।। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী।।
আজ ২৫ রমজান। পবিত্র মাহে রমজানের নাজাতের দশকের অর্ধেক আজ শেষ হচ্ছে। রমজান মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো ফিতরা অর্থাৎ সদকাতুল ফিতর। অভাবী, গরিব-দুঃখীরাও যাতে ঈদের আনন্দে শরিক হতে পারে সে কারণে ঈদুল ফিতরের নামাজের পূর্বেই ফিতরা দেয়া জরুরি। যাকাত যেমন মালকে পবিত্র করে ঠিক তেমনি ফিতরাও রোজাকে পবিত্র করে অর্থাৎ রোজায় যে সকল ত্রুটি-বিচ্যুতি হয় ফিতরা তার ক্ষতিপূরণ করে এবং সহীহভাবে রোজা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। এ প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) সদকায়ে ফিতর নির্ধারণ করেছেন রোজাকে অনর্থক কথা ও অশ্লীল ব্যবহার হতে পবিত্র করার এবং গরিবের মুখে অন্ন দেয়ার জন্য (মেশকাত: আবু দাউদ)। ফিতরা আদায় করা সামর্থবানদের ওপর ওয়াজিব। শরিয়তের পরিভাষায়, ঈদুল ফিতরের দিন সোবেহ সাদেকের সময় যার নিকট যাকাত ওয়াজিব হওয়া পরিমাণ অর্থ-সম্পদ থাকে শুধু তার উপরেই সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব। তবে যাকাতের নেছাবের ক্ষেত্রে ঘরের আসবাবপত্র বা ঘরের মূল্য ইত্যাদি হিসেবে ধরা হয় না, কিন্তু ফিতরার ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যকীয় আসবাবপত্র ব্যতীত অন্যান্য আসবাবপত্র, সৌখিন দ্রব্যাদি, খালি ঘর বা ভাড়ার ঘর (যার ভাড়ার ওপর তার জীবিকা নির্ভরশীল নয়) এমন কিছুর মূল্যও হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ গরিবের সাহায্য, সহযোগিতার দিকটাই এক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য পায়। ফিতরা শুধু রোজার সঙ্গেই সম্পর্কিত এবং তা ঈদের জামাতের পূর্বেই আদায় করা উত্তম। কারণ হাদিসে হুজুর (সা.) ঈদের নামাজের পূর্বেই তা দিতে বলেছেন। এক হাদিসে ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, একবার তিনি রমজানের শেষের দিকে বললেন, তোমরা তোমাদের রোজার যাকাত (ফিতরা) আদায় কর। নবী করীম (সা.) প্রত্যেক স্বাধীন ব্যক্তি ও কৃতদাস, পুরুষ ও নারী, ছোট ও বড় সকলের ওপর এই যাকাত এক সাআ খেজুর ও যব অথবা আধা সাআ গম (প্রায় ১ কেজি ৬৬২ গ্রাম) নির্ধারণ করেছেন (মেশকাত: আবু দাউদ, নাসায়ী)। তবে এটা হলো ন্যূনতম পরিমাণ। কেই ইচ্ছে করলে এর বেশিও দিতে পারে। এটা তার জন্য বাড়তি ছওয়াবের কারণ হবে। ফিতরা গরিব-নিঃস্বদের হক। এজন্য তা গরিবের মাঝে বণ্টন করতে হবে। সর্বোপরি এটা রোজার যাবতীয় ভুল-ত্রুটির জন্য কাফফারা স্বরূপ। (লেখক: মৎস্য বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ