স্টাফ রিপোর্টার: শুরু হয়ে গেল পানিযুদ্ধ! ভারত ঝিলম নদীর পানি ছাড়ায় পাকিস্তানের একাংশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ অংশ জলমগ্ন। সেখানে জরুরি অবস্থা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সাধারণ মানুষকে নদীর কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অভিযোগ, কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই উরি বাঁধের জল ছেড়েছে ভারত। এর ফলে প্রস্তুতির সময় পাওয়া যায়নি। ভারতের এই পদক্ষেপকে ‘জল সন্ত্রাস’ বলে উল্লেখ করছে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ। তবে এ বিষয়ে ভারতের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তির শর্ত অনুসারে, ভারত বা পাকিস্তান কেউ বাঁধের পানি ছাড়তে চাইলে নির্দিষ্ট সময় হাতে রেখে অন্য পক্ষকে সতর্ক করতে হয়। আগে থেকে না জানিয়ে বাঁধের পানি ছাড়া চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের সমান। ভারতের বিরুদ্ধেও এক্ষেত্রে সেই অভিযোগ করেছে পাকিস্তান সরকার। কিন্তু কিছুদিন আগেই সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করার কথা জানিয়েছে ভারত। জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর জঙ্গি হামলার ঘটনার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ঝিলম নদীর পানিতে ভেসে গেছে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের হাট্টিয়ান বালা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। মুজাফফরবাদ ও চাকোটিতে বহু মানুষ ঘরছাড়া। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শনিবার রাত থেকে আচমকা নদীর জল বাড়তে শুরু করে। প্রশাসনের তরফে জরুরি অবস্থা জারি করে দেওয়া হয়। মাইকে ঘোষণা করা হয়, অবিলম্বে নদীর কাছ থেকে সরে যেতে হবে। জিনিসপত্র নিয়ে সরার সময়ও অনেকে পাননি। প্রাণ বাঁচাতে সব ছেড়ে চলে গেছেন। মোহাম্মদ আসিফ নামে স্থানীয় একজন জানান, ‘আমাদের কাছে আগে থেকে কোনো খবর ছিল না, কোনো সতর্কবার্তা ছিল না। আচমকা দেখলাম পানি বাড়তে শুরু করেছে। খুব সমস্যায় পড়েছি।’ মুজাফফরবাদের স্থানীয় প্রশাসনের তরফে একটি ছোট বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ঝিলম নদী থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি ছাড়ছে ভারত। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নদী-তীরবর্তী এলাকা থেকে দ্রুত সরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। কোহালা এবং ঢালকোটের মতো নিচু এলাকায় বন্যার ফলে চাষের জমি এবং ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত ভারত-পাকিস্তান সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তির অন্তর্ভুক্ত নদীগুলো ভারতের দিক থেকেই পাকিস্তানে প্রবাহিত। চুক্তি অনুসারে, ভারতের নিয়ন্ত্রণে সিন্ধুর পূর্বের তিন উপনদী বিপাশা (বিয়াস), শতদ্রু (সাটলেজ) এবং ইরাবতীর (রাভি) পানি। এছাড়া সিন্ধু ও তার দুই উপনদী বিতস্তা (ঝিলম) ও চন্দ্রভাগার (চেনাব) পানির ওপর পাকিস্তানের অধিকার। এর মধ্যেই ঝিলম নদীর পানিতে বন্যায় ভাসল পাকিস্তান। পালটাপালটি পদক্ষেপে উত্তেজনা কার্যত চরমে পৌঁছেছে এবং এর মধ্যেই কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর বিভিন্ন স্থানে তৃতীয় দিনের মতো শনিবার রাতে ভারত ও পাকিস্তান সেনাদের মধ্যে আবার গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। পাকিস্তানি সেনারা নিয়মিতভাবেই নিয়ন্ত্রণ রেখায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে বলে ভারতীয় সেনা সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে এনডিটিভি। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ভারতীয় যুদ্ধজাহাজগুলো আরবসাগরে একাধিক অ্যান্টি-শিপ (জাহাজ বিধ্বংসী) ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। ভারতীয় যুদ্ধজাহাজগুলো এই পরীক্ষার মাধ্যমে দূরপাল্লার নির্ভুল আক্রমণের জন্য তাদের প্রস্তুতি প্রদর্শন করেছে। ভারতীয় নৌবাহিনী দাবি করেছে, তারা জাতির স্বার্থ রক্ষার জন্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। এদিকে সামরিক প্রস্তুতির পাশাপাশি বাক্যুদ্ধও চলছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আবারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে হামলার জন্য দায়ী এবং এর পেছনে যারা কলকাঠি নেড়েছে তাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে। আবার পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী হানিফ আব্বাসি হুমকি দিয়ে বলেছেন যে পাকিস্তানের বিভিন্ন অংশে গোপন ডেরায় ১৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র মজুত করা আছে। ঐ ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের দিকে তাক করা আছে। যুদ্ধের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। এদিকে এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন মার্কিন তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) প্রধান ক্যাশ প্যাটেল। এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে ক্যাশ প্যাটেল লিখেছেন, ‘কাশ্মীরে মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা জানাই। সেই সঙ্গে ভারত সরকারকেও জানাতে চাই, আমরা তাদের পাশে রয়েছি। এই হামলা আমাদের গোটা বিশ্বকে মনে করিয়ে দেয় যে সন্ত্রাস কীভাবে বারবার ভয় দেখাচ্ছে আমাদের।
পূর্ববর্তী পোস্ট
গাংনীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় তলা থেকে বোমা সদৃশ্য বস্তু উদ্ধার
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.