করোনায় আরও ২৬ জনের মৃত্যু : শনাক্ত ১৭১৯
স্টাফ রিপোর্টার: দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে নতুন শনাক্ত রোগী, শনাক্তের হার ও মৃত্যু- তিন সূচকই বাড়তির দিকে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ২৬ জনের মৃত্যু হলো। যা গত আড়াই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এভাবে দিন দিন করোনায় মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৮ হাজার ৫৯৭ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে গত সোমবার করোনা শনাক্তের সংখ্যা এক হাজার ৭৭৩ জন হলেও মঙ্গলবার তা কিছুটা কমে এক হাজার ৭১৯ জন হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার ৮৮৭ জন। প্রতিদিনের মতো গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত করোনাভাইরাস-বিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তির ভাষ্য অনুযায়ী, সারাদেশে করোনাভাইরাসের সর্বশেষ সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১১৮টি আরটি-পিসিআর ল্যাব, ২৯টি জিন-এক্সপার্ট ল্যাব ও ৭২টির্ যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাবে অর্থাৎ ২১৯টি ল্যাবরেটরিতে ২০ হাজার ৯৩৬টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তারপর যাচাই-বাছাই শেষে ২০ হাজার ৭৪৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তবে সোমবার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিলো ১৮ হাজার ৬৯৫টি। আর এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা হয়েছে ৪৩ লাখ ৩ হাজার ৯৯৪টি। এ পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩২ লাখ ৮৮ হাজার ২৬৪টি। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হয়েছে ১০ লাখ ১৫ হাজার ৭৩০টি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে গত এক দিনে বাড়ি ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১ হাজার ৩৫২ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৭৯ জন হয়েছে। আর ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্তের হার ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং মৃতের হার ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ আর নারী ৯ জন। তাদের প্রত্যেকেই হাসপাতালে মারা গেছেন। ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে মারা যাওয়া ২৬ জনের মধ্যে ১৫ জনেরই বয়স ছিলো ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ৮ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৩ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ছিলো। মৃতদের মধ্যে ১২ জন ঢাকা বিভাগের, ৫ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৩ জন খুলনা বিভাগের, ৩ জন বরিশাল বিভাগের, ১ জন সিলেট বিভাগের এবং ২ জন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মারা যাওয়া ৮ হাজার ৫৭১ জনের মধ্যে ৬ হাজার ৫০১ জনই পুরুষ এবং ২ হাজার ৯৬ জন নারী। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ৭৯৭ জনের বয়স ছিলো ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ২ হাজার ১২৭ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৯৭২ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৪২৬ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১৭৩ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ৬৫ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ৩৭ জনের বয়স ছিলো ১০ বছরের কম।
তাদের ৪ হাজার ৮২৪ জন ঢাকা বিভাগের, ১ হাজার ৫৮৫ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৪৮৪ জন রাজশাহী বিভাগের, ৫৬৬ জন খুলনা বিভাগের, ২৬৩ জন বরিশাল বিভাগের, ৩১২ জন সিলেট বিভাগের, ৩৬৬ জন রংপুর বিভাগের এবং ১৯৭ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। গত বছর ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার এক বছর পর গত ৭ মার্চ শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৫ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে গত বছরের ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ বছর ১১ মার্চ তা সাড়ে ৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে গত বছরের ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিলো। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ৩৩তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় ৪০তম অবস্থানে রয়েছে।