স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় একুশে পদকপ্রাপ্ত বাউল সাধক খোদা বকশ সাঁইয়ের ৩২তম প্রয়াণ দিবসের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল রোববার দু’দিনব্যাপী আয়োজন পূণ্যসেবার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে। এসময় বাংলা একাডেমির উপপরিচালক সাইমন জাকারিয়া, খোদা বকশ সাইঁয়ের পুত্র বাউল আব্দুল লতিফ শাহ, রেখা পারভীন, কণ্ঠশিল্পী সৃজনী তানিয়া ও বাউল শিল্পীরা উপস্থিত ছিলেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবছর জাঁকজমকভাবে দিবসটি উদযাপন করা সম্ভব হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভক্তদেরকে নিয়ে সীমিত পরিসরে উদ্বোধন ও বাউল গানের আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল ৭টায় গোটশিলা শুরু হয়। লালন ও অন্যান্য মহাজনী পদ পরিবেশিত হয়। এসময় আব্দুল লতিফ শাহ, কণ্ঠশিল্পী সৃজনী তানিয়া, ওলিউর রহমান, সুজন মোক্তার, আব্দুর রাজ্জাক, আখিরন বিবি, শেখ লিটু ও মহি ফকির গান পরিবেশন করেন। প্রখ্যাত লালনপন্থী সাধকশিল্পী, প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক লালন সঙ্গীত শিক্ষক, সহ¯্রাধিক সাধনসঙ্গীতের রচয়িতা-সুরকার সঙ্গীত সাগর খোদাবক্স সাঁই (চৈত্রসংক্রান্তি ১৩৩৪ থেকে ১লা মাঘ ১৩৯৬ বঙ্গাব্দ)’র ৩২তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে প্রতি বছর এ আয়োজন করা হয়।
খোদাবক্স সাঁই তার সঙ্গীত জীবনের স্বীকৃতি ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমির সম্মানসূচক ফেলোশিপ এবং লালনসঙ্গীতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত হন।
খোদাবক্স সাঁই ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ বেতারের ট্রান্সক্রিপসন সার্ভিস আয়োজিত প্রথম জাতীয় লোকসংস্কৃতি উৎসবে অংশগ্রহণ করে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। তিনি ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে আমন্ত্রিত বাউল দলের প্রতিনিধি হিসেবে শান্তিনিকেতন ভ্রমণ করেন। এছাড়া, ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশে শিল্পকলা একাডেমির লালন সঙ্গীতের প্রভাষক পদে ঢাকায় প্রথম লালন সঙ্গীতের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। তার সঙ্গীত ও জ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে জাপানের মাসাহিকো ওনিসি ও আমেরিকার ড. ক্যারোল সলোমন তার চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার জাহাপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত আশ্রমে অবস্থা গ্রহণ করেন এবং তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। বিভিন্ন সময় আমেরিকার ক্যারোল সলোমন খোদা বখশ সাঁইয়ের সঙ্গ নিয়ে ও চিঠিপত্র বিনিয়ের মাধ্যমে লালন সাঁইয়ের গানের প্রামাণ্য পাঠ, ইংরেজি অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হন। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে ক্যারোল সলোমনকৃত ৬৪৮ পৃষ্ঠার বৃহৎ পরিসরে ‘সিটি অব মিরোরস : সংস অব লালন সাঁই’ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে যার প্রতিটি পৃষ্ঠায় খোদাবক্স সাঁইয়ের কথা উল্লেখিত হয়েছে।