স্টাফ রিপোর্টার: আমাদানি হচ্ছে প্রসাধনী পণ্য হিসাবে। এসব প্রসাধনী পণ্যের ভেতরে রয়েছে নানা ওষুধের উপাদান। কিন্তু ওষুধের উপাদান থাকলেও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কোন অনুমোদন নেয়া হচ্ছে না। অনুমোদন ছাড়াই পণ্য খালাস হচ্ছে। এরপরই তা বাজারজাত করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব পণ্য আবার এক শ্রেনীর চিকিৎসক (চর্ম ও যৌন রোগ) কমিশনের বিনিময়ে ব্যবস্থাপত্রে লিখে দিচ্ছেন। অবশ্য তারা একজন রোগীকে ২০/৩০ হাজার টাকার প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহারের জন্য ব্যবস্থাপত্রে উল্লেখ করছেন। তার বিনিময়ে প্রসাধনী আমদানিকারকদের কাছ থেকে পাচ্ছেন গাড়িসহ বিভিন্ন উপঢৌকন। বিদেশ যাওয়ার টিকেটসহ নানা সুযোগ সুবিধাও দিচ্ছেন এই শ্রেনীর আমদানি কারকরা।
এদিকে আসলের পাশাপাশি এসব পণ্য আবার দেদারসে নকল হচ্ছে। ঢাকা ও এর আশপাশে বিভিন্ন স্থানে এসব পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। ফলে কোনটা আসল আর কোনটা নকল সেটা গ্রাহকের পক্ষে যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে এই নকল পণ্য উত্পাদনের কারখানারও সন্ধান পাওয়া গেছে। কিন্তু থেমে নাই প্রতারক চক্র। এক সময় গুলশান-১ সিটি করপোরেশন মার্কেটের ৪৫টি কসমেটিকসের দোকানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসব অভিযানে ওইসব দোকান থেকে বিপুল পরিমাণ নকল বিদেশি ব্র্যান্ডের প্রসাধনী সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। ওই অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট রোকন উদ দৌলা। পরবর্তীকালে এসব সামগ্রী পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে এতে শুধুমাত্র কেমিক্যাল রয়েছে। যা ক্ষতিকর। এগুলো ব্যবহারে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ঝুিঁক রয়েছে বলে তখন উল্লেখ করা হয়।
বিমানবন্দরে এসব পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন, কাস্টমস ও বিএসটিআইয়ের এক শ্রেনীর কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন। তারা নিয়মিত পাচ্ছেন আমদানি কারকদের কাছ থেকে মোটা অংকের মাসোহারা। ওষুধের নামে বাজারে পাওয়া এসব বিপদজনক প্রসাধনী সামগ্রীতে বাজার সয়লাব। দেশের এক শ্রেনীর কিশোরী, তরুণী ও যুবতীদের স্বপ্ন তারা ফর্সা হতে চান। এই শ্রেনীর মেয়েদের টার্গেট করেই এ ধরনের কসমেটিকস বিদেশ থেকে আমদানি করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। আমদানি এসব পণ্যের গায়ে যেসব উপাদানের কথা বর্ণনা করা হয়েছে তাতে ওষুধের উপাদান রয়েছে। এসব প্রসাধনী পণ্যের মধ্যে রয়েছে লোশন, ক্রিম ও সাবান। এসব পণ্য অধিকাংশই সুগন্ধিযুক্ত। যাতে সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছেন ক্রেতারা। লোভনীয় প্রচার-প্রচারণার ফাঁদে পড়ে এসব পণ্য কিনছেন তরুণ-তরুনীরা। আবার ভেজাল পণ্যেও সয়লাব বাজার। এসব পণ্য ব্যবহার করে তারা স্কিন ক্যান্সার, কিডনি, লিভারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলছেন, এসব পণ্য ব্যবহার করে যেসব জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তা পরে চিকিৎসাতেও ভালো হচ্ছে না। অপরদিকে ফর্সা তো হয়নি বরং স্থায়ীভাবে নানা চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রসাধনী সামগ্রীতে কোন ধরনের ওষুধের উপাদান থাকলে বিদেশ থেকে আমদানি করা এসব পণ্য ছাড়ে অবশ্যই ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন নিতে হবে। কিন্তু এসব পণ্য ছাড়ে অধিদপ্তরের কোন ধরনের অনুমোদন নেয়া হয় না। এমনিতেই ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের জনবল কম। তবে কাস্টম কর্তৃপক্ষ এব পণ্য ছাড়ের আগে আমাদের অবহিত করলে আমরা যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেব।
আণবিক শক্তি কমিশন, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ও গণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ২০১৯ সালে পরিচালিত পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে, বাজারজাত করা এসব প্রসাধনী পণ্যে উচ্চমাত্রার সীসা, ক্রোমিয়াম ও ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছে। প্রসাধন পণ্যের ৩২টি নমুনা পরীক্ষা করে এইসব ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া যায়। ফলে এগুলো ব্যবহারে তরুনীরা অনেকে জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক (মিডিয়া) আইয়ুব আলী ইত্তেফাককে বলেন, প্রসাধনী পণ্যে ওষুধের উপাদান থাকলে ড্রাগ পলিসি অনুযায়ী বাজারজাতে তার অনুমোদন দেব আমরা। কিন্তু আমরা এ ধরনের কোন প্রসাধনী সামগ্রীতে অনুমোদন দেইনি। এরপরও তা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের জনবল কম। প্রায় ১৮শত জনবল নিয়োগের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (মূল্য সংযোজন কর) এর মহাপরিচালক ড. মইনুল খান ইত্তেফাককে বলেন, প্রসাধণী সামগ্রীর গায়ে ওষুধের কোন উপাদান থাকলে তা অনুমোদনের জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে পাঠাই। পণ্যের গায়ে উপাদানের পরিমাণ দেখেই তবে মাল খালাস করা হয়। তিনি বলেন, সম্প্রতি ভোজ্য তেলের নামে এর আগে ১২৬ কেজি তরল কোকেন দেশে আমদানি করা হয়েছিলো। সেই চালানও আমরা ধরেছি। তাই প্রসাধনী পন্যের গায়ে ওষুধের উপাদান থাকবে আর আমরা ছাড় করব তার সুযোগ নেই।
বিএসটিআইয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা কখনোই যাচাই-বাছাই ছাড়া কোন মাল বাজারজাত করার অনুমতি দেই না।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ