গাংনী প্রতিনিধি: গাংনী উপজেলার সুদকারবারি আনারুল ইসলাম জামিনে বের হয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ফের শুরু করেছেন সুদ ব্যবসা। তার থেকে টাকা নিয়ে ভুক্তভোগী হচ্ছেন অনেকেই। এদের মধ্যে ভোমরদহ গ্রামের শিউলী খাতুন ও নিলুফার ইয়াসমীন নামের দুই ভুক্তভোগী গৃহবধূ সংবাদ সম্মেলন করেছেন। দেড় বছরে সুদে-আসলে তিন লাখ পরিশোধের পরও তাদের কাছ থেকে আনারুল ২ লাখ টাকা দাবি করছেন বলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার বিকেলে গাংনী উপজেলা শহরের সাবেক ছাত্রনেতা শাহিদুজ্জামান শিপুর অফিসে গাংনীর তিন সুদকারবারি আনারুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম ও শফি’র বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনেন।
সাংবাদ সম্মেলনে শিউলী খাতুন বলেন, আর্থিক অনটনে পড়ে আনারুল ইসলামের কাছ থেকে টাকা নিই। সোনালী ব্যাংক শাখার একটি ব্ল্যাংক (ফাঁকা) চেক জমা নিয়ে আমাকে ২ লাখ টাকা দেন আনারুল। প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা দিয়ে গত দেড় বছরে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশাধে করার পরও আমাকে আমার চেক ফেরত দেননি তিনি। আরও ২ লাখ টাকা দিতে এখন নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। এ ঘটনায় গাংনী থানায় একটি লিখিত অভিযোগে দিয়েছেন বলে জানান ভুক্তভোগী গৃহবধূ শিউলী।
তিনি বলেন, দাবিকৃত অতিরিক্ত টাকা না দেয়ায় আমাকে মারধর ও মামলার ভয় দেখাচ্ছেন আনারুল। এমনকি আমাকে ও আমার বিবাহিতা মেয়েকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি দিচ্ছেন। আমি একজন অসহায় গরিব। বর্তমান আমি ওই টাকা পরিশাধে করতে বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এসব কারণে আমার স্বামী আমাকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করেছে। গত ৩ এপ্রিল বিষয়টি নিয়ে গাংনী থানা পুলিশ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা বসে চেক ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রতি দেন আনারুল ইসলাম।
একই অভিযোগে করেছেন ভোমরদহ গ্রামের তাইজাল ইসলামের স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমীন। তিনি বলেন, আমি আনারুল ইসলামের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা সুদে নিয়ে তাকে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করার পরেও সে এখন ২ রাখ টাকা দাবি করে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। অশ্রাব্য ভাষায় গালিগাল করে আসছেন তিনি। আমি এই সুদ কারবারির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সাংবাদিকদের মাধ্যমে আবেদন জানাচ্ছি।
এদিকে দুই গৃহবধূর অভিযোগ শুনে তাদের পক্ষে কথা বলায় সুদকারবারি আনারুল মঙ্গলবার বিকেলে সাবেক ছাত্রনেতা শিপুর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় শাহিদুজ্জামান শিপু তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি অভিযোগ করেন, এলাকার গরিব-অসহায় মানুষদের টাকা দিয়ে চড়া সুদে তা আদায় করে থাকেন সুদখোর আনারুল ইসলাম। তার অত্যাচার নির্যাতন ও দৌরাত্ম্যে স্বামীর ঘর ছাড়া হয়েছেন অনেক নারী। তাদের মধ্যে ঘর ছাড়া এক অসহায় নারী শিউলী খাতুন ও নিলুফা ইয়াসমীন। তারা দুজনেই আনারুল ইসলামের কাছে থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে এখন স্বামীর ঘর ছাড়া হয়ে পড়েছেন। এসব অসহায়দের পাশে থাকায় সুদখোর আনারুল ইসলাম আমার নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গাংনীর এই সুদকারবারি আনারুল ইসলাম ও অপর সুদ ব্যবসায়ী আবু হানিফের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৬৬৯ টি ফাঁকা নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও ৬২০টি বিভিন্ন ব্যাংকের ফাঁকা চেকসহ এই দুজনকে আটক করে পুলিশ। বেশ কয়েকদিন হাজত খেটে জামিনে বেরিয়ে এসে এবার নতুন উদ্যোমে সুদ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এদের সঙ্গে গাংনী উপজেলা শহরের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি যোগ দিয়ে অসহায় গরিবদের অত্যাচার শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।