স্টাফ রিপোর্টার: জেকেজি হেলথ কেয়ারের জালিয়াতির মামলায় গ্রেফতার হওয়া জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক সাবরিনা শারমিন হুসাইন ওরফে সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল সোমবার ঢাকার মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান ডা. সাবরিনার জামিন আবেদন বাতিল করে তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেন। এর আগে তেজগাঁও থানা পুলিশ সাবরিনাকে আদালতে হাজির করে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করে। অন্য দিকে সাবরিনার আইনজীবীরা তার জামিনের আবেদন করেছিলেন। আদালতে ডা. সাবরিনা নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘তিনি জেকেজি’র চেয়ারম্যান নন, তবে পুলিশ দাবি করে, সাবরিনাই ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। শুধু তাই নয়, স্বামী আরিফ চৌধুরীর সাথে করোনা রিপোর্ট জালিয়াতি করে দেশের ভাবমুর্তি বিদেশে নষ্ট করেছেন। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে তেজগাঁও থানা পুলিশ বিশেষ নিরাপত্তার মাধ্যমে সাবরিনাকে আদালতে হাজির করে। শুনানি শেষ হয় ১১টা ৫০ মিনিটে। সাবরিনার পক্ষে জামিনের আবেদন করেন ওবায়দুল হক, সাইফুল ইসলাম সুমনসহ কয়েকজন আইনজীবী। এর আগের রাতে সাবরিনা থানা হাজতে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। থানা সূত্রে জানা গেছে, রোববার রাতে তিনি একটুও ঘুমাননি। হাজতের ভেতরে কিছু সময় বসেছেন, কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করেছেন। কখনো কখনো তার নিরাপত্তায় থাকা দুজন নারী কনস্টেবলের সাথে কথা বলেছেন।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের সাবেক রেজিস্ট্রর ডা. সাবরিনা জেকেজি হেলথ কেয়ারের প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী। করোনা ভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে কামাল হোসেন নামে এক ভুক্তভোগীর করা মামলায় গ্রেফতার হয়ে সাবরিনার স্বামী আরিফুল বর্তমানে কারাগারে আছেন। এরপর আরো চারটি মামলা হয়েছে ওই প্রতিষ্ঠান ও আরিফুলের বিরুদ্ধে। তবে সাবরিনাকে প্রথম দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
সূত্র মতে, গত রোববার দুপুরে ডা. সাবরিনাকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুর-আর রশিদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম সাবরিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। একপর্যায়ে করোনা রিপোর্ট জালিয়াতি মামলায় তার সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। কিছু সময় পরে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ভঙের অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওই আদেশে বলা হয়, ডা. সাবরিনা সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজির চেয়্যারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট দেয়া এবং অর্থ আত্মসাতের সাথে তিনি সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এ কারণে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারের পর তাকে তেজগাঁও থানা হাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাতের বেলা তিনি পুলিশের দেয়া খাবার খান। যদিও তার পরিবারের সদস্য ও একজন গৃহকর্মী তার জন্য খাবার নিয়ে সেখানে অপেক্ষা করছিলেন। সকালে তাকে আদালতে নেয়ার প্রস্তুতি শুরু করে পুলিশ। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে বিশেষ পাহারায় মিতসুবিসির একটি এসি গাড়িতে করে তাকে আদালতে নেয়া হয়। ১১টা ৫০ মিনিটে আদালতে শুনানি শুরু হয়।
শুনানিতে আইনজীবী সুমন আদালতকে বলেন, ডা. সাবরিনা সরল ও সৎ বিশ্বাসে তার স্বামীর প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। তিনি জেকেজির অপকর্মের কথা আগে জানতে পারেননি। জানলে সম্পর্কচ্ছেদ করতেন। অন্য দিকে রাষ্ট্রপক্ষে আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই ফরিদ মিয়া বলেন, সাবরিনা তার স্বামীর সহযোগী হয়ে কাজ করেছেন। রোগীদের ভুয়া কোভিড-১৯ সনদপত্র (সার্টিফিকেট) সরবরাহ করে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ঘটনার বিস্তারিত জানা যাবে।
এসময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সাবরিনা বিচারকের কাছে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তিনি বলেন, আমি জেকেজির চেয়ারম্যান না। আমি চেয়ারম্যান হতে যাবো কেন? এটা তো একটা ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠান। ঘটনার সাথে আমি জড়িত নই। আমি নির্দোষ। শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন নাকচ করে এই চিকিৎসককে তিন দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, জেকেজির বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি প্রতারণার মামলা এবং থানায় হামলা, ভাঙচুর পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে। প্রথম মামলাটি দায়ের করেন কামাল হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী। সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ, করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেয়া এবং জীবন বিপন্নকারী রোগের সংক্রামণের মধ্যে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনা হয় সেখানে। এরপরই আরিফকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার গ্রেফতারের খবর পেয়ে অপর দুজন ব্যবসায়ী একই থানায় আরো দুটো মামলা করেন। এর একটিতে ১২টি ল্যাপটপ ভাড়া নেয়ার নামে আত্মসাৎ করা এবং অন্যটিতে দুটি আর্চওয়ে এবং ২০টি ওয়াকিটকি কিনে টাকা না দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে আরিফকে তিনটি প্রতারণার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তবে সাবরিনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রথম মামলায়। কিন্তু তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রতারণার অন্য দুই মামলাতেও তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে বলে জানায় পুলিশ।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ