হাবিবুর রহমান: পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় টিউবয়েল ও ইলেক্ট্রিক মটরগুলোতে পানি কমে গেছে। এর মধ্যে অনেক টিউবওয়েল ও ইলেকট্রিক মটরগুলোতে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সঙ্কট দেখা দিয়েছে পানযোগ্য পানির। চুয়াডাঙ্গা জেলা দেশের অন্যান্য জেলা থেকে অনেটা উঁচু। ফলে উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় নিচের দিকে নামছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় সরকারি সাড়ে ৪ হাজার ও বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ৪৫ হাজার নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় হাজার খানেক অকেজো হয়ে রয়েছে। এছাড়াও দামুড়হুদা উপজেলা সদর, সদাবরী মদনা, দর্শনা, নতিপোতা, হাউলি, কুড়–লগাছি, কার্পাসডাঙ্গা, কুতুবপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে এক হাজারের অধিক নলকূপে একেবারে উঠছে না পানি। বাকি টিউবওয়েলগুলোতে সামান্য পানি উঠছে। যে পরিমাণ পানি উঠছে তাতে পরিবারের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। পানির জন্য অন্যত্র ছুটতে হচ্ছে। ধীরে ধীরে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে অনেকের বাড়ীর নলকুপের পানি কম উঠায় স্থান পরিবর্তন করে নলকুপ বসানো হলেও একই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এমন অবস্থায় অনেকে রান্না, কাপড়চোপড় পরিস্কার করার কাজে ব্যবহার করছে এক সময়কার অব্যবহৃত কুয়া বা ইন্দারার পানি। ভুক্তভোগী কার্পসডাঙ্গার ওষুধ ব্যবসায়ী আতিয়ার রহমানসহ অনেকে জানান, বাড়ির মটরে পানি উঠছে না বললেই চলে। ভুক্তভোগীদের মতে, আগে ১৫-২০ মিনিট মোটর চালালেই বাড়ির ছাদের ট্যাংক পূর্ণ হয়ে যেতো। প্রায় মাস দেড়েক আগে থেকে দুই থেকে তিন ঘণ্টা মোটর চালালেও প্রয়োজনীয় পানি মিলছে না। এভাবে চলতে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে বৈদ্যুতিক মোটর। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় মোটর মাটির ১০-১২ ফুট নিচে নামিয়ে পানির চাহিদা মেটানো হচ্ছে। টিউবয়েলের একই অবস্থা। পানি তো উঠছেই না সামান্য পানি উঠলেও কল এতো পরিমাণ কড়া হয়েছে চাপাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। অসাবধানে কল চাপলে হ্যান্ডেল ছুটে মুখে লেগে রক্তাক্ত জখম হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। গ্রামের অনেককেই পানযোগ্য এক কলসি পানি আনতে অন্যের বাড়ি যেতে হচ্ছে। কুড়–লগাছি গ্রামের মহাজের আলী জানান, গ্রামের অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। এতে অনেক পরিবার পানি সঙ্কটে পড়েছেন। তাই গ্রামে তার একটি ইন্দারা রয়েছে তিনি সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। সেখান থেকে অনেকেই পানি নিচ্ছেন।
দামুড়হুদা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর ৬ থেকে ৮ ফুট নিচে নামছে পানির স্তর। বছর দশেক আগে এই এলাকায় ৪০ থেকে ৬০ ফুটের মধ্যে ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর পাওয়া যেতো। এখন বর্ষা মরসুমে ১০০ থেকে ১২০ ফুট উপরে পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে না। অপরিকল্পিতভাবে শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি তোলা এবং যত্রতত্র পুকুর-খাল-বিল ভরাটের ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সামনে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, নলকুপে পানি ধরে রাখতে এখন সাব-মার্সেবুল পাম্পযুক্ত নলকুপ বসানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।