ভর্তি রোগীর সিংহভাগই শিশু : জায়গা না পেয়ে বারান্দা ও সিড়িতেই চিকিৎসা
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় তীব্র শিতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। এতে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। আর এই শীতে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। এর মধ্যে রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। কিছুদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। একইসাথে বেড়েছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও। অতিরিক্ত ঠান্ডায় রোটা ভাইরাসের কারণে শিশুরা বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি সব বয়সের নারী-পুরুষও আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যার বিপরীতে শুক্রবার ভর্তি ছিলো ৫০ জন রোগী। বৃহস্পতিবার নতুন করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ জন। শুক্রবারও ভর্তি হয়েছেন শিশুসহ আরও ২৪ জন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সূত্রে জানা যায়, প্রদিনিই বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। এছাড়াও প্রতিদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১০০-১৫০ ডায়রিয়া রোগী। সর্বশেষ গতকালই শিশুসহ ২৪ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। গত ১ সপ্তাহে রোটা ভাইরাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুসহ ১৭১ জন ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি রোগীর মধ্যে ৮০ শতাংশই শিশু। গতকাল রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, দু’টি কক্ষ নিয়ে ডায়রিয়া ওয়ার্ড। দু’টি কক্ষ সবসময় রোগীতে পরিপূর্ণ থাকে। ডাইরিয়া আক্রান্ত রোগীর জন্য কোনো বেড বা বিছানা বরাদ্দ না থাকায় এই শীতে মেঝেতেই শিশু রোগীদের থাকতে হচ্ছে। বাইরের বারান্দা ও সিড়িতে রোগীদের চিকিৎসা চলছে। তিল পরিমাণ ঠাঁই নেই। সব মিলিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মাহমুদা খানম নামে একজন বলেন, তীব্র শীতে হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কোন জায়গা নাই। আজ দুদিন যাবত সিড়ির উপরেই আমার ৭ বছরের বাচ্চার চিকিৎসা চলছে। শীতে জরাজীর্ণ হতে হচ্ছে আমাদের। বিল্লাল হোসেন নামে এক বৃদ্ধ রোগী বলেন, তিনদিন যাবত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। গতকাল সকালে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। ওয়ার্ডে কোন জায়গা নেই। এই শীতে বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দায়িত্বরত নার্সরা জানান, শীতের তীব্রতা বাড়ায় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন বলেন, বৈরি আবহাওয়ার কারণে শিশুরা বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এজন্য শিশুর পরিবারকে সচেতন হতে হবে। আর ডায়রিয়া হলে দ্রুত সময়ে হাসপাতালে নিতে পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক। তিনি আরও বলেন, আমাদের চারপাশে বিভিন্ন ধরনের রোগের জীবাণু এবং ভাইরাস বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যা সংক্রমিত বা ইনফেকটেড হলে আমরা এবং শিশুরা রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ি। রোটা ভাইরাস হচ্ছে, রিওভাইরাইড পরিবারের একটি ভাইরাস। রোটা ভাইরাস প্রতিরোধে মায়ের দুধ কার্যকর। যেসব শিশু ছয়মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খায়, তাদের ঝুঁকি অনেক কম থাকে। আর ডায়রিয়া হলে শিশুর স্বাভাবিক খাবার বন্ধ করা যাবে না। এর ফলে শিশু আরও বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ঝুঁকিতে থাকে।
কিভাবে আক্রান্ত হয়: রোটা ভাইরাস মল ও মুখ গহ্বর দিয়ে খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে। এই ভাইরাস আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে এবং একজনের কাছ থেকে অন্যজনের দেহে প্রবেশ করে। সংক্রমিত পানি, খাবার এবং খেলনা বিভিন্ন আসবাবপত্র থেকেও আক্রান্ত হতে পারে। ইনফিউবেশন প্রিয়ড ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা অর্থাৎ রোটা ভাইরাস এ সংক্রমণ হওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। এ রোগের লক্ষণ হলো- প্রথমে শুরু হবে বমি এরপর ধীরে ধীরে পানির মত পাতলা পায়খানা। খুব কম সময়ের মধ্যে ডায়রিয়া তীব্র আকার ধারণ করে এবং পানি শূন্যতা এত বেশি হয় যা জীবন-মরণ সমস্যা দেখা দেয়। পানিশূন্যতা এত বেশি হয় যা মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে যদি, ঠিকমত বা সময়মত চিকিৎসা করা না হয়। এছাড়া জ্বর এবং পেটের ব্যাথাও থাকতে পারে। বমি এবং জ্বর ৯দিন পর্যন্ত থাকতে পারে এবং ডায়রিয়া থাকবে ২১ দিন পর্যন্ত।
এ রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে তিনি বলেন, পানিশূন্যতা পূরণ করার জন্য ঘন ঘন খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। পানিশূন্যতা বেশি হলে হাসপাতালে বা ক্লিনিকে ভর্তি করে স্যালাইন দিয়ে পানিশূন্যতা পূরণ করতে হবে। ইলেকট্রলাইট বা রক্তে খনিজ লবণ কমে গেলে তা পূরণ করতে হবে। কোন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন খাবার খেতে হবে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাচ্চাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, যতটুকু পারা যায়।
রোটা ভাইরাসের টিকা দিতে হবে ১ (১,২) মাস থেকে ৬ মাসের মধ্যে। এই টিকা মুখে খাওয়ানো হয়। প্রথম ডোজ দেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ ১ মাস পর দিতে হয়। এই টিকা দিলে রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া হবে না। শিশু ডায়রিয়ার কারণে মৃত্যু থেকে রক্ষা পাবে এবং পেটে ক্ষুদ্রাতন্ত্রের অবস্ট্রাকশন অর্র্ভললডর্ণধমভ থেকে মুক্ত থাকবে। যা শিশুদের জীবন হুমকির মুখে পতিত হয়। সুতরাং সোনামণিদের জীবন রক্ষার্থে তাদের পরিচর্যা করতে হবে। রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে সময়মত টিকা দিয়ে ডায়রিয়া থেকে রক্ষা করা যাবে। এ কারণে শিশু কি খাচ্ছে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। কিছু ধরার পরে মুখে আঙুল দিচ্ছে কিনা সেটি খেয়াল রাখতে হবে। আর বাইরে থেকে কেনা খাবার যেন অবশ্যই বিশুদ্ধ করে খাওয়ানো হয়।
তিনি আরও জানান, রোটা ভাইরাস প্রতিরোধে মায়ের দুধ কার্যকর। যেসব শিশু ছয়মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খায়, তাদের ঝুঁকি অনেক কম থাকে। আর ডায়রিয়া হলে শিশুর স্বাভাবিক খাবার বন্ধ করা যাবে না। এর ফলে শিশু আরও বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ঝুঁকিতে থাকে।
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ