প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি প্রয়োজন

সম্পাদকীয়

প্রাকৃতিক দুর্যোগকে রোধ করার উপায় নেই, কিন্তু এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যথাযথ প্রস্তুতি ও উদ্যোগ গ্রহণের মধ্যদিয়ে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। আমলে নেয়া জরুরি, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। অন্যদিকে বলাই বাহুল্য, প্রায় প্রতি বছরই দেখা যায়, বৈশাখ মাস থেকে শুরু হয় কালবৈশাখী তা-ব। আর এতে মানুষ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। দিশাহারা পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়। জীবন বিপর্যস্ত হয়। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নেয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখা অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়।

সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল,বগুড়া এবং নওগাঁয় শুক্রবার রাত এবং শনিবার ভোরে তীব্র গতিতে ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বহু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়েছে গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি। বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক। এ ছাড়া ঝড়ের সময় বজ্রপাত ও গাছের নিচে চাপা পড়ে ও নৌকা ডবে ৮ জনের মৃত্যুও হয়েছে। ফলে সামগ্রিক এ পরিস্থিতি আমলে নেয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

লক্ষণীয় যে, এবারের ঝড়ের তা-বে যেমন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, তেমনি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে যা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। যেভাবে ঝড়ের তা-বে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি সামনে আসছে তা আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। একইসঙ্গে এটাও মনে রাখা দরকার, ঝড়ের আশঙ্কাকে সামনে রেখে যথাযথ প্রস্তুতিও নিতে হবে। কেননা সঠিক প্রস্তুতি নিশ্চিত হলে ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করতে হবে। এটাও মনে রাখা সমীচীন, যেহেতু বাংলাদেশ প্রাকৃতিকভাবে দুর্যোগপ্রবণ দেশ, সঙ্গত কারণেই দুর্যোগ মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ ও যথাযথ প্রস্তুতির বিকল্প নেই। এ প্রসঙ্গে আমরা বলতে চাই, ঝড়-বৃষ্টি বন্যাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানুষ। এছাড়া দুর্যোগের কবলে বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। বন্যা জলোচ্ছ্বাসসহ নানা কারণে বাঁধ নির্মাণসহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের বিষয়ও আলোচনায় আসে। ফলে এগুলোও আমলে নিতে হবে। নিম্নমানের নির্মাণ বা যে কোনো ধরনের অবেহলার কারণে দুর্ভোগ বাড়লে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ফলে এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

বলা দরকার, এবার ঝড়ের তা-বকে কেন্দ্র করে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা আমলে নেয়ার পাশাপাশি করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। এছাড়া ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে এটাও এড়ানো যাবে না। এক্ষেত্রে বলা দরকার, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বজ্রপাত বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। একই সঙ্গে বজ্রপাতে মৃত্যুর হারও বেড়েছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই অস্বাভাবিক বজ্রপাত হচ্ছে মর্মে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। যা স্বাভাবিকভাবেই উৎকণ্ঠার। প্রসঙ্গত, আমরা এটাও বলতে চাই, আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা। মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে কৃষকের প্রাণহানিই ঘটে সবচেয়ে বেশি।

সর্বোপরি বলতে চাই, ঝড়ের তা-বসহ যে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি জারি রাখতে হবে, মানুষকে সচেতন করতে প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করে পুনর্বাসনেও উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রতি বছরই ঝড়, বৃষ্টি ও বন্যাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে রোধ করার কোনো উপায় নেই এটা যেমন ঠিক, তেমনি প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব- যা আমলে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে। এবারে ঝড়ের তা-বের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি আমলে নেয়া এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। একইসঙ্গে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যে কোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সামগ্রিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More