ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের আগ্নেয়গিরিতে ফের অগ্ন্যুৎপাত পরিলক্ষিত হচ্ছে। দু’দশকেরও বেশি সময় পর ফের রণমেজাজে দুদেশ। বৃহস্পতিবার রাতে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় প্রতিবেশী দেশ দুটির সেনাদের মধ্যে ঘটেছে গোলাগুলির ঘটনা। ফলে উদ্বেগের পারদ চড়িয়ে দুই দেশের সীমান্তেই এখন বাজার অপেক্ষায় যুদ্ধের দামামা। প্রস্তুত সেনা-নৌ-বিমান, তিন বাহিনীই। পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের কূটনীতির মাঠের টানটান উত্তেজনা এখন মাত্রা ছাড়িয়ে আরব সাগরে রণতরি মোতায়েন, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা, নিজ নিজ সীমানায় যুদ্ধবিমানের মহড়ায় গিয়ে ঠেকেছে। মূলত মঙ্গলবার জম্মু-কাশ্মীরের পর্যটনসমৃদ্ধ অঞ্চল পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ওপর জঙ্গি হামলায় ২৬জন নিহত হওয়ার পর থেকেই এই ‘যুদ্ধংদশা’। চলছে দুদেশের পালটাপালটি অভিযোগ, কঠোর কূটনৈতিক পদক্ষেপ ও শক্তিমত্তা প্রদর্শন। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিরপরাধ মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুতে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ। হামলায় নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি এ নিষ্ঠুর সহিংসতায় ভুক্তভোগী সবার প্রতি আন্তরিক সহানুভূতিও প্রকাশ করেছে ঢাকা। স্বাভাবিকভাবেই পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়লে অনিশ্চিত ও বিপজ্জনক পরিণতির আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে সতর্কও করছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসও চলমান অস্থিরতায় উদ্বেগ জানিয়ে দুই দেশকে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে তার এ আহ্বান সত্যিই কাজে দেবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে। উল্লেখ্য, সন্ত্রাসবাদের নানা ঘটনার পরও ভারত আগে কখনো পানিতে হাত দেয়নি। এবার সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করেছে। ফলে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ডাউনগ্রেডই শুধু হয়নি, জটিল আকার নিয়েছে। অতীতেও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একাধিক যুদ্ধ দেখেছি আমরা। অনেকবার সীমান্তে সংঘাত হয়েছে; কিন্তু ১৯৬০ সালে সম্পাদিত দু’দেশের সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতের মতো চরম সিদ্ধান্ত নিতে কখনো দেখা যায়নি। দিল্লির এমন সিদ্ধান্ত যে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল, তা বলাই বাহুল্য। আমাদের আশঙ্কা, ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগে থাকা দেশগুলোর এমন সিদ্ধান্ত এখানকার অপেক্ষাকৃত নিুাঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের সমীকরণকে আরও জটিল পর্যায়ে নিয়ে যাবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্বজুড়ে সংঘাত বাড়ছে, শত্রুতা ছড়াচ্ছে। এর আঁচ এ অঞ্চলে লাগুক, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কাশ্মীরের যে হত্যাকা-কে ঘিরে এ উত্তেজনা, বলা হচ্ছে, এর পেছনে রয়েছে ভারতের নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার শাখা সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ), যে দলটি পাকিস্তানেও কালো তালিকাভুক্ত। কাজেই একটি জঙ্গিগোষ্ঠীর কর্মকা-কে ঘিরে দুদেশের যুদ্ধের দিকে যাওয়া বিচক্ষণতার পরিচয় নয়। যেহেতু উভয়েই পারমাণবিক ক্ষমতাধর দেশ, তাদের দায়িত্বও তাই বেশি। হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নয়, শান্তি রক্ষার্থে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংঘাত এড়িয়েও যে কূটনৈতিক পন্থায় সমাধানে আসা যায়, দুদেশকে তা বুঝতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রতিবেশী দেশ দুটির চিরকালের বৈরিতার চূড়ান্ত পরিণতি কখনোই এ অঞ্চলের জন্য শুভফল বয়ে আনবে না। বরং তা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ধ্বংস ডেকে আনবে। লঙ্ঘিত হবে এ অঞ্চলের মানুষের শান্তি, নিরাপত্তা ও মৌলিক অধিকার। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। সংলাপের টেবিলে বসে দুদেশ উত্তেজনাকর পরিস্থিতি প্রশমনে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
পূর্ববর্তী পোস্ট
বাংলাদেশ পুনর্গঠনে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস কাতারের প্রধানমন্ত্রীর
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.