কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ায় প্রতিদিন শনাক্তের হার বাড়লেও হাসপাতালে চাপ নেই করোনা রোগীদের। তবে বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। তাই হাসপাতালে করোনা রোগীদের নির্ধারিত বেড এখন সাধারণ জ্বর-কাশি আক্রান্তদের দখলে। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, করোনা রোগীর মধ্যে বেশির ভাগই ওমিক্রনে আক্রান্ত। আর ওমিক্রনকে সাধারণ মানুষ খানিকটা হালকাভাবে নেয়ায় তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ৫০টি বেড নির্ধারিত থাকলেও সেখানে রোগীর সংখ্যা ২০-এর নিচে। তবে ঠা-াজনিত রোগীদের চাপে ঠাসা করোনা ওয়ার্ডও।
বিশেষ করে শিশু ওয়ার্ডে ঠান্ডাজনিত রোগীর চাপ বেড়েছে। সেখানে প্রতি বেডের বিপরীতে ৩ থেকে ৪টি করে শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে শিশুদের যাতে বেশি ঠান্ডা না লাগে সে ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন জানান, গত বছরের জুন-জুলাইয়ে খুলনা বিভাগের মধ্যে কুষ্টিয়াতেই বেশি করোনা রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। তাই চিকিৎসক ও নার্সদের অভিজ্ঞতা ও সাহস হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যেও করোনাভীতি নেই বললেই চলে। ওমিক্রনের কারণে শনাক্ত বেশি হলেও হাসপাতালে করোনা রোগীদের চাপ নেই। তবে, যদি বিপুলসংখ্যক মানুষ করোনা শনাক্ত হয়, আর তার এক ভাগও হাসপাতালে ভর্তি হলে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতির পরও ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খেতে হবে।
তিনি বলেন, ‘যে রোগীদের অন্য জটিলতা আছে তারা করোনায় বিপদে পড়বেন। এ কারণে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। হাসপাতাল ২৫০ শয্যার হলেও ৩১৯টি অক্সিজেন লাইন করা হয়েছে। অন্য সব প্রস্তুতিও আছে। ‘রোগীর সংখ্যা বাড়লে বেডের সংখ্যাও বাড়িয়ে দেয়া হবে। তবে এখন হাসপাতাল ঠান্ডাজনিত রোগীতে ঠাসা।
আবদুল মোমেন জানান, কুষ্টিয়া ছাড়াও চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, পাবনা ও রাজবাড়ী জেলার রোগীরা এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। হাসপাতালে এখন সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী ভর্তি আছে।
এ ছাড়া বহির্বিভাগেও চিকিৎসা নেন আরও এক থেকে দেড় হাজার রোগী। তবে রোগীতে ঠাসা হাসপাতালে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা শিশু ওয়ার্ডে।
তিনি জানান, সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে ২০ জন রোগী আসছেন। হাসপাতালে ২৪ বেডের বিপরীতে এখানে ৮০ থেকে ১০০ শিশু ভর্তি আছে। হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় ভর্তি রয়েছে অনেক শিশু।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ঘুরে চিকিৎসাধীন শিশুর মা রোজিনা, স্বপ্না ও সালেহার সঙ্গে কথা হয়। তাদের সন্তানরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। প্রথমে অবস্থা খুব খারাপ থাকলেও এখন উন্নতি হয়েছে। তাই অভিভাবকরা মেঝেতে শুয়েও চিকিৎসা নিচ্ছেন সন্তানদের।
শুধু শিশু ওয়ার্ডেই নয়, মেডিসিন ওয়ার্ডেও আসনের চেয়ে তিন গুণ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। রোগীদের নানা পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
শিশু বিশেষজ্ঞ নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘শিশুদের ঠান্ডা লাগার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। দেরি করলেই শিশুর অবস্থা খারাপ হতে থাকে।
‘শিশুদের বেশির ভাগই খারাপ পরিস্থিতি নিয়ে হাসপাতালে আসছে। তবে শিশু ওয়ার্ডে এ পরিস্থিতি গত তিন মাস ধরেই চলছে।’
তাই শীতে শিশুর সুরক্ষায় তাদের ঘরের বাইরে বের করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, ‘দরকারে ঘরের বাইরে নিয়ে যেতে হলে অবশ্যই গরম কাপড় জড়িয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ