সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যখন আত্মকেন্দ্রিকতার ঘুণ

সম্পাদকীয়

দেশে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা। এমন কোনো মাধ্যম নেই, যেখানে দুর্নীতি বা অপরাধ হচ্ছে না। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যখন আত্মকেন্দ্রিকতার ঘুণ, তখন স্বাভাবিকভাবেই সমস্ত বিষয়ে সরকারকে তটস্থ থাকতে হয়। বিশেষ করে, সরাসরি জনগণ সম্পৃক্ত বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। যখন বিষয়টা হয় ‘জাল টাকা’, তখন সেই বিষয়ে জড়িত অপরাধীদের শনাক্তকরণে সক্রিয় হয়ে ওঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবু বন্ধ হচ্ছে না, জাল টাকার বিস্তার। দেশব্যাপী একটা শক্তিশালী চক্র, কোটি কোটি জাল টাকা ছড়িয়ে দিচ্ছে বাজারে। এমনকি, ব্যাংকের নোটেও ধরা পড়ছে জাল টাকা। যে কারণে, সাধারণ মানুষের আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। যে কোনো বিশেষ উৎসবে, এই জাল টাকার ছড়াছড়ি দেখা যায়।

জাল টাকা চিহ্নিতকরণের অনেকগুলো পদ্ধতি রয়েছে। নিরাপত্তা সুতা, রঙ পরিবর্তনশীল কালি, জলছাপ ও অসমতল কালি লক্ষ্য করলেই, বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু সবসময় এই বিষয়গুলো চিহ্নিত করে, টাকা লেনদেন করা সম্ভব না। যে কারণে, অপরাধী চক্র আসল টাকার মধ্যে খুব সহজেই ঢুকিয়ে দেয়, জাল টাকা। আবার এই চক্রই, জাল টাকা বিক্রি করে-নির্দিষ্ট দামে। এক লাখ জাল টাকা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৫ হাজারে! এর মানে, ১৫ লাখ আসল টাকা দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে-১ কোটি জাল টাকা!

দেশের বিভিন্ন স্থানে জাল টাকার কারবারিরা দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় হলেও সবাইকে আটক ও বিচারের আওতায় আনা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের ব্যাংকগুলোকে নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। তারপরও জাল টাকার ছড়াছড়ি বন্ধ হচ্ছে না। এমনকি ব্যাংকের বুথগুলোতে প্রায়ই পাওয়া যাচ্ছে জাল টাকা। গত ২০ বছরে সারা দেশে কারবারিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১২ হাজার ৫১২টি। এর মধ্যে ৭ হাজার ১১২টি মামলা বিচারাধীন। এখনো ৫ হাজার ৪০০ মামলার তদন্ত চলছে। কোনো কোনোটি অভিযোগপত্র দেয়ার পর্যায়ে রয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, এসব মামলার সাক্ষীদের পাওয়া যাচ্ছে না। আবার মামলার বাদীদেরও হদিস মেলে না। জামিন নিয়ে আসামিরা বের হয়ে নাম-ঠিকানা পাল্টে ফেলছে। এ কারণে তদন্তে সমস্যা হচ্ছে। তারপরও জাল টাকার তদন্তাধীন মামলার অভিযোগপত্র দ্রুত আদালতে দাখিল করতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী, পুলিশও কাজ করছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, জাল টাকা নিয়ন্ত্রণে কঠোর কোনো আইন না থাকায় বিচার-প্রক্রিয়া বিলম্ব হচ্ছে। অনেক সময় কারবারিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও হয় না। বর্তমানে দ-বিধি-১৮৬০-এর ৪৮৯ (ক)-(ঘ) ধারা এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪-এর ২৫(ক) ধারা অনুযায়ী বিচার হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আইনি দুর্বলতা, মামলা পরিচালনায় মনিটরিং না থাকা, আদালতে সাক্ষী হাজির করতে না পারা, সাজার সময়সীমা সুনির্দিষ্ট না থাকা বিচার কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রতার কারণ হিসেবেই আমরা দেখছি। তবে আশার কথা হচ্ছে, জাল টাকার কারবারিদের বিরুদ্ধে শক্ত আইন করতে স্বরাষ্ট্র থেকে আইন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।’ জাল টাকা তৈরি করা ফৌজদারি অপরাধ। জড়িতদের শনাক্ত করে, স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি প্রয়োজন। দ্রুততম সময়ে, অপরাধীদের কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা দরকার। যদি নেপথ্যে কোনো রাঘব-বোয়াল জড়িত না থাকেন, তাহলে এর সমাধান জটিল কোনো বিষয় না। জনমনে শান্তি ও নিরাপত্তার বিষয়টি সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More