।। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী।।
আজ ৮ রমজান। রহমত দশকের আর মাত্র দুইদিন বাকি। মাহে রমজান আত্মশুদ্ধির মাস। নিজের নফসকে খাহেশাত ও অন্যায় কামনা-বাসনা থেকে মুক্ত রেখে আল্লাহর হুকুম শতভাগ মান্য করার নামই হলো এসলাহে নফস বা আত্মশুদ্ধি। রমজানের সিয়াম সাধনা আমাদের এই আত্মশুদ্ধির সুযোগ করে দেয়। আর আত্মশুদ্ধিই হলো মানুষের জীবনের আসল উদ্দেশ্য। অন্তরের পরিশুদ্ধির মাধ্যমেই মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করতে পারে। সূরা আশ-শামসে মহান আল্লাহ জাল্লাশানুহ এরশাদ করেছেন, যে নিজের নফসকে পরিশুদ্ধ করেছে সেই সফলকাম হয়েছে এবং যে নিজের নফসকে কলূষিত করেছে সেই ব্যর্থ মনোরথ হয়েছে (সূরা আশ-শামস: ৯-১০)। এই আয়াতে বোঝা যায়, মানুষের পরকালের সফলতা নির্ভর করে তার নফসকে শুদ্ধ করার ওপর এবং ব্যর্থতা নির্ভর করে নফসকে খারাপ করার মাধ্যমে। মানুষের আসল শত্রু হলো দুটি। মরদুদ শয়তান এবং নফসে আম্মারা। তবে সবচেয়ে বড় ও আদি শত্রু হল নফসে আম্মারা। বাকিটা এর শক্তি জোগায় এবং উসকানি দেয়। ইবলিশ শয়তানকে শয়তানে পরিণত করেছিল কোন জিনিস? নিঃসন্দেহে তার নফস। নফসে আম্মারাই তাকে অহংকার করতে বাধ্য করেছিল এবং আদমকে সিজদা করা থেকে বিরত রেখেছিল। রোজা আমাদের এই শত্রুদ্বয় থেকে হেফাজত করতে সাহায্য করে। এক হাদিসে হুজুর (সা.) এরশাদ করেছেন, শয়তান তোমাদের শিরা-উপশিরাই চলাচল করে। সুতরাং তোমরা ক্ষুধার দ্বারা শয়তানের গতিরোধ কর। তবে রমজান মাসে এটা আল্লাহ তায়ালার অতিরিক্ত মেহেরবাণী যে, তিনি বড় বড় শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখেন। নফসের একটি অংশের নাম হল নফসে আম্মারা যা মানুষকে খারাপ ও ফাহেশা কাজে উদ্বুদ্ধ করে। আজেবাজে খাহেশ চূর্ণ করা এবং নফসে আম্মারা তথা কুকর্মের মদদদাতা নফসের বিরুদ্ধে জয়লাভ করা রোজার অন্যতম উদ্দেশ্য। বলা যায় এটিই রোজার সবচেয়ে বড় উপকারিতা। মানুষের সৌভাগ্য নফসকে পরাস্ত করে রাখার মধ্যে এবং দুভার্গ্য নফসের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার মধ্যে নিহিত। অবাধ্য ঘোড়াকে যেমন দানাপানি না দিলে নিয়ন্ত্রণে থাকে, ঠিক তেমনই রোজার মাধ্যমে অবাধ্য নফসকে ভুখা রাখলে সে নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং আল্লাহর নাফরমানি করতে সাহস পায় না। তাই আমাদের সকলের উচিৎ রোজার মাধ্যমে নফসে নিজের আয়ত্বে আনা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা। (লেখক: অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে)
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.