তুরাগ তীরে লাখো মুসল্লির জুমার নামাজ আদায়

কাল আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা

স্টাফ রিপোর্টার: গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে দেশের সর্ববৃহৎ জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। একসঙ্গে লাখো মানুষের সঙ্গে নামাজে অংশ নিতে পেরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল থেকে ময়দানে আসা মুসল্লিরা। এছাড়া ইজতেমায় এসেছেন ৭২ দেশের ২ হাজর ১৫০জন মেহমান। এদিকে গতকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানে তিন মুসল্লি মারা গেছেন বলে জানা গেছে। গতকাল শুক্রবার দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজে ইমামতি করেন তাবলিগ জামাতের মুরুব্বি মাওলানা জুবায়ের। দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে খুদবা শুরু হয়। জুমার নামাজ ১টা ৫১ মিনিটে নামাজ শুরু হয়ে শেষ হয় দুপুর ১টা ৫৬ মিনিটে। জুমার নামাজে অংশ নিতে ইজতেমায় অংশ নেয়া মুসল্লি ছাড়াও ঢাকা, গাজীপুরসহ আশপাশের জেলার বহু মানুষ ইজতেমাস্থলে হাজির হন। আগামীকাল আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা। শুক্রবার ভোর থেকে মানুষ বিভিন্ন যানবাহনে, এমনকি হেঁটে ইজতেমাস্থলে আসতে থাকেন। কেউ কেউ ময়দানে প্রবেশ করে নিজ নিজ এলাকা থেকে আগত পরিচিতদের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন। ময়দানের নির্ধারিত খিত্তার পাশাপাশি তুরাগ নদীর পশ্চিমপাড়ে, ময়দান পার্শ্ববর্তী কামারপাড়া সড়কে ও ফুটপাতে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ফুটপাতে এবং খোলা জায়গায় পলিথিন নামাজ আদায় করেন আগত মুসল্লিরা। এদিকে ইজতেমাকে কেন্দ্র করে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ৫টি আলাদা সেক্টরে কাজ করছেন ৭ হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্য। এছাড়াও অন্তত ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। তাবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বিরা জানায়, গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে প্রতিবছর তাবলীগ জামাত বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করেন। বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেয় দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসুল্লি। ইজতেমায় বয়ান করেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সব মাওলানারা। এতে বিভিন্ন বয়সের মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করেন। এবার অনুষ্ঠিত হয়েছে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা। প্রতিবছর ইজতেমার সময় শুক্রবার দেশের সর্ববৃহৎ জুমার নামাজ এখানেই অনুষ্ঠিত হয়। মুসলিম উম্মার দ্বিতীয় বৃহৎ সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা। তাবলিগ জামাতের শুরায়ী নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ্ রায়হান জানান, বাদ জুমা বয়ান করবেন জর্ডানের শেখ উমর খাতিব সাহেব, বাদ আসর বয়ান করবেন- মাওলানা জুবায়ের সাহেব, বাদ মাগরিব বয়ান করবেন- ভারতের মাওলানা আহমেদ লাট।
উল্লেখ্য, এবার তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। বাংলাদেশ তাবলিগ জামাত শুরায়ে নেজামের অধীনে ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব-ইজতেমার প্রথম ধাপ। এরপর ৩ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের শেষ হবে। ৮ দিন বিরতি দিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় ধাপের বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করবেন সাদ অনুসারীরা। ১৬ ফেব্রুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমা। পরে ১৮ ফেব্রুয়ারি বাদ মাগরিব প্রশাসনের নিকট ময়দান বুঝিয়ে দিবেন সাদ অনুসারীরা।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, এবারের ৫৮ তম বিশ্ব ইজতেমায় শুক্রবার পর্যন্ত ৭২ দেশের ২ হাজার ১৫০ জন মেহমান যোগ দিয়েছেন। এসব অতিথিরা নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান করে দেশ বিদেশের প্রাজ্ঞ আলেমদের বয়ান শুনছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শুরায়ি নেজাম মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুলস্নাহ রায়হান। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৭২টি দেশের ২ হাজার ১৫০ জন মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত হয়েছেন।’ এ সংখ্যা আরো বাড়বে বলে তিনি জানান। বাদ ফজর বয়ান করেছেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়া উল হক সাহেব। সকাল পৌনে ১০টায় খিত্তায় খিত্তায় তালিমের আমল হয়েছে। তালিমের আগে মোজাকেরা (আলোচনা) করেছেন ভারতের মাওলানা জামাল সাহেব। শিক্ষকদের বয়ানের মিম্বারে বয়ান করেছেন-মাওলানা ফারাহিম, ছাত্রদের সাথে নামাজের মিম্বারে বয়ান করেছেন আলিগড়ের প্রফেসর আব্দুল মান্নান সাহেব, খাওয়াছদের (গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ) মাঝে টিনশেড মসজিদে বয়ান করেছেন ভারতের মাওলানা আকবর শরিফ সাহেব। এদিকে, বিশ্ব ইজতেমার মাঠে এখন পর্যন্ত ৩ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার ইজতেমার আয়োজক ও টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। জানা গেছে, এবারের ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিন শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত তিন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া তিন মুসল্লিরা হলেন-খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার ডুমুরিয়া বাজার গ্রামের লোকমান হোসেন গাজীর ছেলে আব্দুল কুদ্দুস গাজী (৬০), ঠাকুরগাঁও জেলার মৃত আব্দুলের ছেলে আমিরুল ইসলাম (৪৬) ও শেরপুর জেলার শ্রীবরদী থানার রানী শিমুল গ্রামের মৃত সবদুল্লার ছেলে সাবেদ আলী (৭০)। তাদের জানাজা ইজতেমা ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমার শুরায়ে নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান, আব্দুল কুদ্দুস গাজীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। অন্য দুই জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার হাসপাতালে স্থাপিত সিভিল সার্জন এর কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More