গরম জনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সব বয়সী মানুষ

চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের সাত জেলায় বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের সাত জেলায় বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। এতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু হয়েছে। প্রতিদিনিই গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। গতকাল শুক্রবার প্রায় বৃষ্টিহীন ছিলো সারাদেশ। গত বৃহস্পতিবারের মতো গতকাল শুক্রবারও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে। তাপ বেড়ে যাওয়ার এ প্রবণতা আজ শনিবারও থাকতে পারে। অবশ্য চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা খানিকটা কমেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানাচ্ছে, রোববার থেকে বৃষ্টি বাড়তে পারে। তাতে কমতে পারে তাপ। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে, ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের অন্য যেসব এলাকায় তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তার মধ্যে আছে যশোরে ৩৮ দশমিক ২, পাবনার ঈশ্বরদীতে ৩৮, সিরাজগঞ্জে ৩৭ দশমিক ২, চুয়াডাঙ্গায় ৩৬ দশমিক ৮, বগুড়ায় ৩৬ দশমিক ৫ এবং সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীতে ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মাঝারি তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা ৪২-এর বেশি হলে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে গণ্য হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রতিদিন ৫১টি স্টেশনের আবহাওয়া পরিস্থিতি তুলে ধরে। তবে কোনো স্টেশনেই বৃষ্টির রেকর্ড নেই বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক। তিনি বলেন, বৃষ্টি কমে গেছে অনেকটা। সর্বশেষ আগের ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড আছে। এরপর আর বৃষ্টি হয়নি। প্রায় চার দিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে কিছু কিছু এলাকায় বৃষ্টি হলেও তাতে তাপ কমেনি। আবহাওয়ার বার্তায় বলা হয়েছে, এখন যে তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে, তা আগামীকাল পর্যন্তও চলতে পারে। মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, রোববার থেকে দেশের কিছু স্থানে বৃষ্টি শুরু হতে পারে। তাতে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। দেশের সবচেয়ে উষ্ণ মাস এপ্রিল। এর আগে গত বছর এ মাসের প্রায় পুরো সময়জুড়ে তাপপ্রবাহ ছিলো। ওই বছর এপ্রিল ও মে মাস মিলিয়ে ৩৫ দিন তাপপ্রবাহ চলেছে। এটি ৭৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিলো। এবার অবশ্য তা হয়নি। তবে মাসের শেষ সপ্তাহে এসে তাপপ্রবাহ বাড়ছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার উপর দিয়ে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। প্রচ- তাপপ্রবাহ ও ভ্যাপসা গরমে জনজীবনে নেমে এসেছে দূর্বিষহ পরিস্থিতি। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। মানুষের পাশাপাশি এই তাপদাহে কষ্টে প্রাণীকুল। পুড়ছে ফসলের মাঠ। গতকাল শুক্রবার জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস করা হবে। এছাড়া গত ২৩ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২৪ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান জানান, শুক্রবার সকাল ৬টায় দিনের শুরুতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩১ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি বলেন, “ভৌগোলিক দিক থেকে চুয়াডাঙ্গা উষ্ণ অঞ্চল। এখানে গরমের সময় যেমন গরম বেশি ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, তেমনি শীতের সময় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।” কৃষিবিদদের মন্তব্য, তাপে চিটা হতে পারে নাবী বোরো ধানে। এছাড়া অন্যান্য ফসল এবং আম ও লিচুর ক্ষতি হতে পারে। এসময় ফসলের জমিতে ঘন ঘন সেচ দেয়া ও আম লিচুর গাছে পানি স্প্রের পরামর্শ দিচ্ছেন। হাসপাতালে বেড়েছে গরমজনিত ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। চিকিৎসক এই তাপপ্রবাহে বাসিপচা খাবার ও পানীয়জল গ্রহণে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু হয়েছে। প্রতিদিনিই গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। শিশু থেকে সব বয়সীরাই ডায়রিয়া ও পানিবাহিত কলেরাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। ২৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্যসেবাই রোগী ভর্তি ৪০০ জন। যা ধারণ ক্ষমতার তুলনাই রোগী বেশি। তবে চিকিৎসকরা নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছে রোগী স্বজনদের।
জানা গেছে, জেলার একমাত্র চিকিৎসা স্বাস্থ্য কেন্দ্র সদর হাসপাতাল। এই হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার তুলনাই রোগী ভর্তি থাকে বরাবরই বেশি। কয়দিন ধরে চুয়াডাঙ্গার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু তাপপ্রবাহ। ফলে গরমের তীব্রতাও বাড়তে শুরু করেছে। এঅবস্থায় গরমের সব বয়সী মানুষেরা গরম জনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সদর হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ৩০ জন রোগী আসছে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে। আর এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিদিন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে রোগী ভর্তি থাকছে ৫৫ থেকে ৬০ জন। এই ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেশি রোগী থাকায় সংকট দেখা দিয়েছে বেডের। আর তাই মেঝেতে অবস্থান করে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে রোগী স্বজনরা। এদিকে, গরমজনিত রোগে থেকে বাঁচতে চিকিৎসকরা নিয়মিত রোগী স্বজনদের পরামর্শ দিয়ে চলেছে। এছাড়া সদর হাসপাতালে গরমজনিত রোগের খাবার স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধের কোন ঘাটতি নেই বলে জানা গেছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর স্বজন বিলকিস নাহার বলেন, প্রচ- গরমের কারণে শিশুরা ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে। ডাক্তাররা আসছে চিকিৎসা দিচ্ছে। যেমন গরম তেমন রোগীর চাপ। আর বেশির ভাগই সব ডায়রিয়া আক্রান্ত। আর কিছু বয়সিরা আসছে গরম জনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত অবস্থায়। আরেক রোগীর স্বজন আব্দুর রহমান বলেন, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী বেশি। তাই পর্যাপ্ত বেড নেই। ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি প্রায় ৪০০ জন। আবার ডাক্তার কিছুটা সংকট আছে। তবে গরমের কারণে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছে গরমের রোগ প্রয়োজনীয় করণীয় নিয়ে। এ বিষয়ে কথা হলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ আসাদুর রহমান খোকন বলেন, গরমের কারণে হাসপাতালের আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে প্রতিদিন রোগী বাড়ছে। শিশুরা ডায়রিয়া ও টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। শয্যার তুলনায় অতিরিক্ত রোগী ভর্তি হওয়ায় গরমের ভেতর গাদাগাদি করে মেঝে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। আর গরমের কারণে ডায়রিয়া ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এসব রোগীর সঠিক চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। গরমে শিশুদের প্রতি যতœবান হতে হবে পরিবারের সদস্যদের। অতিরিক্ত গরম শিশুরা সহ্য করতে না পারায় সহজে রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। টাটকা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি খাওয়াতে হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More