মানুষের আয় না বাড়লেও নিত্যপণ্য ও সেবার দাম বেড়েই চলেছে। স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষ এখন কতোটা চাপে আছে; তা ওএমএসের খাদ্য ক্রয়ের ভিড় থেকেই স্পষ্ট। বিদ্যুৎ, গ্যাস, যাতায়াত ভাড়া-এসব খরচ বেড়ে যাওয়ায় বহু মানুষ এখন ভোগ ও অন্যান্য ব্যয় কমাতে বাধ্য হচ্ছে। খাবারের খরচ কমানোর ফলে বাড়ছে পুষ্টিহীনতা। এর প্রভাবে মানুষের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকার তাগিদে অনেকে বাধ্য হয়ে শহর ছেড়ে গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে; কেউবা পরিবার-পরিজন গ্রামে পাঠিয়ে নিজে শহরে একা থাকছে।
বাজারে চালের দাম বাড়ায় বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ওএমএসের চাল কিনতে আসছে। চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ওএমএসের ট্রাকের সামনে বিশৃঙ্খলা বাড়ছে। চাল শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই যাতে কিনতে পারে, সেজন্য অনেকে নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগেই লাইনে অপেক্ষা করতে থাকে। বিশৃঙ্খলা বাড়ার কারণে ওএমএসের চাল কিনতে এসে বিড়ম্বনায় পড়ছেন বেশি বয়সি মানুষ। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর কোনো কোনো ক্রেতাকে খালি হাতেও ফিরে যেতে হচ্ছে।
নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পালন করলেও ভোক্তাদের দুর্ভোগের অবসান হচ্ছে না। অভিযোগ আছে, বাজার তদারকি সংস্থার কোনো কোনো অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীদের যোগসাজশ রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে কোনো অনিয়ম পেলে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মনে করি আমরা। প্রশ্ন হলো, এসব যাদের দেখার কথা, তারা কী করছেন? বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর তৎপরতা একেবারেই দৃশ্যমান নয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাজার তদারকি জোরদার করার পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা ও পরিধি বাড়াতে হবে।
প্রতিবছর রমজান মাস শুরু হওয়ার কয়েক মাস আগেই বাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যায়। এবারও একই ধরনের তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অসাধু সিন্ডিকেট সম্প্রতি ধাপে ধাপে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে চলেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। সরকারের পক্ষ থেকে ভোক্তাদের স্বস্তির বিষয়ে নানারকম আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে ভোক্তারা এসবের সুফল পায় না। বর্তমানে পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, দরিদ্র মানুষ সময়মতো ঋণও পাচ্ছে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে যাতে ভোক্তারা এর সুফল পায়। গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন দেশে খাদ্যপণ্য উৎপাদনে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্যপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার অস্থির রয়েছে। এমন অবস্থায় খাদ্যপণ্যে আমদানিনির্ভরতা কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। দুঃখজনক হলো, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রোধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। লক্ষ্য করা গেছে, ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলে সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করে। এতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। যেহেতু সব ধরনের নিত্যপণ্যে আমদানিনির্ভরতা কাটানো কঠিন, সেহেতু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।