চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিকসভায় মাদক নিয়ে উদ্বেগ : মাদক না বেচার অঙ্গীকারের পরও বারবার ধরা পড়েন তিনি
স্টাফ রিপোর্টার: ২২ মাদক মামলার আসামি এক নারী। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে আত্মসমর্পণ করে তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন, আর কখনো মাদক ব্যবসা করবেন না। অথচ গত তিন মাসে অন্তত তিনবার মাদকসহ আটক হয়েছেন তিনি। রোববার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এ তথ্য তুলে ধরেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চুয়াডাঙ্গার সহকারী পরিচালক মো. শরিয়ত উল্লাহ। সভায় তিনি বলেন, আত্মসমর্পণের পরও পুরোদমে চলছে মাদক ব্যবসা। কোনোভাবেই তাকে (ওই নারী) কারাগারে বন্দী বা মাদক ব্যবসা থেকে দূরে রাখা যাচ্ছে না। নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ৩৪ বছরের চাকরিজীবনে দেখেছেন, যারা একবার মাদক ব্যবসা করেছেন, তাদের কেউ ব্যবসা ছাড়েননি। এমনকি পুনর্বাসনের রিকশা বিক্রি করে আবার মাদক ব্যবসায় নেমেছেন। জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকার। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার এমন বক্তব্যের পর আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থিত সদস্যরা মাদক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সভায় পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. আবু তারেক বলেন, নভেম্বর মাসে জেলায় মোট ২৫টি মাদকের মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় ৩২ জনকে গ্রেফতার ও ৬ লাখ ৪২ হাজার টাকা মূল্যমানের মাদক জব্দ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়ন (বিজিবি-৬)-এর উপ-অধিনায়ক মেজর নিস্তার আহমেদ বলেন, গত এক মাসে বিজিবি অভিযান চালিয়ে ৪৮ লাখ ২৭ হাজার ১১২ টাকা সমমূল্যের মাদক ও চোরাই পণ্য জব্দ করেছে। আসামি ধরা পড়েছেন তিনজন। তিনি বলেন, করোনার জন্য জনসচেতনতামূলক সভা বন্ধ রয়েছে। তবে সীমান্ত এলাকায় মাইকিংসহ মাদক, চোরাচালানবিরোধী প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিম লিংকন বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে রিকশা-ভ্যানের চালকেরা মাদক বহনকারী হিসেবে কাজ করছেন। এজন্য গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়িয়ে জড়িতদের ধরতে হবে। আদালতের বরাত দিয়ে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক শরিয়ত উল্লাহ বলেন, চুয়াডাঙ্গায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতসহ ১০টি আদালতে বিচারাধীন মাদকের মামলার সংখ্যা ৩ হাজার ৭৮৩। যার মধ্যে সাক্ষী পর্যায়ে রয়েছে ২ হাজার ১১৮টি। করোনাকালে আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক না থাকায় মামলাজট দেখা দিয়েছে। সাক্ষীদের অভাবে মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এজন্য এখন থেকে প্রতিটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার মুঠোফোন নম্বর সংশ্লিষ্ট কাগজে লিপিবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, পুলিশ, বিজিবি ও প্রশাসনের যারা মাদকবিরোধী কাজ করবেন, তাদের সবার আগে মাদকমুক্ত হতে হবে। ইউএনওদের মাদকবিরোধী অভিযান চালাতে হবে। কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবেই কাজ করতে হবে। যার যে কাজ, তাকে সেটা সঠিকভাবে করতে হবে। তিনি বলেন, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের মিনিমাম ছয় মাস কারাগারে রাখা দরকার। এদের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।