ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম ১২ কেজির সিলিন্ডারে একলাফে ২৬৬ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গত জানুয়ারিতে যে সিলিন্ডারের দাম ছিলো এক হাজার ২৩২ টাকা, তা এখন হয়েছে এক হাজার ৪৯৮ টাকা। বাসা-বাড়িতে রান্নার জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার্য এ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে গাড়িতে ব্যবহার্য এলপিজির (অটো গ্যাস) দামও। এক্ষেত্রে লিটার প্রতি প্রায় ১৩ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৭০ টাকা।
উল্লেখ্য, আগে লিটার প্রতি এর দাম ছিলো ৫৭ টাকার কিছু বেশি। এক মাসের ব্যবধানে গ্রাহক পর্যায়ে দুবার বিদ্যুতের দাম এবং একবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর সঙ্গে এবার যুক্ত হলো এলপিজির মূল্যবৃদ্ধি। স্বভাবতই দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা ভোক্তাদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ আরও গভীর হয়েছে এলপিজির বড় ধরনের মূল্যবৃদ্ধিতে। দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ রান্নার জ্বালানি হিসেবে এলপিজি ব্যবহার করেন। এ ভোক্তাদের এখন বইতে হবে বাড়তি খরচের চাপ। শুধু তা-ই নয়, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পণ্য ও সেবারও দাম বাড়বে। অন্যদিকে গত বছর আগস্টে জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির পর বহু তেলচালিত গাড়ির মালিক তাদের গাড়ির জ্বালানি ব্যবস্থা এলপিজিতে রূপান্তর করেছেন; তাদেরও এখন বইতে হবে বাড়তি খরচ। প্রশ্ন হলো, মধ্যবিত্ত যাবে কোথায়? আমরা মনে করি, সাধারণ মানুষের ব্যবহার্য এলপিজির দাম একলাফে এতো বেশি বাড়ানো অযৌক্তিক। জীবনযাত্রার সবকিছুর দাম বৃদ্ধির ফলে মানুষের খরচের বোঝা কেবলই বাড়ছে, অথচ বাড়ছে না সেই অনুপাতে আয়। ফলে মানুষকে অত্যাবশ্যকীয় খাতে ব্যয় কমিয়ে দিতে হচ্ছে। এতে ঘটছে জীবনমানের অবনতি। বস্তুত মূল্যস্ফীতি ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনধারণ করাটা বর্তমানে দুরূহ হয়ে পড়েছে। অনেকে সঞ্চয়ের শেষ ‘কড়িটি’ পর্যন্ত খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ পরিস্থিতি অনুধাবন করা উচিত সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অনেক অপচয় ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অযৌক্তিক ব্যয় সমন্বয় না করে বারবার জ্বালানির দাম বৃদ্ধি গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন প্রতি মাসে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে থাকে। তাই আমরা আশা করবো, অচিরেই এর দাম যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে। ঘনঘন গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে সংশ্লিষ্টরা দুর্নীতি ও অপচয় রোধে দৃষ্টি দেবেন, এটাই কাম্য।