আজ ২৫ ডিসেম্বর। খ্রিষ্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন। দুই সহস্রাধিক বছর আগে জেরুজালেমের কাছাকাছি বেথলেহেম নগরীর এক গো-শালায় জন্মেছিলেন খ্রিষ্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিষ্ট। বিশ্বের খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা এই দিনটিকে ‘শুভ বড়দিন’ হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে। ৩৩ বছরের স্বল্পস্থায়ী জীবনে তিনি মানুষকে শুনিয়ে গেছেন শান্তির বাণী, ভালোবাসার কথা। হিংসা-বিদ্বেষ, পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মানুষকে মুক্ত করাই ছিল তার প্রবর্তিত ধর্মের মূল কথা। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা যিশুকে নিজেদের ত্রাণকর্তা হিসেবে গণ্য করে থাকেন। হিংসা-বিদ্বেষ-পঙ্কিলতাপূর্ণ এই পৃথিবীর মানুষকে সুপথে আনার জন্য উদ্ধারকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন যিশু। পথভ্রষ্ট মানুষের সামনে নিয়ে আসেন মহৎ স্বর্গীয় বাণী। মানবকুলকে আহ্বান করেন সত্য ও সুন্দরের পথে। যিশু যে মানবিক আদর্শের বাণী প্রচার করে গেছেন, তা সর্বকালে সর্বমানবের জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ। মতবাদ প্রচারের সময় অমানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন যিশু। কিন্তু কোনো নির্যাতন-নিপীড়নই তাকে সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। মানুষকে জয় করার হাতিয়ার ছিল তার সংযম ও সহিষ্ণুতা। প্রসঙ্গত, এবার যখন বড়দিন এসেছে, তখন করোনাভাইরাসের নতুন আতঙ্ক ওমিক্রন আলোচনায় আসছে। ফলে বড়দিন পালনের অনুষ্ঠান অত্যন্ত সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজন নিশ্চিত করাসহ নিরাপত্তা জোরদার ও নজরদারি অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বড়দিনের উৎসব পালিত হোক এমনটি কাম্য।
উল্লেখ্য, যিশু বঞ্চিত-লাঞ্ছিত মানুষকে দিয়েছেন বাঁচার অনুপ্রেরণা। মানবজাতিকে পাপ ও ঘৃণার পথ থেকে মমতা, ভালোবাসা ও ক্ষমাশীলতার পথে ফেরাতে চেয়েছিলেন। মানবসেবারও অন্যতম আদর্শ তিনি। তাই তিনি শোষিত, বঞ্চিত ও নিযার্তিত মানুষের পক্ষ নিয়ে শাসকের অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। যে কারণে তাকে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে জীবন দিতে হয়। এর মধ্যদিয়ে যিশু আত্মত্যাগেরও শিক্ষা দিয়ে গেছেন। বর্তমানে মানবজাতির নৈতিকতার বড় অধঃপতন দেখা দিয়েছে। ক্রমেই বেড়ে চলেছে লোভ, হিংসা, বিদ্বেষ। এ কারণেই সারাবিশ্বে আজ এত হানাহানি, অশান্তি। শুভ বড়দিনে যিশুর বাণী এই দৈন্য ও সংকীণর্তার ঊর্ধ্বে ওঠার শক্তি জোগাতে পারে। এ ছাড়া প্রতিটি ধর্মেরই মূল কথা মানবতাবোধ। বড়দিন উপলক্ষে যে প্রেম ও আশার বাণী প্রচার করা হয়, তারও মূলে রয়েছে মানবতা। ধর্মকে কেন্দ্র করেই এই একবিংশ শতকেও কিছু মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত পরিলক্ষিত হয়। তাই বড়দিন হোক সব পথভ্রষ্ট মানুষের শুভবুদ্ধি উদয়েরও দিন। পৃথিবী থেকে দূর হোক হিংসা ও সাম্প্রদায়িকতা। যিশুর সংযম, সহিষ্ণুতা ও ভালোবাসার শিক্ষা হোক সবার পাথেয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশে বড়দিনের উৎসব কেবল শহরেই অনুষ্ঠিত হয় না। বরং তা শহরের বাইরে কিছু কিছু খ্রিষ্টান অধ্যুষিত গ্রামগঞ্জেও আবেগ ও আনন্দময় পরিবেশে উদযাপিত হয়। বড়দিনের উৎসবে অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষও যোগ দিয়ে থাকে এবং আনন্দ ভাগ করে নেন। যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ এক অনন্য দৃষ্টান্ত। অশান্তি, যুদ্ধ-বিগ্রহর বদলে ভালোবাসার বিস্তার ঘটাতে এ পৃথিবীতে যিশুর বাণী কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। যিশু বিশ্বাস করতেন ঈশ্বরের শক্তিতে। যিশু সব মানুষের জন্য সমান সুযোগ দেয়ার কথাও শুনিয়েছেন। আধুনিক গণতন্ত্রের মর্মকথাও তা-ই। বড়দিন উপলক্ষে যিশু খ্রিষ্টের জন্মের কাহিনি পাঠ ও ধ্যান করা হয়। সেই কাহিনি অবলম্বনে গির্জাঘরে, এমনকি প্রত্যেক বাড়িতে গো-শালা নির্মাণ করে ফুলপাতা দিয়ে সাজানো হয়। এসব বাহ্যিক উৎসব-আয়োজনের ঊর্ধ্বে খ্রিষ্ট বিশ্বাসীরা; তাদের হৃদয়, মন ও অন্তরাত্মাকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করতে প্রয়াসী হন। আজকের দিনে প্রত্যাশা, ধর্মীয় এ উৎসবে সব মানুষের মধ্যে সংহতি গড়ে উঠুক এবং মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরও দৃঢ় হোক। পবিত্র বড়দিন উপলক্ষে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীর প্রতি রইল আমাদের আন্তরিক অভিবাদন।