গাংনী প্রতিনিধি: ভিক্ষা নয়, শুধু সহযোগিতা। তাও একটি ফুলের বিনিময়ে। শিশু লামিয়াকে বাঁচাতে এমনই উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় যুবসমাজ। গতকাল শনিবার থেকে তারা বিভিন্ন স্থানে অর্থ আদায় করছেন মেয়েটির চিকিৎসার জন্য। লামিয়া দুরারোগ্য ব্যাধি ‘হাইপো প্লাস্টিক অ্যানিমিয়ায়’ আক্রান্ত। সে গাংনী উপজেলার চিৎলা গ্রাসের সাহাবুদ্দীনের মেয়ে।
লামিয়ার বাবা জানান, ছয় মাস আগে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরিবারের সবাই গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে শিশু চিকিৎসকরা কোনো রোগ নির্ণয় করতে না পারায় ঢাকা পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্তে উপনীত হন লামিয়া হাইপো প্লাস্টিক অ্যানিমিয়া রোগে আক্রান্ত এবং এটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা। এজন্য খরচ হতে পারে ছয় লক্ষাধিক টাকা।
কিন্তু লামিয়ার পিতা একজন সামান্য গাড়িচালকের সহকারী। তার পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়। তাহলে কী লামিয়াকে ধুকে ধুকে মরতে হবে? এমনই প্রশ্নের দায় থেকে মুক্ত হতে চিৎলা গ্রামের যুব সমাজ উদ্যোগ নিয়েছে লামিয়ার চিকিৎসার জন্য অর্থ আদায়ের। যুব সমাজ অর্থ আদায় করছে। বিনিময়ে দিচ্ছেন হাসিমুখে একটি গোলাপ।
অর্থ আদায়ের উদ্যোক্তা রাশিদুল ইসলাম পল্লব জানান, লামিয়ার পরিবারের কথা ভেবে ও একটি শিশুর অকাল মৃত্যু কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। সমাজের দায়বদ্ধতা থেকেই অর্থ সংগ্রহ। সেই সঙ্গে একটু অভিনব পন্থা অবলম্বন করি। একটি ফুলের বিনিময় অনেকেই ৫০ টাকা, ১০০ টাকা এমনকি এক হাজার টাকাও সহযোগিতা করেছেন।
বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, একটি গোলাপের বিনিময়ে যদি কারও প্রাণ বাঁচে সেটি হবে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। একটি গোলাপের মূল্য কতই বা হবে? দশ টাকা না হয় বিশ টাকা? কিন্তু এটি ভালোবাসার বিনিময়। এ ভালোবাসায় পারবে লামিয়াকে বাঁচতে। শুধু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নয়, পথচারীরাও যুব সমাজকে এমন ধন্যবাদ জানিয়ে অর্থ সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক সজীব উদ্দীন স্বাধীন জানান, হাইপো প্লাস্টিক অ্যানিমিয়া প্রথম স্টেজে রয়েছে। এটি এখন চিকিৎসা করালে ভালো হবে। মূলত শরীরের মাদার সেল থেকে রক্ত কণিকা তৈরি হয়। মাদার সেল নষ্ট হলে রক্ত উৎপাদিত হতে পারবে না। ফলে মৃত্যু হয়।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী খানম জানান, শিশু লামিয়ার বিষয়টি জানা ছিলো না। ফুল দিয়ে যে অর্থ আদায় করছেন এটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে আমার কাছে আবেদন করলে সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মনসুর আলম খান জানান, তিনি লামিয়ার পরিবারকে সরকারি সহযোগিতার জন্য চেষ্টা করবে বলে জানান। সেই সঙ্গে উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানান।