কালীগঞ্জ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে চিকিৎসক সঙ্কটে ভুগছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মানুষ এই হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল হলেও সেখানে শূন্য রয়েছে চিকিৎসকের অধিকাংশ পদ। খুড়িয়ে খুড়িয়ে সেবা দেয়া হচ্ছে রোগীদের।
পদগুলো শূন্য থাকায় রোগীরা পাচ্ছে না প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা। অনেক রোগী বাধ্য হয়ে ফিরে গিয়ে ঢাকা, যশোর, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, খুলনায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১ জন ডাক্তারের পদ রয়েছে, সেখানে ডাক্তার রয়েছে মাত্র ৫ জন। তন্মধ্যে প্রয়োজন রয়েছে ১০ কনসালটেন্ট, সেখানে রয়েছে মাত্র ৩ জন, নার্স প্রয়োজন ৩০ জন সেখানে রয়েছে ২৬ জন। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন কালীগঞ্জ উপজেলার প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ। এ উপজেলার মানুষকে উন্নত সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল চালু রয়েছে। কিন্তু উন্নত চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে কালীগঞ্জের মানুষ। এখানে দীর্ঘদিন ধরে ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। এখানে ডাক্তারের ২১টি পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছে মাত্র ৫জন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অধিকাংশ পদ শূন্য রয়েছে। যে কারণে হাসপাতালেও চিকিৎসক সঙ্কট হয়ে পড়ছে। তবে বর্ধিত ৫০ শয্যার জন্য এখনো সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে আলাদা কোনো জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে পূর্বের কাঠামোর জনবল দিয়েই ৫০ শয্যার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এতে করে জনবল সঙ্কটসহ নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত হাসপাতালটি। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালে আসেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে বহির্বিভাগে শিশু, নারী-পুরুষ মিলে মোট প্রায় এক হাজার রোগী সেবা নিয়ে থাকেন ও আন্তঃবিভাগে অনেক রোগী ভর্তি হন। হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট থাকায় দিন দিন ভেঙে পড়ছে এখানকার চিকিৎসাসেবা। হাসপাতালে নেই কোনো ব্লাড ব্যাংকের ব্যবস্থা। ফলে রক্তের জন্য রোগীদের বিভিন্ন জনের কাছে ধরনা দিতে হয়। হাসপাতালে কোনোরকম জটিল রোগের চিকিৎসা এবং অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিন জটিল রোগীদের উপজেলার বাইরে পাঠানো হয়। রোগীদের অপারেশন ব্যবস্থা থাকায় রোগীরা কালক্ষেপণ না করে বিভিন্ন ডাক্তারের পরামর্শে বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে অপারেশন করান। এতে করে গরীব রোগীদের অনেক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। হাসপাতালের ডাক্তাররা অপারেশনের রোগী গেলে তাদেরকে বলে দেয়া হয় তাদের পছন্দ ক্লিনিকে ভর্তি হতে। এসব ক্লিনিকে ডাক্তাররা অপারেশন করে থাকে এবং পেয়ে থাকে মোটা অংকের টাকা।
হাসপাতালে ডিজিটাল এক্সরে-মেশিন ও বিভিন্ন রকম জটিল প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা না হওয়ায় ডাক্তারের পছন্দমত ল্যাবে গিয়ে পরীক্ষা করাতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা। সরকার একটি এক্সরে-মেশিন প্রায় এক বছর আগে দিয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সেটা হাসপাতালের বারান্দায় ফেলে রাখা হয়েছে। রোগীদের ব্যক্তি মালিকাধীন অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে প্রয়োজন মেটাতে হয়। এদিকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা প্রয়োজনীয় বেড না পেয়ে মেঝেতে গাদাগাদি করে অবস্থান নিয়ে কোনোমতে চিকিৎসাসেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। কোনো রোগীর পরীক্ষার প্রয়োজন হলে তাদেরকে পাঠানো হয় ওই ডাক্তারদের পছন্দনীয় ডায়াগনস্টিকে। সেখান থেকে পরীক্ষা করলে ডাক্তাররা পেয়ে থাকে কমিশন।
রোগী হাফিজুর রহমান বলেন, এ হাসপাতালে সবসময় ওষুধ সঙ্কট লেগেই আছে। ২৯ প্রকার ওষুধ থাকার কথা থাকলেও সব ওষুধ থাকে না, যে কারণে রোগীদের কাগজে লিখে দেয়া হয় বাইরে থেকে কিনে নেয়ার জন্য। বিশেষ করে পুরুষ ও মহিলা বাথরুম দুর্গন্ধ থাকায় কষ্টকর হয়ে পড়ে রোগী ও সাধারণ মানুষের। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার অরুন কুমার দাস (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, ডাক্তার সঙ্কট রয়েছে। ওপরমহলে জানানো হয়েছে। সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ