সুই-সুতোর ফোড়নে দরিদ্র নারীদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি
রতন বিশ্বাস: কাঁথা বাংলাদেশের একটি বিশেষ ঐতিহ্য। গ্রামের দরিদ্র শ্রেণি এখনো শীতের আবরণ হিসেবে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে। গ্রাম বাংলার বিত্তবান ও বিত্তহীন সকল মহলেই এটি ব্যবহৃত। শহরে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির মাঝেও কাঁথা ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। নকশীকাঁথার ব্যবহার ও বিপণনে বৈচিত্র ও নতুনত্ব আনা হয়েছে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে এটি বিদেশেও রফতানি করছে দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা এলাকার ব্যবসায়ীরা। এই ব্যবসার ফলে এলাকার অনেক যুবক ব্যবসায়ীদের ভাগ্যবদল হয়েছে। সেই সাথে গ্রামের দরিদ্র মহিলাদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকা ঘুরে দেখা যায় শত শত কাঁথা ব্যবসায়ী এই ব্যবসার সাথে জড়িত এবং এই ব্যবসার মাধ্যমে তারা স্বাবলম্বীও হয়েছেন। কাঁথা ব্যবসা করে ভাগ্যবদল হওয়া কার্পাসডাঙ্গা কলোনিপাড়ার জাহাঙ্গীর আলম জানান, আজ থেকে ১০ বছর আগে ভারত থেকে আমাদের এলাকায় কয়েকজন নারী হাড়ি পাতিল নিয়ে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ঘুরে দরিদ্র মহিলাদের কাছে হাড়ি পাতিলের মাধ্যমে কাঁথা কিনে ভারতে নিয়ে যেতো। এভাবে ভারতীয় নারীরা ২ থেকে ৩ বছর তারা কাঁথা ক্রয় করেছে। পরে বিষয়টি অনুধাবন করে কয়েকটি যুবক তাদের সাথে যোগাযোগ করে এই ব্যবসার জন্য। স্থানীয় যুবকরা এলাকার বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় দরিদ্র মহিলাদের কাছে হাড়ি পাতিল ও নগদ টাকার মাধ্যমে কাঁথা ক্রয় করে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা এলাকায় এসে কয়েকদিন অবস্থান করে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে কাঁথা কিনে ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে ট্রাক লোড দিয়ে ভারতে নিয়ে যায়। আমাদের এলাকার শতশত যুবকরা চুল ব্যবসার পরে কাঁথার ব্যবসার দিকে ঝুঁকছে। বর্তমান সময়ে কার্পাসডাঙ্গা এলাকায় কাঁথার ব্যবসাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই ব্যবসার কারণে গ্রামের দরিদ্র মহিলাদেরও একটি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামের মহিলারা বাদ পড়া কাপড়ে সুই-সুতোর ফোড়নের মাধ্যমে একটি কাঁথা তৈরী করে। সেই কাঁথা হাড়ি পাতিল অথবা নগদ টাকার মাধ্যমে তারা বিক্রি করে। বর্তমানে একটি কাঁথা ২শ থেকে ৮শ টাকা দিয়ে কিনতে হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। এই হস্তশিল্পটির ভারতে ভালো চাহিদাও রয়েছে। অনেক গৃহবধূ কাঁথা সেলাই করে সংসারের স্বাচ্ছন্দ্য ফিরিয়ে এনেছেন। সেলাইয়ের মাধ্যমে কাঁথায় ফুটিয়ে তোলেন ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্য।