‘বস্তুনিষ্ঠতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ শুধু স্লোগান নয়, প্রতিটি পদক্ষেপই তার প্রতিফলন ঘটানোর প্রাণান্ত চেষ্টা যে পরিবারের, তার নাম দৈনিক মাথাভাঙ্গা। ১৯৯১ সালের ১০ জুন, আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় পথচলা। বহু চড়াই উৎরাই, ঘেরাটোপ পেরিয়ে প্রকাশনার আজ আড়াই যুগ। ২৯ পেরিয়ে প্রকাশনার ৩০ বছর। এতোদিনের বিরামহীন পথচলা পরিবারের যেদিনটি ছিলো সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মেতে ওঠার, সেইদিনে নোভেল করোনা ভাইরাস করে রেখেছে জড়োসড়ো। বিশ্ববাসী গুণছে যখন অনিশ্চয়তা প্রহর, তখন কি বর্ষবরণের বর্ণিল সাজ মানায়? দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের সব আয়োজন হৃদয়ে রেখেই সকলের প্রতি সবিনয় আবেদন, যেভাবে মাথাভাঙ্গার পথকে সুগম করেছেন সকলে সেভাবেই সাথে থাকুন। নতুন কাঁটাযুক্ত বিষকে বিগত দিনের সন্ত্রাসদমনের মতো পরাজিত করবোই। তখন না হয় হবে সৃষ্টিসুখের উল্লাস।
চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ কুষ্টিয়ার একাংশের অসংখ্য পাঠকের অকৃপণ ভালোবাসায় দৈনিক মাথাভাঙ্গা শুধু আঞ্চলিক সংবাদপত্র হিসেবেই স্বীকৃতি পায়নি, তথ্যপ্রযুুক্তির বদৌলতে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বেও, সকল প্রান্তে। যদিও প্রতিষ্ঠালগ্নে এতোটা আশা করা ছিলো অবান্তর। বৃহত্তর অঞ্চল থেকে যখন সাপ্তাহিক-পাক্ষিকই ঠিকমত প্রকাশ পেতো না, তখন দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করাটা ছিলো দুঃসাহসই বটে। ৪ যুবক সেদিন চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের আঙিনায় বসে অনেকটা অসাধ্যকে সাধ্য করার যুদ্ধে নামার সাহস করেছিলো বলেই দৈনিক মাথাভাঙ্গা আজ আড়াই যুগে। ১৯৯১ সালের ২৬ মার্চ প্রস্তাবিত সংখ্যা প্রকাশিত হয়। প্রকাশক, মালিক, মুদ্রাকর সরদার আল আমিনের বাড়তি উদ্যোগে আলী কদর পলাশ, রিচার্ড রহমান ও পাঞ্জুর প্রেরণায় প্রকাশিত সেদিনের প্রস্তাবিত সংখ্যায় শ্রম দিয়েছিলেন অদম্য অনেকে। তালিকা বেশ লম্বা। এদের মধ্যে হামিদুল হক মুন্সী, মানিক আকবরের নাম উঠে আসে অগ্রভাগে। অবশ্য পত্রিকা প্রকাশের ছাড়পত্র পাওয়া এবং আনুষ্ঠানিক যাত্রায় সকলকে ছাপিয়ে যাওয়া যোদ্ধা সাইফুল ইসলাম পিনু রয়েছেন পরিবারটির অস্থি মজ্জায়। তিনি দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর সম্পাদনার পর প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রয়াত হলেও প্রধান সম্পাদক পদটি এখনও তারই। তিনি ও তার পতœী মমতাজ গত হয়েছেন কয়েক বছর আগে। মাথাভাঙ্গা পরিবারের সহযোদ্ধাদের মধ্যে যারা গত হয়েছেন আজকের এই বিশেষ দিনে তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা। যারা দূরে রয়েছেন তাদের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা।
দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকা প্রকাশের শুরুতেই অঙ্গীকার ছিলো স্বাধীনতার চেতনা লালনসহ কুসংস্কার, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত সুন্দর সমাজ গড়া। সেই উদ্দেশ্য থেকে এতোদিনের পথচলায় ন্যূনতম যেমন টলেনি, তেমনই বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের প্রতিশ্রুতি রক্ষাতেও ন্যূনতম কার্পণ্য করেনি। বৃহত্তর কুষ্টিয়া জনপদ যখন রক্তাক্ত হয়ে ওঠে, সন্ত্রাস কবলিত হওয়ার কালি পড়ে তখন দৈনিক মাথাভাঙ্গা পরিবার শক্ত হাতে ধরেছে কলম। যখন যেখানেই কুসংস্কারকে পুঁজি করে কল্পিত গল্পের ফাঁদে মানুষ ঠকানোর দোকান গজেছে তখনই সেখানে হানা দিয়েছে মাথাভাঙ্গার কলম সৈনিকেরা। গুজব? হুজুগে মেতে ওঠা সমাজে মাথাভাঙ্গা পরিবার সব সময়ই সজাগ থেকেছে, সচেতনতার আলো ছড়ানোর চেষ্টায় কমতি রাখেনি। কমতি নেইও। এরপরও কতটা পেরেছে, কতটা পারা যেতো তার বিচার অবশ্যই পাঠককূলের। পাঠক শুভানুধ্যায়ীরাই দৈনিক মাথাভাঙ্গার পাথেয়। অবশ্য দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মাঝে যখন এক খিলি পানের দাম ৫ টাকা, এক কাপ চায়ের দাম তার প্রায় দ্বিগুন, তখনও দৈনিক মাথাভাঙ্গা নামমাত্র মূল্যে প্রতিদিন সকালে পাঠককূলের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন সহযোদ্ধারা। করোনার মধ্যেও সে চেষ্টায় ঘাটতি নেই। পাঠকদের কাঠগড়ায় প্রতিদিনের রায় পক্ষে নেয়ার চেষ্টায় কলমযোদ্ধাদের যুদ্ধও যেন প্রতিক্ষণ। মুদ্রণ বিন্যাস, সাজসজ্জা, ছাপাসহ বিজ্ঞাপন বিভাগের যে যেখানে রয়েছেন তাদের বিরামহীন প্রচেষ্টার প্রেরণাও অপনারা। পাঠকপ্রিয়তা অর্জনে সচেষ্ট যতটা তার চেয়ে ঢের বেশি মাথাভাঙ্গার পাঠককূলের ভালোবাসা। ওই ভালোবাসাই মাথাভাঙ্গা পরিবারকে করেছে কর্তব্যপরায়ণ।
মাথাভাঙ্গা পরিবার সুন্দর সমাজের স্বপ্ন দেখে। নোভেল করোনা ভাইরাস শ্বাসরুদ্ধ করে তুলেছে। এ সংকট অবশ্যই সাময়িক। বাঘাবাঘা সন্ত্রাসী যখন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে তখনও মাথাভাঙ্গা পরিবার তাদের পতন অনিবার্য করার যুদ্ধে পিছুপা হয়নি। করোনা নিতান্তই সাময়িক। দুর্নীতিগ্রস্ততা, কুসংস্কারাচ্ছন্নতাও দূর হবে একদিন। এজন্য অবশ্যই সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে ভালোমানুষগুলোকে সোচ্চার হতে হবে। মাথাভাঙ্গা পরিবার এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে বলেই, কোনো বিশেষ বলয়ে আবদ্ধ নয়। তাবেদারি? নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের পক্ষে থেকে ন্যায় প্রতিষ্ঠা যে পরিবারের অঙ্গীকার, সেই পরিবাররের কি ওটা মানায়? পাঠকরাই আমাদের শেখায়, সাহস জোগায়। দৈনিক মাথাভাঙ্গা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিশেষ দিনে শুভানুধ্যায়ী, বিজ্ঞাপনদাতাসহ সকল পাঠককে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ভালোবাসা।
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ