দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অপচিকিৎসার অভিযোগ উঠেছে। তিনি এখতিয়ার বহির্ভুতভাবে বড় ধরনের অপারেশন করার কারণে একের পর এক গরুর মৃত্যু হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারিসহ দরিদ্র গৃহপালিত পশুপালনকারীরা।
জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার পুরাতন বাস্তপুর গ্রামের রমজান আলীর ছেলে দরিদ্র কৃষক আব্দুর রহমানের একটি লাল রঙের এঁড়ে গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে দামুড়হুদা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের শরণাপন্ন হয়। নজরুল ইসলাম দরিদ্র কৃষকের বাড়ি গিয়ে গরুটিকে ক্ষতস্থানে অস্ত্রোপচার করতে হবে; আর এজন্য খরচ হবে বলে মোটাঅঙ্কের টাকা দাবি করেন। গত আনুমানিক ৩ মাস আগে গরুটি সুস্থ হয়ে না উঠলে ওই কর্মকর্তার কাছে যান দরিদ্র কৃষক আব্দুর রহমান। সে সময় দরদাম ঠিক হওয়ার একপর্যায়ে দরিদ্র কৃষকের বাড়ি গিয়ে গরুটির ক্ষতস্থানে ভুলক্রমে অস্ত্রোপচার করে ওই কর্মকর্তা। এরপর দিনেদিনে গরুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। ক্ষতস্থানে দগদগে ঘা দেখা দিয়েছে। গরুটির মালিক বারবার মোবাইলফোনে ওই কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলেও গরুটির আর চিকিৎসা দিচ্ছেন না তিনি। গরুটি দিনদিন শুকিয়ে যাচ্ছে। লক্ষাধিক টাকা মূল্যের গরুটি মারা যাবে বলে আশঙ্কা করছেন গরুর মালিক।
এদিকে সম্প্রতি সময়ে দামুড়হুদা উপজেলার চিৎলা মোড়পাড়ার আনছার আলীর ছেলে দিনমজুর আব্দুল কুদ্দুছের একটি ৮ মাসের গাভীন গরুর শরীরে মোটাঅঙ্কের টাকা নিয়ে ভুল অস্ত্রোপচার করে। গাভীন গরুটির শরীরে অস্ত্রোপচারের দিন রাতে গরুটি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ক্ষতস্থান থেকে রক্ত পড়তে থাকে। ভুক্তভোগী আব্দুল কুদ্দুছ বারবার মোবাইল করেন ওই কর্মকর্তাকে। বারবার ফোন দেয়ার পরও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এর কয়েকদিন পর গাভীন গরুটি মারা যায়। ভুক্তভোগী আব্দুল কুদ্দুছ বাদী হয়ে উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের নামে লিখিত অভিযোগ করে থানাসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে।
দামুড়হুদা উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের উপসহকারী প্রাণী সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, আমি অনেকদিন আগে পুরাতন বাস্তপুরের আব্দুর রহমানের গরুর অপারেশন করেছি। সেই সময় তাকে বলেছিলাম গরুটি বিক্রি করে দিতে। আর তার কাছ থেকে চিকিৎসা বাবদ ১ হাজার ১২শ টাকা নিয়েছি।
আপনি অপারেশন করতে পারেন কি জানতে চাওয়া হলে? তিনি তোতাপাখির মতো দম্ভের সাথে বলেন, আমি মেলা অপারেশন করেছি, হবে তো। চিৎলায় আমার চিকিৎসা দেয়া গরুটি মারা যাওয়ার ঘটনায় আমার বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে। এখন তাদের গরু যদি ভালো না হয়; তাহলে অন্য কারো দিয়ে চিকিৎসা করাক। ওরা মনে করেছে চিৎলার ঘটনায় হেমারিং হয়েছে হয়তো ওরাও অভিযোগ করলে আসমান থেকে একটা গরু চলে আসবে। তবে করুক, রিপোর্ট করিয়ে আসমান থেকে গরু নিয়ে আসুক। দেখি কে কি করে?
দামুড়হুদা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মোছা. তাসলিমা খাতুন বলেন, অপারেশন তো ওনার করার কথা না। আমাদের তো ভেটেনারি সার্জন নেই হয়তো সেজন্য উনি কিছু চিকিৎসা করে সাপোট দেন। এখন তো অনেকেই শিখে চিকিৎসা দিচ্ছে। সবাইকে তো আর ওভাবে রোধ করা সম্ভব না। তিনি আরও বলেন, ইতঃপূর্বে এ ধরনের একটি অভিযোগের পেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। যদি ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ করে তাহলে তদন্ত কমিটি গঠন করে রিপোর্টের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।