দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রমের যাত্রা শুরু হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এটির বাস্তবায়ন এখন এক নতুন চ্যালেঞ্জ। কারণ, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিক্ষার সব পর্যায়ের এ-সংক্রান্ত যাবতীয় কাজগুলো সুসম্পন্ন করতে হবে। তবে এরই মধ্যে নতুন শিক্ষাক্রমের এ যাত্রার শুরুতেই শিক্ষাঙ্গনসহ নানা মহলে অভিযুক্ত ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করেই প্রাথমিক স্তরের নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে এবং মাধ্যমিক স্তরে স্বল্প ও ত্রুটিযুক্ত প্রশিক্ষণসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।
একটি দেশের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার উন্নয়ন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি নিয়ে হেলাফেলা করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। কারণ একটা দেশের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাকেই ভবিষ্যৎ সময়ের ভিত্তি ধরা হয়ে থাকে। দেশে সরকারের বিনামূল্যে বই বিতরণ, সারা দেশে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অবকাঠামো উন্নয়ন করতে সমর্থ হলেও শিক্ষার মানকে গুণগত পরিবর্তন করতে পারেনি-এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্নের অবকাশ নেই।
বিশেষ করে মাধ্যমিক স্তরে দেশের শিক্ষার মান অত্যন্ত শোচনীয়। সেই মাধ্যমিক পর্যায়ে যখন নতুন শিক্ষাক্রমের প্রয়োগ শুরু হবে, তখন প্রথম যে কাজটি সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক ছিল সেটা হলো-এ স্তরের শিক্ষকদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। তাদের নতুন এ পদ্ধতির ওপর বিশেষভাবে দক্ষ করে গড়ে তোলা। কেননা এ পদ্ধতির সফলতা ও ব্যর্থতা এ শিক্ষকদের ওপরই নির্ভরশীল। তারাই সরাসরি যুক্ত হবেন এর বাস্তবিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে।
কিন্তু আমরা দেখলাম সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি চিত্র। প্রাথমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের কোনোরকমের প্রশিক্ষণ ছাড়াই পাঠদান শুরু হয়েছে! আর মাধ্যমিক স্তরে দেওয়া হয়েছে মাত্র পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ। সেখানেও অধিকাংশ শিক্ষকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারেনি দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থাৎ এমন একটি মহাগুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের কাজ শুরুই হয়েছে দায়সারাভাবে; যা দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ ও দুঃখজনক। এমন ঘটনা নিঃসন্দেহে একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও কর্তব্যবোধহীনতারই পরিচায়ক। সংশ্লিষ্টরা এর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। নতুন এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। কিন্তু শিক্ষকদের একটি বড় অংশ এখনো রয়ে গেছেন প্রশিক্ষণের বাইরে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের জন্য আমাদের ভালো পরিকল্পনা দেখা যাচ্ছে না। খুব তাড়াহুড়া করা হচ্ছে। কারিকুলাম বাস্তবায়নে আমাদের বরাদ্দ কম। তারা আরও বলছেন, অনেক সময় মাস্টার ট্রেইনাররাই প্রশিক্ষণগুলো ভালো করে রপ্ত করতে পারেন না। আবার মাস্টার ট্রেইনার প্রস্তুত প্রক্রিয়াও ছোট। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই তারা নিজেদের মতো করে বুঝিয়ে দিয়ে আসেন। আবার প্রশিক্ষণের সময় কম।
আমরা মনে করি, পর্যাপ্ত সময় থাকতেও শিক্ষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের প্রস্তুত না করেই তাড়াহুড়ো করে এমন একটা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের যাত্রা শুরু করা কোনোক্রমেই উচিত হয়নি। এবং এ কাজের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি নতুন কারিকুলামে শিক্ষকদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।