মাথাভাঙ্গা মনিটর: সিরিয়া ও ইরাকের ৮৫ ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার রাতে এই হামলায় বিভিন্ন ধরনের মার্কিন যুদ্ধবিমান অংশ নেয়। যার মধ্যে দূর পালস্নার বি-ওয়ান বোমারু বিমানও ছিলো। যেসব লক্ষ্যবস্তুতে হামলা হয়েছে তার মধ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র, সামরিক রসদভান্ডার এবং ড্রোন স্টোরেজ ইউনিটও ছিলো। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে এসব হামলাকে সফল হিসেবে দাবি করা হয়েছে। এই হামলায় ৩০ মিনিট সময় লেগেছে বলে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। শুক্রবার এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘আজ থেকে আমাদের জবাব দেয়া শুরু হয়েছে। এটি এখন আমাদের পছন্দমতো বিভিন্ন সময় ও স্থানে অব্যাহত থাকবে।’ তবে মার্কিন বাহিনীর এসব হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে ৪০ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন দেয়ার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলার পরিমাণও অনেক বেড়েছে। ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথি লোহিত সাগরে বিভিন্ন জাহাজের হামলা চালানো শুরু করে। তারা মার্কিন জাহাজ ও ব্রিটিশ জাহাজে হামলা চালানোরও দাবি করেছে। এর জবাবে ইয়েমেনে যৌথ হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এর মধ্যে গত ২৮ জানুয়ারি জর্ডানে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলায় তিনজন মার্কিন সেনা নিহত ও ৪০ জন আহত হয়। এই হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও ইরান তা প্রত্যাখ্যান করে। এরপর গত বৃহস্পতিবার ইরাক ও সিরিয়া ইরানি স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনার অনুমোদন দেয় বাইডেন প্রশাসন, শেষমেশ শুক্রবার রাতে তা কার্যকর করে দেশটি। অন্যদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি শুক্রবার বলেছেন, ইরান যুদ্ধ শুরু করতে চায় না তবে কেউ আঘাত করলে এর কঠোর জবাব দেয়া হবে। তাই ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানি স্থাপনায় মার্কিন এ হামলায় মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ঝনঝনানি আরও বাড়লো। এই হামলার পর মার্কিন সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাতটি স্থানে ৮৫টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে একযোগে হামলা চালানো হয়েছে। ইরাকে তিনটি ও সিরিয়ায় চারটি স্থানে এসব হামলা চালানো হয়েছে। এ ছাড়া লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে ছিল সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র, সামরিক রসদভান্ডার এবং ড্রোন স্টোরেজ ইউনিট। লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে সিরিয়া ও ইরাকে থাকা আইআরজিসির এলিট বাহিনী কুদস ফোর্সের স্থাপনা। ইরাক থেকে লেবানন, সিরিয়া থেকে ইয়েমেন মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে কুদস ফোর্সের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রভাব বাড়িয়েছে কুদস ফোর্স। এখন কেন ইরাক-সিরিয়ায় হামলা চালাল যুক্তরাষ্ট্র, এমন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ডগলাস সিমস। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে আবহাওয়া অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক ছিল। তিনি জানান, কয়েক দিন ধরে মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে বিমান হামলা চালানো কঠিন ছিল। শুক্রবার পরিস্থিতি বদলে যায়। এদিকে নিজেদের ভূখন্ডে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা চালানোকে ‘আমেরিকান আগ্রাসন’ বলেছে সিরিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, সিরিয়া-ইরাক সীমান্ত এলাকায় মরুভূমিতে হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় কয়েকজন হতাহত হওয়ার খবর জানানো হয়েছে। কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইরাকের সামরিক বাহিনীও। হামলার জেরে সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন ইরাকের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহইয়া রসুল। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সীমান্ত এলাকায় হামলার ফলে বাগদাদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দিতে পারে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ইরাককে জানিয়েই দেশটির বিভিন্ন স্থানে হামলা চালানো হয়েছে। এদিকে বিবিসি লিখেছে, শুক্রবার রাতে যেসব স্থানে হামলা চালানো হয়েছে সম্ভবত সেগুলোর অধিকাংশ আগেই খালি করে ফেলা হয়েছিল, কিন্তু তারপরও শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর সদস্যরা হতাহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে- আর এটি নিয়ে বাগদাদ উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। মার্কিন হামলার প্রতিক্রিয়ায় এই গোষ্ঠীগুলো ইরাক ও সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোতে আরও হামলা চালাতে পারে, এতে বাগদাদ সরকারের ওপর চাপ বৃদ্ধি পাবে। এ ধরনের হামলা ইতোমধ্যে তেহরান ও ওয়াশিংটনের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। ইরাকি এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, গত কয়েকদিন ধরে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল সুদানি ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টায় ‘ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছেন’। পাশাপাশি তিনি ইরাকের কোনো স্থানে হামলা চালানো থেকে বিরত থাকতে ওয়াশিংটনকে অনুরোধ করে বেশ কয়েকটি বার্তা পাঠিয়েছেন। আমেরিকানদের তিনি জানিয়েছিলেন, জর্ডানে মার্কিন ঘাঁটিতে সিরিয়া থেকে হামলা চালানো হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র থেকে জবাব এসেছে, ‘দুর্ভাগ্যবশত, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে খারাপ বিকল্পগুলোর মধ্যে ইরাকের অবস্থানগুলো হলো সবচেয়ে সেরা সম্ভাব্য বিকল্প।’ সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর থেকে ইরাক যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের ক্ষমতা প্রদর্শনের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে, আবারও বাগদাদ নিজেকে একই পরিস্থিতিতে দেখতে পেল। শেষ পর্যন্ত সরাসরি প্রতিশোধমূলক হামলা থেকে ইরান ছাড় পেয়ে গেল কিন্তু মূল্য দিতে হলো ইরাককে। মার্কিন সেনেটের আর্মড সার্ভিসেস কমিটির চেয়ারম্যান ডেমোক্র্যাট জ্যাক রিড বলেছেন, ‘সিরিয়া ও ইরাকে ইরানের ছায়া বাহিনীগুলো ওপর উল্লেখযোগ্য আঘাত হানা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াদের বোঝা উচিত, তাদেরও জবাবদিহি করতে হবে। ‘বিজ্ঞ কূটনীতির সঙ্গে মিলিতভাবে এসব হামলা একটি পরিষ্কার ইঙ্গিত দেবে যে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সেনা ও স্বার্থ সুরক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া অব্যাহত রাখবে।’ মার্কিন সেনেটের ওই একই কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য রিপাবলিকান সেনেটর রজার উইকার বলেছেন, ‘এই সামরিক হামলাগুলোকে স্বাগত জানাই, কিন্তু তিন মার্কিন সেনার মৃত্যু ও প্রায় ৫০ জন আহত হওয়ার পর এটি অনেক দেরিতে ঘটলো। ইরান ও এর ছায়া বাহিনীগুলো ১৬৫ বার আমেরিকান সেনাদের হত্যার চেষ্টা করছে ও আমাদের যুদ্ধজাহাজগুলো ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, তখন বাইডেন প্রশাসন ন্যূনতম প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য নিজেদের অভিনন্দন জানাচ্ছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.