স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) করোনা ইউনিটে বাড়ছে মৃত্যু। চালু হওয়ার পর ১০ দিনে এখানে ১০৩ জন রোগী মারা গেছেন। এ পর্যন্ত চালু হওয়া কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে এতো মৃত্যুর রেকর্ড নেই। এই ইউনিটে এতো রোগী মারা যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণের তথ্য দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রাজধানীর অন্যান্য হাসপাতালে সেবা বঞ্চিত হওয়া রোগীদের জরুরি ভিত্তিতে এখানে ভর্তি করা হচ্ছে বলে মৃত্যুর হার বেশি বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মনে করছে। ২ মে থেকে করোনা ইউনিটে পুরোদমে করোনা চিকিৎসা চালু করা হয়। এরপর থেকে পরবর্তী ১০ দিনে করোনা ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন ৬১০ জন রোগী। এদের মধ্যে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ১০৩ জন রোগী মারা গেছেন।
যাদের মধ্যে করোনা পজিটিভ ছিলো ১৭ জন। বাকি রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এর বাইরে সাধারণ রোগে আরও কিছু রোগী মারা গেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা ইউনিটে কভিড-১৯ পজিটিভ রোগী ছাড়া উপসর্গ আছে এমন রোগী, নিউরো সার্জারি, অর্থোপেডিক্স, শিশু বিভাগের রোগীরাও চিকিৎসা পাচ্ছেন। এমনকি করোনা আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বা নারীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। তাই অনেক সাধারণ রোগী আছে বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে শেষ মুহুর্তে ঢামেকে আসেন। যখন আসে তখন চিকিৎসকদের আর কিছু করার থাকে না। এদিকে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এমন দাবি করলেও করোনা ইউনিটে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী, রোগীর স্বজন, মৃত রোগীর স্বজনরা ভিন্ন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এখানে আসা গুরুত্বর অসুস্থ অনেক রোগী সময়মতো সেবা পাননা বলেও কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আলাউদ্দিন বলেন, ঢাকা মেডিকেল একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল। এখানকার চিকিৎসকরা যেমন দক্ষ ঠিক তেমনি সকল রোগের চিকিৎসা করা হয়। করোনা পরিস্থিতিতে আমরা করোনা রোগীদের পাশাপাশি করোনা সাসপেকটেড রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছি। তাই ঢাকার অনেক হাসপাতাল থেকে করোনা পজিটিভ রোগীদের পাশাপাশি সাসপেকটেড রোগীদের এখানে পাঠানো হয়। কুয়েত মৈত্রি, কুর্মিটোলা, মুগদাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পজিটিভ রোগী ছাড়া ভর্তি নেয়া হয় না। আমরা সেই রোগী ভর্তি নিচ্ছি। বিশেষকরে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে হার্ট, লিভার, কিডনি, এজমার রোগীরা সেবা পাচ্ছে না বা ভর্তি হতে পারছে না। তাই তারা অনেক হাসপাতাল ঘুরে শেষ মুহুর্তে এখানে আসছে। কিন্তু এখানে আসার পরপরই তারা মারা যাচ্ছে। চিকিৎসকদেরও কিছু করার থাকছে না। এজন্য মৃত্যুর সংখ্যাটা বেড়ে যাচ্ছে।
করোনা রোগীর বাইরে অন্যান্য রোগীদের জন্য ঢামেকে আলাদা বিভাগ থাকার পরও কেন তাদেরকে করোনা ইউনিটে সেবা দেয়া হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের রোগীদের সাসপেকটেড করোনা হিসেবে ধরে নেয়া হয়। হয়তো তাদের করোনা পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যায়নি এমন অবস্থায় মারা যাচ্ছে। আবার অনেকের মৃত্যুর পর পজিটিভ রেজাল্ট আসছে। তাই এ ধরনের রোগীকে অন্য ওয়ার্ডে ভর্তি করার সুযোগ নেই। আমরা বার্ন ইউনিটের একটি ফ্লোর সাসপেকটেড রোগীদের জন্য নির্ধারণ করেছি। পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় করোনা পজিটিভ রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছি। চিকিৎসার জন্য আমরা স্পেশালি একটা রোস্টার করেছি। একেবারে জুনিয়র চিকিৎসকরা সরাসরি করোনা রোগীদের সংস্পর্শে যাচ্ছেন। মিড লেভেলর চিকিৎসকরা রাউন্ড দেন। কোনো সমস্যা হলে হাসপাতাল প্রশাসনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে সমাধান দেন। এছাড়া এসোসিয়েট প্রফেসর ও প্রফেসররা মোবাইলে অথবা ভিডিও কলে তদারকি করেন। অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ করলে অভিযোগ থাকবেই। আমরা এই পরিস্থিতিতে কাজ করে যাচ্ছি তাই কিছু অভিযোগ থাকবে। একেবারে ইউনাইটেড, অ্যাপোলো, স্কয়ারের মত সেবা দিচ্ছি এটা বলবো না। তবে চেষ্ঠা করছি। এছাড়া আমাদের জনবল সমস্যা রয়েছে। বার্ন ইউনিট ভবনে চতুর্থ শ্রেণির কোনো কর্মচারি রাজস্ব খাতের না। আগে স্পেশাল বয়রা ডিউটি করতো যাদেরকে আমরা কোনো টাকা দিতাম না। ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হওয়াতে তাদরকে করোনা ইউনিটে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। কারণ আমরা তাদের বেতন দেই না তাই তাদের কেউ আক্রান্ত বা মরে গেলে দায়িত্ব নেবে কে? তাই আমারা দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে প্রায় আড়াইশ জনবল নিয়োগ দিয়েছিলাম তাদেরকে দিয়ে কাজ চালাচ্ছি।
পূর্ববর্তী পোস্ট
প্রতিদিন ১০ হাজার টার্গেট করা হলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হচ্ছে না
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ