নারী নির্যাতন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক

সম্পাদকীয়

একটি দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জন এবং জীবনযাপনের মানোন্নয়নে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশ অনেক দিক থেকেই এগিয়ে যাচ্ছে। নারীরা নিজ যোগ্যতা বলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। তদুপরি এখনো নানা ধরনের সংকট বিদ্যমান। নারী নির্যাতন বন্ধ হয়নি, বন্ধ হয়নি নারীর প্রতি সহিংসতাও। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, এমনটি জানা যাচ্ছে, চলতি বছরের দশ মাসে দেশে তিন হাজারের বেশি নারী ও শিশু নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন- আর এই তথ্য বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, এর আগেও খবরে উঠে এসেছিল যে, নারীর প্রতি যেসব সহিংসতা হয় তার মধ্যে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা বেশি হচ্ছে বলে মনে করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেয়া এবং কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সময়ে দেশে ৬৪৩ জন নারী ও শিশুকে ধর্ষণ, ৪৩১ জনকে হত্যা ও ২৭১ জন রহস্যজনক মৃত্যুর শিকার হয়েছেন। দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০৫ জন এবং ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১২৮ জনকে। মূলত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জরিপ তুলে ধরে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং ধর্ষণসহ যে কোনো ধরনের নারী নির্যাতন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ জরুরি। এটাও অত্যন্ত উদ্বেগের, নারীরা নিজ গৃহে সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ এবং ঝুঁকির মধ্যে থাকে- এমনটিও বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে। মূলত নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার মূল কারণ নারীর প্রতি অধস্তন মনোভাব ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এটাও এর আগে আলোচনায় এসেছিল। সঙ্গত কারণেই সার্বিক বিষয়কে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। নারী নির্যাতন রোধে কঠোর হতে হবে। এটাও লক্ষণীয়, দেশে নানা ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে এলেও নির্যাতন, সহিংসতা বন্ধ হয়নি। ফলে একদিকে আইনের প্রয়োগ অন্যদিকে সমাজের মানসিকতা পরিবর্তন, চিন্তা-চেতনার উন্নয়নেও কাজ করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না- এর আগে পত্রপত্রিকায় এমন বিষয়ও উঠে এসেছিল যে, বাংলাদেশে নারীদের প্রতি তিনজনে দুইজন নিজের ঘরে নির্যাতনের শিকার এবং অধিকাংশই ঘটনাগুলো চেপে যান। আমরা মনে করি, নারী নির্যাতনের চিত্র আমলে নিয়ে এর ভয়াবহতা অনুধাবন করে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যোগী হওয়ার বিকল্প নেই। নারীর বিরুদ্ধে নির্যাতন, সহিংসতার চিত্র পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রতিনিয়ত নারীরা লাঞ্ছিত-নিপীড়িত হচ্ছেন। অথচ দেশকে এগিয়ে নিতে, দেশের সার্বিক সমৃদ্ধি অর্জনে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা বাড়াতে সরকার নানান পদক্ষেপ নিয়েছে। আগের তুলনায় নারী আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন হয়ে গড়ে উঠছেন, নিজের অধিকারটা বুঝতে পারছেন। কিন্তু এতকিছুর পরেও নারী নির্যাতন বন্ধ হয়নি- যা পরিতাপের। আর যখন এটাও এর আগে উঠে এসেছিল, নারীর প্রতি যেসব সহিংসতা হয় তার মধ্যে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা বেশি হচ্ছে- তখন পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা আমলে নেওয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, নারী নির্যাতন কিংবা নারীর প্রতি সহিংসতার মতো যে কোনো ঘটনা ঘটলে তা আমলে নিতে হবে। দোষীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ রোধে কঠোর হতে হবে। নারী নির্যাতনের ভেতর দিয়ে স্পষ্ট হতে পারে, সমাজ ক্রমেই মনুষ্যত্বহীন হয়ে উঠছে। ফলে সমাজ বিনির্মাণের কথাও ভাবা দরকার। আইনের প্রয়োগ ঘটানো ছাড়াও পরিবার থেকে সচেতনতা বাড়াতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More