বিশেষ প্রতিনিধি: বাবা-মায়ের উৎসাহে নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক মালচিং পদ্ধতিতে মরিচ চাষ করে সাফল্য লাভ করেছেন দামুড়হুদা উপজেলার চিৎলা গ্রামের বজলুর রহমান খোকনের ছেলে আব্দুস সামাদ। মালচিং পদ্ধতির এ মরিচ চাষ স্থানীয় মাঠপর্যায়ে চাষিদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে। আশপাশ গ্রামের চাষিরা প্রায়দিন দেখতে আসে আবার এগিয়ে আসছে বালাই নাশক কোম্পানির জনবল। নিজের আগ্রহ আর মেধাকে কাজে লাগিয়ে মাত্র ১০ কাঠা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে মরিচ চাষ করে অল্পসময়ে দুই লক্ষাধিক টাকার মুখ দেখেছেন তিনি। মালচিং পদ্ধতির মরিচ চাষি আব্দুস সামাদ বলেন, উপজেলার দেউলী গ্রামের কবরস্থান নামক মাঠে চলতি বছরে ১০ কাঠা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে মরিচ চাষের পরিকল্পনা করে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করি। সুদুর বগুড়া থেকে লাগা ফায়ার নামের মরিচ শিকড়যুক্ত জাতের ১৫শ চারা সংগ্রহ করি। এই চারার তখন বাজার দর ছিল ৩ হাজার টাকা। মালচিং খরচ হয়েছে ৩ হাজার টাকা। চলতি বছরের ফ্রেরুয়ারি মাসে জমিতে চারা রোপণ শুরু করি। তারপর নিবিড় পরিচর্চার মাধ্যমে মাত্র ৪ মাসেই ফলনের মুখ দেখি। বাজারে কাঁচা মরিচের আকাশ চুম্বি দরের ৬শ টাকা থেকে ২শ টাকা কেজি দরে এই মরিচ বিক্রি করতে পেরেছি। এখনও ভরপুর ফলন রয়েছে। একটি গাছে ১৫দিন অন্তর ২ কেজির বেশি মরিচ ধরছে। জমিতে এখন ১২শ ফলন্ত মরিচ গাছ রয়েছে। এই আগাম জাতের মরিচ চাষে রোগমুক্ত ও বেশি ফলনযুক্ত হওয়ায় বালাই নাশকের ব্যবহার কম। ইউটিউবের তথ্য আমাকে পৌঁছে দেয় এই চাষের দোরগোড়ায়। তিনি আরও বলেন, আধুনিক মালচিং পদ্ধতিতে মরিচ চাষ এ জনপদে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রায়দিন উপজেলার দেউলী, মুক্তারপুর, হাতিভাঙ্গা, বদনপুর, নাপিতখালী, চিৎলা, হাউলীসহ বিভিন্ন গ্রামের চাষিরা এই মরিচ ক্ষেত দেখতে আসছে। এ সমস্ত গ্রামের চাষিরা এ পদ্ধিতে মরিচ চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। উৎসাহী চাষিরা এগিয়ে এলে তাদেরকে সব ধরণের সহযোগিতা করতে আগ্রহী রয়েছি। মালচিং পদ্ধতিতে মরিচ চাষ করলে মরিচের চারা কোনোক্রমে বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয় না। আগাছার উৎপাত নেই, সার কম লাগে, পচন লাগে না, খরার তীব্রতা অতি বৃষ্টির কবলে পড়লেও সময়মত ফলনের কোনো ঘাটতি হয় না। এ পদ্ধতিতে মরিচ চাষ করে বাজার দর আশানুরুপ পেয়ে মাত্র ৫ মাসে দুই লক্ষাধিক টাকার কাঁচা মরিচ বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছি। এ জনপদে অন্যান্য ফসলের মতো মালচিং পদ্বতিতে মরিচ চাষাবাদ ছড়িয়ে পড়লে বাড়তি আয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে অনেক অস্বছল পরিবার। বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভর না হয়ে দেশের মাটিতে এমন উচ্চ ফলনশীল মরিচ চাষাবাদের জন্য সম্মিলিতভাবে এগিয়ে এলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব।
দামুড়হুদা কাঁচা বাজরের ব্যবসায়ী সমসুল আলম বলেন, বাজারে এবার কাঁচা মরিচের দর সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। কাঁচা ও পাঁকা উভয় মরিচেরই চাহিদা ব্যাপক। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ার ফলে এবার বাজার দর বেশি হয়েছিল। উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মরিচের বাজার দর দিনদিন কমতে শুরু করেছে। মরিচ নিত্য ব্যবহৃত মসলা যা তরকারিকে সুস্বাদু করতে বিরাট ভূমিকা রাখে।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন আক্তার বলেন, মরিচ আমাদের দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। দৈনন্দিন রান্নায় রং, রুচি ও স্বাদে ভিন্নতা আনার জন্য মরিচ একটি অপরিহার্য উপাদান। মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হলেও মরিচে পুষ্টির প্রায় সব উপাদান উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিদ্যমান। দেশের সব অঞ্চলেই মরিচের চাষাবাদ করা হয়। তবে চরাঞ্চলে মরিচের উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে। দামুড়হুদা উপজেলায় এবার ২৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছে। মালচিং পদ্ধতিতে মরিচ চাষ কেবলমাত্র আব্দুস সামাদের নাম শোনা গেছে। মালচিং পদ্ধতিতে মরিচ চাষের মাধ্যমে আমরা নারী-পুরুষ উভয়ে নিজেদের কর্মসংস্থানের ব্যসস্থা নিজেরাই করে নিতে পারি। তবে তার জন্য মরিচ চাষের আধুনিক পদ্ধতি স¤পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।