জান্নাতে পা্ওয়ার ফতোয়া দিয়ে বিধবার বালিকা মেয়েকে বিয়ে করলেন ইমাম
মেয়েকে বিয়ে দিলে জান্নাত পাওয়া যাবে, এমন ফতোয়া দিয়ে এক বিধবা নারীর কিশোরী মেয়েকে বিয়ে করেছেন এক মসজিদের ইমাম। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার মামুদের পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
এলাকাবাসী ও স্বজনরা জানিয়েছে, লালমনিরহাট জেলার কাকিনা উপজেলা এলাকার মোতালেব হোসেন নামের এক ব্যক্তি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার চেংমারী ইউনিয়নের মামুদেরপাড়া গ্রামে এক বাড়িতে কয়েক বছর ধরে লজিং থেকে এ গ্রামের মসজিদে ইমামতী করার পাশাপাশি মক্তবে ছেলে-মেয়েদের প্রতিদিন আরবি- শিক্ষা দেন। এ সুবাদে গ্রামের বিধবা নারীর একমাত্র কিশোরী কন্যার ওপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ইমাম মোতালেব হোসেনের। সুচতুর ইমাম সম্প্রতি ওই বিধবা নারীর আত্মীয় আ. জলিলসহ গ্রামের ২/৩ জনকে ম্যানেজ করে তার বাসায় যায়। সেখানে মসজিদের ইমাম মোতালেব ফতোয়া দেয়। তার দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোরী মেয়েকে ইমামের সঙ্গে বিয়ে দিলে নিশ্চিত তিনি জান্নাতে যাবেন। এমন মন ভোলানো কথা বলে বিধবাকে ম্যানেজ করে তার (১৪) বছর বয়সী নাবালিকা মেয়েকে গত শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) ইমাম বিয়ে করেন। বিয়ের পর মসজিদের ইমাম নাবালিকা মেয়ের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায় বলেও অভিযোগ রয়েছে। নির্যাতনের মুখে মেয়েটি পালিয়ে তার মায়ের কাছে এসে তার ওপর ইমামের নির্যাতনের বর্ণনা দেয় এবং বলে সেখানে আর যাবে না। বিষয়টি গ্রামে জানাজানি হলে শুরু হয় তোলপাড়। নাবালিকা মেয়েকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে করার ঘটনা নিয়ে মসজিদের ইমাম মোতালেবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় মেয়ের মার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইমাম খুব খারাপ লোক। তারা বুঝতে না পেরে এবং জান্নাত পাওয়ার আশায় বিয়েতে মত দিয়েছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, এখন ওই ইমাম গ্রামের ২/৪ জনকে ম্যানেজ করে তার মেয়েকে আবারও তার বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। অন্যথায় সালিশ ডেকে একঘরে করে রাখার হুমকি প্রদান করছে। তিনি ঘটনার বিচার দাবি করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে ইমাম মোতালেব হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি প্রথমে এই বিয়ের বিষয়ে কথা বলতে চাননি। তিনি উল্টো বলেন, মেয়ে এবং তার মা দেনমোহরের নামে আমার কাছে মেয়ে পক্ষ সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে। আমি তাদের কথায় রাজি না হওয়ায় তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথাবার্তা বলছে। এদিকে বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় পুলিশের ডি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান জানান, বিষয়টি নিয়ে কেউ কোনো প্রকার অভিযোগ করেনি। বুধবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে তিনি সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় মিঠাপুকুর থানার এসআই এনামুল হক সাংবাদিকদের জানান, তিনি এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে বিয়ের বিষয়টির সত্যতা পেয়েছেন। এ ব্যাপারে আইনগত বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুন মিয়া বুধবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে বলেন, আমরা খোঁজ খবর নিয়ে দেখেছি ঘটনাটি সত্য। মসজিদের ইমাম মোতালেবের সাথে কয়েকদিন আগে কিশোরীর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। আমাদের নিকট এ পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।