কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ : ভোটগ্রহণ ৮ মার্চ
দর্শনা অফিস: কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন প্রস্তুতিতে ব্যস্ত নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদ। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি তাদের কার্যক্রম বেশ জোরেসোরে চালাচ্ছে। এরই মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। আজ সকাল ৯টা থেকে শুরু হবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ। এবারের নির্বাচনে শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের মূলত দুটি পদের বিপরীতে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও এখনো পর্যন্ত প্যানেলভুক্ত হয়নি। ইতোমধ্যে পুরাতন জুটির খুটিতে ঘুন ধরেছে বলেই উঠেছে গুঞ্জন। এ ঘুনে কি ভেঙে পড়বে জুটির খুটি? নাকী কোনো অদৃশ্য শক্তিতে নতুনে ভিত গড়বে পুরোনো খুটি? এমনই কথা শোনা যাচ্ছে কেরুজ আঙিনায়। গত নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিলো এক হাজার একজন। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮৮ জনে। কেরুজ চিনিকলের সবকটি বিভাগের সর্বমোট ভোটের সংখ্যা এক হাজার ৮৮ জন হলেও প্রতিদিন সন্ধ্যার পর শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের ৪টি সংগঠন কার্যালয় দেখে তা মানতেই নারাজ সাধারণ মানুষ। কারণ হিসেবে জানা গেছে, প্রত্যেক কার্যালয়ে সন্ধ্যার পর শুরু হচ্ছে সভা-সমাবেশ ও মিছিল। প্রতিটি সভা-সমাবেশ ও মিছিলে কমপক্ষে ১ হাজার খানেক মানুষের উপস্থিতি দেখা মেলে। তাহলে ৪টি সংগঠনে গড়ে ৪ হাজারের বেশি মানুষের সমাগমের হেতু কি?
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, কেরুজ চিনিকলে ৩ সিফটে যার যার কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করে থাকে শ্রমিক-কর্মচারীরা। সে হিসেব মতো প্রতিটি সিফটে প্রায় ৪শ’ শ্রমিক-কর্মচারীকে কর্মরত থাকতে হয়। বাকিদের মধ্যে অনেকেই বৃদ্ধ বা অসুস্থতার কারণে বাড়িতেই বিশ্রাম নিয়ে থাকেন। ফলে মোট ভোটারের অর্থেক শ্রমিক-কর্মচারীরা কর্মরত ও বিশ্রামে থাকেন। তবে কিভাবে সম্ভব প্রতিটি সংগঠনে এক হাজারেরও বেশি মানুষের সমাগম? এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তারা কারা যারা শ্রমিক সংগঠনগুলোতে ভিড় জমিয়ে থাকেন? মিছিলে অংশ নিয়ে দল ভারীর জানান দেন? কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাচন মানেই গোটা জেলায় আলোচনা ও উৎসবের আমেজ। এ নির্বাচনের গরম বাতাস শুধুমাত্র কেরুজ আঙিনায় সীমাবদ্ধ থাকে না, এ বাতাস ছড়িয়ে পড়ে গোটা জেলায়। সর্বস্তরে নির্বাচনী আলোচনায় সরগরম করে তোলা হয়ে থাকে। প্রার্থীদের দৌড়-ঝাপ, ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে ধর্ণা দেয়া, প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়িসহ কত রকমের কায়দা-কৌশল দেখা যায়। বদলি বা পদন্নোতিই নয়, চাকরি দেয়ার ব্যাপারে প্রার্থীরা যখন যার দুয়ারে যাচ্ছেন তাকেই তালিকার প্রথম নাম অন্তর্ভুক্ত করছেন। আসলে তালিকার প্রথম নামটি কার তা সয়ং প্রার্থীও জানেন না। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন মানেই চাওয়া-পাওনা ও হারানোর ক্ষোভ। নাওয়া-খাওয়া ও নিদ ছেড়ে প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারের খোঁজে। প্রতিশ্রুতির ফাঁদে ফেলে দলে ভেড়াতে হয়ে উঠেছেন মরিয়া। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফয়দা লুটতে কম করছে না সুবিধা লোভী কোনো কোনো ভোটার। অন্যান্য বারের নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনে সংগঠনগুলোতে জমকালো তেমন আয়োজন না থাকলেও প্রচারণায় নেই কমতি। বিগতবার নির্বাচনের বহু আগে-ভাগেই মাঠ গরম রাখতে দেখা গেলেও এবার ঠিক তার উল্টোটা দেখা গেছে। সাধারণসভার পর থেকে সংগঠনগুলো জমজমাট হতে দেখা যাচ্ছে। এবারের ভোটে যেমন সাটানো হয়নি রঙ-বে রঙয়ের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, তেমনিভাবে পোস্টারে মোড়ানো হয়নি কেরুজ আঙিনা। তাই বলে কৌশল অবলম্বনে কমতি রাখেননি কোনো প্রার্থী। কেরুজ নির্বাচন মানেই টাকার খেলা। যে যতো টাকা খরচ করতে পারবে, তার পাল্লায় ভারী হবে বরাবরের মতোই। শুরু থেকে প্রার্থী ও সমর্থকরা প্রচারণায় মাঠে নামলেও শেষের দিকে নামবেন অর্থ জোগানকারীরা। জনশ্রতি রয়েছে এ নির্বাচনে সিংহভাগই অর্থ ব্যয় করে থাকেন মিলের মদ বিক্রি কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা। অভিযোগ উঠেছে, টাকার খেলার পাশাপাশি শপথের পালা শুরু মসজিদ, মন্দির ও গির্জাসহ রাতের আধারে ধর্মগ্রন্থ ছুয়েও। মদ বিক্রয় কেন্দ্রের বড় বড় এ্যাজেন্টরা আর্শিবাদ যে প্রার্থী বেশি পায়, সে প্রার্থীর কপাল খোলে নির্বাচনে। এবার শেষ অবধি দেখার অপেক্ষার পালা কে কে হবেন নামিদামী এ্যাজেন্টদের আর্শিবাদ পুষ্ট। এ নির্বাচনে সভাপতি পদে আবারো মাঠে রয়েছেন বর্তমান পরিষদের সভাপতি তৈয়ব আলী ও সাবেক সভাপতি আজিজুল হকের ছেলে ফিরোজ আহমেদ সবুজ। সাধারণ সম্পাদক পদেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স। এছাড়া সহসভাপতি, সহসম্পাদকসহ কমিটির ১৩টি পদের বিপরীতে অসংখ্য প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও আজ পরিষ্কার বোঝা যাবে কে কে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। কেরুজ চিনিকলের হিসাব, প্রসাশন ভান্ডার, স্বাস্থ্য বিধান, ইমারত, সেনিটেশন, হাসপাতাল, চোলাই মদ কারখানা, ডিস্টিলারী, বিদ্যুত ও কারখানা, প্রকৌশলী, পরিবহন, ইক্ষু উন্নয়ন, ইক্ষু সংগ্রহ বিভাগসহ বাণিজ্যিক খামারগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়ে এবার সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৮৮ জন। এবারের ভোটে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কেরুজ চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) রাব্বিক হাসান, সদস্য সচিব, মিলের মহাব্যবস্থাপক (ডিস্টিলারী) ফিদা হাসান বাদশা, সদস্য উপ-ব্যবস্থাপক (পার্সনাল) আবদুল ফাত্তাহ, উপ-ব্যবস্থাপক (পরিঃ প্রকৌশলী) আবু সাঈদ ও জুনিয়র অফিসার (ভূমি) জহির উদ্দিন। ২৪ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আজ ১ মার্চ প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ সময় দেয়া হয়েছে। বিকেল ৩টার মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ও রাত ৮টা পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় দেয়া হয়েছে। ২ মার্চ বিকেল ৩টার দিকে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। ৮ মার্চ সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কেরুজ বিদ্যালয়ে গোপন ব্যালোটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে।