বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে দেশজুড়ে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে। এতে অসহ্য গরমে মানুষকে দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে ঢাকা, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। শিল্প মালিকরা বলছেন, একবার কারখানা বন্ধ হলে পুরো কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যায়। নতুন করে কারখানা চালু করতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে। এ অবস্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে দিনের অধিকাংশ সময় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সময়মতো বিদেশে পণ্য পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রপ্তানি অর্ডার বাতিলের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে ২২ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি।
এর মধ্যে জ্বালানির অভাবে প্রায় ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এছাড়া যান্ত্রিক ত্রুটি ও রক্ষণাবেক্ষণে থাকায় আরও প্রায় ৩০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উপাদন করা যাচ্ছে না। অতীতে আমরা লক্ষ্য করেছি, কর্তৃপক্ষ লোডশেডিং বিষয়ক যে ঘোষণা দিয়েছিল, বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে এর মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। এবার যাতে এমন না ঘটে তা নিশ্চিত করতে হবে।
বস্তুত জ্বালানি খাতে আমদানিনির্ভরতার কারণেই এখন বিদ্যুৎ খাতে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জ্বালানি খাতে সরকারের অদূরদর্শিতার কারণে এ বিষয়ক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। জ্বালানি খাতে আমদানিনির্ভরতা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। গত প্রায় এক বছর স্পট মার্কেটে এলএনজির দামে যে ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করেছে, তা থেকে শিক্ষা নেয়া জরুরি। এশিয়ার স্পট মার্কেটে এখন এলএনজির মূল্য নিম্নমুখী।
গত ২২ মাসের মধ্যে দাম সবচেয়ে কম হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে এলএনজি আমদানি করা হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। এর কারণ ডলার সংকট। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে।
দেশের স্থলভাগ এবং সমুদ্রে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও গ্যাস উত্তোলনে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে দুর্নীতি ও অপচয় রোধ করা গেলে দেশবাসী ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে। বিদ্যুৎ খাতে ‘সিস্টেম লস’-এর নামে যেসব দুর্নীতিবাজ মোটাতাজা হচ্ছে, তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অতীতে সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের আধুনিকায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। দেশে এখনো বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি হিসাবে গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে। কাজেই দেশীয় উৎসগুলো থেকে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।