করোনায় মারা গেলেন আরও ১৪ জন : নতুন ১ হাজার ৪১ জন আক্রান্ত
স্টাফ রিপোর্টার: দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১ হাজার ৪১ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। একই সময়ে মারা গেছে আরও ১৪ জন। এতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮ হাজার ৮৬৩ জন। মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৩। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১টি ল্যাবে ৭ হাজার ৩৯২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বৃহস্পতিবার দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির সবশেষ তথ্য তুলে ধরেন। গত এক দিনে মোট কতজন সুস্থ হয়েছেন সে তথ্য বুলেটিনে জানানো হয়নি। বুধবার পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৩৬১ জন সুস্থ হয়ে ওঠার কথা জানিয়েছিলো স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোস্পাইন সার্জন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, দিন দিন রোগী এবং মৃত্যু বৃদ্ধির মানেই হচ্ছে আমাদের দেশে সংক্রমণ এখনও ঊর্ধ্বমুখী। অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা বলছে, এই ভাইরাসের সংক্রমণ একটা সর্বোচ্চ সীমায় (পিক) পৌঁছায়। এরপর ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আবার কমে যাওয়ার পর ফের সংক্রমণের রেকর্ডও আছে বিভিন্ন দেশে। সুতরাং একদিকে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি আরেকদিকে নতুন করে সংক্রমণ ফিরে আসার দৃষ্টান্ত থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই।
অধ্যাপক নাসিমা জানান, এখন পর্যন্ত ৪১টি ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা চলছে। এর মধ্যে ঢাকায় ২০টি ও ঢাকার বাইরে ২১টি ল্যাবে আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা করা নমুনার মধ্যে ঢাকার ল্যাবে চার হাজার ৯৫৬টি ও ঢাকার বাইরের ল্যাবে দুই হাজার ৮৮১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ঢাকার ল্যাবে চার হাজার ৫৮৮টি এবং ঢাকার বাইরের ল্যাবে দুই হাজার ৮০৪টিসহ নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনা পরীক্ষায় ঢাকার ল্যাবগুলোতে ৭৫৪ জন এবং বাইরের ল্যাবগুলোতে ২৮৭ জন শনাক্ত হয়েছেন। গত একদিনে যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ১১ জন পুরুষ, ৩ জন নারী। ৯ জন ঢাকা মহানগরী এবং বাকিরা চট্টগ্রামের বাসিন্দা। মৃত ১৪ জনের মধ্যে দুজনের বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে, ৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০, ৫ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০, ১ জনের ৩১ থেকে ৪০ এবং ১ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।
বুলেটিনে বলা হয়, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগীর খোঁজ মেলে গত ৮ মার্চ; সে বিবেচনায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন রয়েছে দশম সপ্তাহে। অষ্টম সপ্তাহ অর্থাৎ ২৬ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত সময়ে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছিলো ৩ হাজার ৭৯২ জনের মধ্যে। সে সপ্তাহে সুস্থ হয়েছিলেন ৬৪ জন, মারা গেছেন ৩৫ জন। নবম সপ্তাহ অর্থাৎ ৩ মে থেকে ৯ মের মধ্যে শনাক্ত হয়েছিলেন ৪ হাজার ৯৮০ জন কোভিড-১৯ রোগী। সুস্থ হয়েছিলেন ২ হাজার ৩৩৭ জন, মারা গেছেন ৩৯ জন। ১০ মে থেকে শুরু হওয়া দশম সপ্তাহে এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৯৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ১৮৯ জন, মারা গেছেন ৬৯ জন।
ব্রিফিংয়ের শুরুতেই দেশবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান অধ্যাপক ডা. নাসিমা। তিনি বলেন, নইলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব হবে না। আপনারা মনে রাখবেন, আমরা একটা যুদ্ধ অবস্থায় আছি। এই যুদ্ধে জয়লাভ করতে হলে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। মানসিকভাবে উজ্জীবিত থাকতে হবে। এজন্য যার যা করা দরকার করবেন। ব্যায়াম করবেন। ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধসহ প্রচুর তরল খাবার খাবেন। মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে বইপড়া, ছবি দেখা, ছবি আঁকা, গান করা ইত্যাদি কার্যক্রম চালাতে পারেন। বাড়িতে বয়স্ক, গর্ভবতী ও শিশু বিশেষ করে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের ব্যাপারে বেশি যতœশীল হোন। ব্রিফিংয়ে আরও বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২০১ জনকে আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন দুই হাজার ৫৭০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৬৬ জন। এ পর্যন্ত ছাড় পেলেন এক হাজার ৩৯৮ জন। অপরদিকে সারা দেশে আইসোলেশন শয্যা আছে আট হাজার ৬৩৪টি। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে দুই হাজার ৯০০টি ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ছয় হাজার ৩৪টি শয্যা আছে। আইসিইউ শয্যা আছে ৩২৯টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট আছে ১০২টি। আইসিইউ শয্যা ও ডায়ালাইসিস ইউনিট শয্যা বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে।
অধ্যাপক নাসিমা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজার ৩১ জনকে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত দুই লাখ ৩০ হাজার ৬৭৩ জনকে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড় পেয়েছেন দুই হাজার ২৯৮ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন এক লাখ ৮৪ হাজার ৬৫৯ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ৪৬ হাজার ১৪ জন। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কেয়ারেন্টিনের জন্য ৬১৭টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ১৬৫ জনকে। বুলেটিনে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ