কচুরিপানা আর ময়লা-আর্বজনায় দুষিত হচ্ছে মেহেরপুরের ভৈরব নদের পানি

মহাসিন আলী, মেহেরপুর:

ভৈরব খনন ছিল মেহেরপুরবাসীর প্রাণের দাবি। ভৈরব খনন হয়েছে। কিন্তু কচুরিপানা আর ময়লা-আর্বজনায় দুষিত হচ্ছে পানি, নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ আর সৌন্দর্য হারাতে বসেছে মেহেরপুরের ভৈরব নদ। সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। মেহেরপুরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা স্রোতহীন ভৈরবের ৮০ শতাংশই এখন কচুরিপানার দখলে। তাই এখনই ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ভৈরব নদের দু’পাড়ের মানুষ। ভারতের গঙ্গার শাখা নদী জলাঙ্গি থেকে ভৈরবের উৎপত্তি। ভারতের নন্দনপুর সেতুর নিচ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এই নদ। ভারত বহু বছর আগে রেগুলেটর তৈরি করে ভৈরবের প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। সীমান্ত থেকে কাথুলী পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার মৃত ভৈরবের মধ্যে ধানখেত ও বিভিন্ন ফসল ছাড়া কিছু চোখে পড়ে না। ফলে পুনঃখনন করেও তেমন একটা লাভ হয়নি। মৃত প্রায় ভৈরব নদকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ২০১৫ সালে ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাথুলী থেকে মুজিবনগর উপজেলার রশিকপুর সøুইস গেট পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটার পুনঃখনন কাজ শুরু করে। যা শেষ হয় ২০১৭ সালের শেষের দিকে। সে সময় ভৈরব নদ ফিরে পায় তার পূর্ণ যৌবন। খনন করা নদের অংশের দুই পাড়ের মানুষকে গোসল করা, মাছ ধরাসহ বিভিন্ন সুবিধা নিতে দেখা গেছে। কিন্তু কচুরিপানায় ভরে যাওয়ায় মানুষ সুবিধা বঞ্চিত হয়েছে। নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ, দুষিত হচ্ছে পানি। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। ভৈরব পাড়ের বাসিন্দা ডা. মুকিদুর রহমান বলেন- যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের দেখভালের অভাবে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভৈরব নদ কচুরিপানা ও দু’পাশের মাটির ঢসে সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলেছে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে ভৈরব নদ পুনঃখনন করা হয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসিনতায় কারণে তার কোনটিই বাস্তবায়িত হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন- মেহেরপুর অংশে পুনঃখননের ২৯ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ২২ কিলোমিটার জুড়েই রয়েছে কুচুরিপানায় আচ্ছাদিত। যা দেখলে মনে হয় কোন খেলার মাঠ। এ কচুরিপানা বুকে নিয়ে যেন বহু কষ্টে বইছে ভৈরব নদ। ভৈরব পাড়ের বাসিন্দা বুড়িপোতা ইউপি’র ওয়ার্ড সদস্য যাদবপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন ওরফে লাল্টু বলেন- সম্প্রতি কচুরিপানা পঁচে পানি দুষিত হয়েছে। আগের মত মাছ উৎপন্ন হচ্ছে না। কচুরিপানা না থাকলে কোটি কোটি টাকার উৎপাদিত মাছ এ ভৈরব নদ থেকে ধরা সম্ভব হত। এছাড়া কচুরিপানার কারণে প্রচুর মশা উৎপন্ন হচ্ছে। ভৈরব পাড়ের গোভীপুর গ্রামের গৃহবধূ নার্গিস আরা বলেন- আগে ভৈরব নদে আমরা গোসল করতাম। কাপড়-ছোপড় পরিষ্কার করতাম। এখন পানি দুষিত হয়ে যাওয়ায় গোসল ও কাপড় পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড মেহেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহিনুজ্জামান বলেন, আরও প্রায় ৫৬ কিলোমিটার ভৈরব খনন করা হচ্ছে। যা চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদীর সাথে মিশে যাবে। সেই সাথে দুইটি সøুইচগেট তৈরি করা হবে। যাতে করে বর্ষায় পানি বৃদ্ধি পেলে অন্য মরসুমের জন্য পানি ধরে রাখা যায়। যেহেতু ভৈরব নদ ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তাই নোম্যান্সল্যান্ডের কাছে ভৈরব একেবারেই মৃত। সেজন্য পানি প্রবাহ কম হয়। স্থির পানিতে অনেক জলজ উদ্ভিদের জন্ম হয়। ভৈরবের বাকি অংশ পুনঃখনন শেষ হলে আশা করছি ভৈরবের পানি প্রবাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এ বিষয়ে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি বলেন- বিভিন্ন নদ-নদী থেকে কচুরিপানা সাফ করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে যন্ত্র কেনা হচ্ছে। মেহেরপুরের ভৈরবসহ বিভিন্ন নদী-খাল পরিস্কার করার জন্য একটা যন্ত্র চাওয়া হয়েছে। পাওয়া গেলে ভৈরব নদের কচুরিপানা থাকবে না আশা করছি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More