হয়েছে। আজ ফিলিস্তিনের মানুষ নিজেদের দেশেই পরবাসী। অথচ মুসলিম বিশ্বের মোড়লদের কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই। তারা মুখ খুলছে না, অবস্থান নিচ্ছে না।’ বক্তারা বলেন, ইসরাইল কর্তৃক নিরীহ মুসলিমদের উপর হামলা ও গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। অধিকৃত এলাকা ফিলিস্থিনিদের ফিরিয়ে দিয়ে তাদের শান্তিপূর্ণ আবাস নিশ্চিত করতে হবে। গাজার মুসলমানদের স্বস্থানে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং সমস্ত ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সন্ত্রাসী ইসরাইলী বাহিনী ও প্রধানমন্ত্রী নিতানিহুকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে গণহত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বাস জানানো হয়েছে। কর্মসূচি থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে দেশটির সব পণ্য বয়কটের জোরালো সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়।
চুয়াডাঙ্গায় সম্মিলিত উলামা কল্যাণ পরিষদ উদ্যোগে ঈদ পরবর্তী পুনর্মিলনী এবং গাজায় ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল কর্তৃক নৃশংস গণহত্যার শিকার নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের জন্য বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বাদ এশা জেলার ভালাইপুর মোড়স্থ হামিরন নেসা আল কোরআন আদর্শ কওমি মাদরাসা সংলগ্ন মসজিদে এই পুনর্মিলন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি আলহাজ মাওলানা বশির আহমাদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনটির উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আমির মুফতি শোয়াইব আহমাদ কাসেমী। সম্মিলিত উলামা কল্যাণ পরিষদের মিডিয়া বিষয়ক সম্পাদক এসএম সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় আয়োজিত পুনর্মিলনী ও দোয়া মাহফিলে আরও উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ আমির হোসেন, মুফতী আরিফ বিল্লাহ, মাওলানা আরিফুল ইসলাম হাওলাদার, হাফেজ মাওলানা সারওয়ার হুসাইন, মাওলানা হাসানুজ্জামান, হাফেজ মাওলানা আবু ত্বলহা সুরুজ, মাওলানা আব্দুল্লাহ, মাওলানা জুনাইদ ও মাওলানা জামাল উদ্দিন প্রমুখ। আলোচনা শেষে গাজাবাসীসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি, ঐক্য ও মুক্তি কামনায় বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মুফতি শোয়াইব আহমাদ কাসেমী।
চুয়াডাঙ্গা পলাশপাড়া জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। কোর্ট মোড়ে গিয়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশে পরিণত হয়। সমাবেশ থেকে দখলদার ইসরায়েলকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা এবং তাদের সব ধরনের পণ্য বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করার জোর দাবি জানানো হয়। একইসাথে চুয়াডাঙ্গায় কোনো ইসরায়েলি পণ্য প্রবেশ করতে না দেয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা যুবদলের সদস্য অমিত হাসান রবিন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্মসম্পাদক মো. মুনজুরুল জাহিদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক তোহফাতুর রাব্বি রিংকু। এছাড়াও অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রকাশনা সম্পাদক জুয়েল রানা, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ওয়েজ আল-আমিন, কোষাধ্যক্ষ শাকিল উদ্দিন শুভ, জেলা যুবদলের সদস্য আবু বক্কর সোহেল, জেলা ছাত্রদলের জয়েন্ট সেক্রেটারি ইখলাস মুন রায়হান, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান সাজু এবং দপ্তর সম্পাদক সোহেল রানা, সুনীল, বাপ্পি, আনাস, আরিফ, জাহিদ, খাইরুল, ইন্তাজ, তুষ্ট, জসিম, মারুফ, মজিদ, সাগর, রিপন, আশিক মাহফুজ কাকন, মুনতাসিরসহ আরও অনেক স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। সমাবেশ থেকে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, গাজায় ইসরাইলী হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা, মুসলিমদের উপর পাশবিক নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে দর্শনায় বিক্ষোভ মিছিল সহ সমাবেশ হয়েছে। দর্শনা পৌর ইমাম সমিতি ও তাওহীদি জনতার উদ্যোগে এ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়। গতকাল শুক্রবার বাদ জুম’য়া দর্শনা রেলবাজারস্থ শাহরিয়ার শুভ মুক্ত মঞ্চে সমবেত হতে থাকে পৌর এলাকার বিভিন্ন মসজিদের মুসল্লিরা। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ। সমাবেশ শেষে মুসল্লীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে দর্শনা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দর্শনা বাসস্ট্যান্ড ট্রাফিক মোড়েও সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর দোয়া পরিচালিত হয়। বিক্ষোভ সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন, দর্শনা পৌর ইমাম সমিতির সভাপতি হাজী নুরুল ইসলাম। সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শাহ আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর তরফদার সাবু, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী আব্দুল কাদের, দর্শনা রেল বাজার জামে মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি জুনায়েদ আল আজাদ, কেরুজ জামে মসজিদের ঈমাম মাওলানা শামসুজ্জোহা, মুফতি ওমর ফারুক, মাওলানা মনজুর আহমাদ, মাওলানা জুবায়ের প্রমুখ। দর্শনা পৌর ইমাম সমিতির আহবানে বিক্ষোভ সমাবেশে পৌর শহরের প্রায় ৩০টি মসজিদ থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি অংশগ্রহণ করে।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি গণহত্যার প্রতিবাদে মেহেরপুর জেলা যুবদলের বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত। ১১ এপ্রিল শুক্রবার দুপুরে মেহেরপুর জেলা যুবদলের পক্ষ থেকে হুযাইফা ডিক্লেয়ার নেতৃত্বে ফিলিস্তিনি গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন এর আয়োজনে ইসরায়েলি পণ্য ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। এ সময় যুবদলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মেহেরপুর শহরের বিভিন্ন সংগঠন পৃথক পৃথকভাবে ফিলিস্তিনি গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে। ফিলিস্তিনি গণহত্যার প্রতিবাদে মেহেরপুরে ইমাম সমিতির বিক্ষোভ মিছিল। ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি মেহেরপুর জেলা শাখার উদ্যোগে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টার সময় শহীদ ড.শামসুজ্জোহা পার্ক থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে মেহেরপুর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি হাফেজ মাওলানা রোকনুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সিরাজ উদ্দীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আব্দুল ওহাব, দপ্তর সম্পাদক মাওলানা জামাল উদ্দীন, সহ-দপ্তর সম্পাদক মাওলানা ইদ্রিত আলী, সদস্য মাওলানা সাইফুল ইসলাম, হাফেজ মাওলানা শাহজালাল, নাসির উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, আব্দুর রহমানসহ বিভিন্ন স্তরের মুসল্লিরা।
আমঝুপি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর সদর উপজেলা আমঝুপি ইউনিয়নে খোকসা গ্রামে থেকে ফিলিস্তিনে-ইসরায়েলি নৃশংস গণহত্যা বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার বাদ জুমার নামাজ আদায় করে প্রধান প্রধান সড়ক গুলো বিক্ষোভ করেন। উপস্থিত ছিলেন খোকসা কেন্দ্রয়ী জামে মসজিদের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ঈদগা ময়দান, কবরস্থান সভাপতি রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মসজিদের সহ-সভাপতি সাবেক মেম্বার হাসিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সেক্রেটারি সামসুজ্জোহা (সামিদুল), খোকসা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম খালিদ সাইফুল্লাহ (আপেল), খোকসা হাট মসজিদের ইমাম সাহেব আব্দুর রশিদ (ইশা খাঁ), বাইতুন নূর জামে মসজিদের ইমাম সাহেব মামুনুর রশিদ, খোকসা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের প্রচার সম্পাদক সাংবাদিক সেলিম রেজা, জহুরুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, তরিকুল ইসলাম, ইসরুল সহ আরো উপস্থিত ছিলেন অনেকেই প্রমুখ্য।
হাটবোয়ালিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়ায় ছাত্র ও যুব সমাজের উদ্যোগে গাঁজায় ইসরাইলি আগ্রাসন ও গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং সমর্থনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পরে হাটবোয়ালিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে হাটবোয়ালিয়া চৌ-রাস্তার মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বক্তব্য রাখেন, হাটবোয়ালিয়া জামে মসজিদের খতিব মাওলানা লোকমান হোসাইন, সভাপতি সেলিম রেজা, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদ, বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক জান মহাম্মদ, মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পরিচালক সাংবাদিক মুর্শিদ কলিন, এইচআর ইলেকট্রনিক্স এর স্বত্বাধিকারী আল আমিন সোহাগ প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন বাজার কমিটির সভাপতি এনামুল হক শিলু, সাংবাদিক সোহেল হুদা, প্রাক্তন সেনা সদস্য রাইতাল হক, ব্যবসায়ী মজিবুল ইসলাম রকি, বাবলু, বখতিয়ার হোসেন, পীয়াস, তাহমিদ আল হুদা তাইফ, সাব্বির হোসেন চঞ্চল, অর্ক প্রমুখ
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.