পিঠা-পুলি আমাদের লোকজ শৈল্পিক ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই প্রকাশ
আলমডাঙ্গায় পিঠা উৎসব উদ্বোধনকালে ইউএনও রনি আলম নূর
রহমান মুকুল/শরিফুল ইসলাম রোকন: আমাদের প্রাচীন ইতিহাসে পিঠাপুলির স্থান বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনে তার পরিচয় মেলে। রামায়ণ, অন্নদামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, মনসামঙ্গল, চৈতন্য চরিতামৃত ইত্যাদি কাব্যে উল্লেখ রয়েছে। মৈমনসিংহ গীতিকায় কাজল রেখা গল্পে বাঙালির খাদ্য সংস্কৃতিতে পিঠার জনপ্রিয়তার উল্লেখ পাওয়া যায়। বাঙালির লোকজ ইতিহাস-ঐতিহ্যে পিঠা-পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পিঠা-পায়েস শীতকালের রসনা পরিতৃপ্তির খাবার হিসেবে অত্যন্ত পরিচিত। আত্মীয়স্বজন ও পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধনকে আরও দৃঢ় ও মজবুত করে তুলতে পিঠা-পুলির উৎসব বিশেষ ভূমিকা পালন করে। জামাইয়ের আদর সহ¯্র গুণ বাড়িয়ে দেয় পিঠাপুলির আপ্যায়ন। শীতকালে গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েস তৈরির ধুম পড় নবান্নের পর জাঁকিয়ে শীত পড়লে পৌষ মাঘে পিঠা তৈরির আয়োজন করা হয়। বসন্তের আগমন পর্যন্ত চলে হরেকরকম পিঠা খাওয়ার ধুম। এ মরসুম খেজুরের রস ও গুড়ের মরসুম। খেজুরের রস থেকে গুড়, পায়েস এবং নানারকম মিষ্টান্ন তৈরি হয়। খেজুরের রসের মোহনীয় গন্ধে তৈরি পিঠা-পায়েস আরও বেশি মধুময় হয়ে ওঠে। কালের গর্ভে ক্রমেই হারাতে বসেছে আমাদের আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবার পিঠাপুলি। প্রাত্যহিক নাগরিক যন্ত্রণায় আমাদের এই রসনা পরিতৃপ্তির আবেদন মøান হতে চলেছে।
এই আবহমান বাংলার চিরন্তন রসনাতৃপ্তির উত্তরাধিকারকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে আলমডাঙ্গায় উপজেলা প্রশাসন পিঠা উৎসবের আয়োজন করে। গতকাল বুধবার বিকেলে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনি আলম নূর। তিনি উৎসবের প্রধান অতিথি ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. সালমুন আহমেদ ডন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মারজাহান নিতু, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেজওয়ানা নাহিদ, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাতেমা কামরুন্নাহার আঁখি, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাকছুরা জান্নাত, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক, উপজেলা রিসোর্চ ইন্সটেক্টর জামাল হোসেন, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা দেওয়ান জাহাঙ্গীর আলম। উদ্বোধনকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনি আলম নূর বলেন, পিঠা-পুলি আমাদের লোকজ, শৈল্পিক ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই প্রকাশ। আমাদের হাজারো সমস্যা সত্ত্বেও গ্রামবাংলায় এসব পিঠা-পার্বণের আনন্দ-উদ্দীপনা এখনো মুছে যায়নি। পিঠা-পার্বণের এ আনন্দ ও ঐতিহ্য যুগ যুগ টিকে থাকুক বাংলার ঘরে ঘরে। এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।