দৌলতপুর প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ১০ নং দৌলতপুর ইউনিয়নের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় থাকা অসহায় দুস্থ মহিলাকে মৃত দেখিয়ে স্বজনের নাম প্রতিস্থাপন করে চাল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে স্বজনের নাম তালিকাভূক্ত করায় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের শাস্তি দাবি করেছে এলাকাবাসী।
জানাযায়, ২০১৬ সালে সারাদেশের ন্যায় দৌলতপুর উপজেলার ১০নং দৌলতপুর ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে তৈরী করা হয় এবং উক্ত তালিকা অনুযায়ী বছরে ৫ বার ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল ১৯৩ জন পরিবারের মধ্যে দেয়া হয়। সেই তালিকায় দৌলতখালী গ্রামের স্বামী সন্তানহারা অসহায় বৃদ্ধা আতরজান (৯০) স্বামী ইসারতের নাম ১০১ নম্বর কার্ডধারী হিসেবে অর্ন্তভূক্ত করা হয়। কার্ড অনুযায়ী তাকে নিয়মিত চালও দেয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ করে চলতি মে মাসে দৌলতপুর ইউনিয়নের অর্ন্তভূক্ত নতুন সুবিধাভোগীদের নামের তালিকায় আতরজানকে মৃত দেখিয়ে ৬নং ওয়ার্ড সদস্য মুক্তার হোসেনের স্বজন আমিরুল, পিতা আয়তালের নাম প্রতিস্থাপিত করে তাকে চাল দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে অত্র ইউনিয়নের চাউলের ডিলার মোজাম্মেল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘ সাড়ে ৩ বছর নিয়মিত চাল পেলেও হঠাৎ করে মে মাসে আতরজানকে মৃত দেখিয়ে তার নামের স্থলে ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য মুক্তার হোসেন তার স্বজন আমিরুল, পিতা আয়তাল এর নাম প্রতিস্থাপন করেছেন এবং সে অনুযায়ী মে মাসের ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল দেয়া হয়েছে তাকে। এতে করে অসহায় আতরজান চাল না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরোও জানিয়েছেন, আতরজান খাতুনের স্বামী সন্তান কেউ নেই। রাস্তার ওপর ঝুপড়িতে যার বসবাস তার নামটি কেটে অন্য একজনের নাম বসানোর ব্যাপারটা আমি চেয়ারম্যান সাহেবকে জানিয়েছি। এছাড়া আমার কিছুই করার নেই তিনিই বিষয়টা দেখবেন বলে তিনি জানান।
নাম কেটে দেয়ার ব্যাপারে বৃদ্ধা আতরজান ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে বলেন, চাল নিতে গেলে আমি মরে গেছি বলে আমাকে চাল না দিয়ে অন্য জনকে চাল দিয়েছে বলে তিনি কেঁদে ফেলেন।
দৌলতপুর ইউপি আওয়ামীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুজা উদ্দিন সুজা জানান, ন্যাক্কারজনক এ অমানবিক কাজের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ফুঁসে উঠেছে। তিনি আরো জানান, অবিলম্বে এঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী।
জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে ১০১ নং কার্ডটিতে স্বজনের নাম অর্ন্তভূক্তির বিষয়ে ইউপি সদস্য মুক্তার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আতরজানের ভোটার আইডি কার্ড খুঁজে না পাওয়ায় তার নাম বাদ দিয়ে আমিরুল, পিতা আইতালের নাম অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে বিষয়টা চেয়ারম্যানের জানা আছে। প্রতিস্থাপনকৃত নামটি তার স্বজনের কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমার দু-সম্পর্কের স্বজন হয় বলে তিনি জানায়। সাড়ে ৩ বছর ভোটার আইডি কার্ড ছাড়া চাল দিলেন কিভাবে এবং প্রতিবেদনে তাকে কেন মৃত দেখানো হলো? এমন প্রশ্নের সদুত্তর ইউপি সদস্য মুক্তার দিতে পারেননি।
ইউনিয়নের নাগরিকদের জন্ম মৃত্যুর সনদ স্বাক্ষর করেন ইউপি চেয়ারম্যান এবং তার রেকর্ড ইউপি কার্যালয়ে সংরক্ষিত থাকে। তাই এর দায় ইউপি চেয়ারম্যান এড়াতে পারেন না।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান মহিউল ইসলাম মহি জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিলোনা যে আতরজানকে মৃত দেখিয়ে তার নাম বাদ দিয়ে অন্য জনের নাম প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। যেহেতু আতরজান জীবিত সেহেতু পুনরায় তার নাম যাতে করে তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করা হয় সে ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, বিষয়টি আমার নজরে আসার পর তিনি আতরজানের বাড়িতে ছুটে যান এবং প্রাথমিকভাবে কিছু খাদ্য সহায়তা প্রদান করেন। তিনি আরো জানান, উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবার জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে সংশ্লিষ্ট দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য সুপারিশ করা হবে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, ওই বৃদ্ধার বাড়ি তৈরীর জন্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং খাদ্য সহায়তা ও তার উপকারভোগী কার্ডটি যাতে তিনি ফেরত পান সে ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদন পাবার পর ইউপি সদস্য সহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।