ঈদ শেষে এবার ঢাকামুখী মানুষের স্রোত

করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত চলমান কঠোর বিধি-নিষেধে শিথিলতা আজ বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) শেষ হচ্ছে। ‘বিধি-নিষেধে শিথিলতা আর বাড়ানো হচ্ছে না এবং আগামীকাল শুক্রবার (২৩ জুলাই) আবারো শুরু হচ্ছে ১৪ দিনের ফের কঠোর বিধি-নিষেধ’- গতকাল বুধবার রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেনের এমন ঘোষণার পর ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছে কর্মজীবীরা। আজ বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) বাংলাবাজার-শিমুলিয়া ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে স্রোত নেমেছে রাজধানীর কর্মজীবী মানুষের। তাঁদের ভাষ্য, আগামীকাল ফের ১৪ দিনের ফের কঠোর বিধি-নিষেধ শুরু হলে তাঁরা আর কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন না। এজন্য তাঁদেরকে গণপরিবহনে ভাড়াও গুনতে হচ্ছে বেশি। ফলে নৌঘাটগুলোতে এখন উপচে পড়া ভিড়। নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাইও। বাংলাবাজার-শিমুলিয়ায় দেখা যায়, ভোর থেকেই নৌপথে ঢাকামুখী যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ভিড় আরো বাড়ছে। এদিকে, সকাল থেকেই প্রখর রোদে যাত্রীরা হেঁটে ঘাটে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। যাত্রীর চাপ সামাল দিতে ঘাট এলাকায় পুলিশ, নৌপুলিশ ও বিআইডাব্লিউটিসিকে হিমশিম খেতে দেখা যায়। কোথাও দেখা যায়নি স্বাস্থ্যবিধি মানার লক্ষণ। যাত্রীদের সঙ্গে কথা হলে অনেকে বলেন, প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে গিয়েছিলেন তাঁরা। মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে আবার ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে। অনেক দিন পর গিয়ে দুই দিনেই ফিরে আসা কষ্টদায়ক। বাড়িতে যেতে না যেতেই ফেরার সময় হয়ে যায়। তাই ঈদের আনন্দ থাকলেও কিছুটা খারাপও লাগছে। বিআইডাব্লিউটিসি সূত্র জানায়, ঢাকামুখী মানুষের চাপ সামলাতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ৩৩টি লঞ্চ ও ১৯ ফেরি চালু রাখা হয়েছে। ঘাট ব্যবস্থাপক মো. সালাম মিয়া জানান, ঈদে শেষ কর্মস্থল ফেরা মানুষের যত চাপই হোক বিআইডাব্লিউটিসি প্রস্তত রয়েছে। সবগুলো ফেরি সার্ভিসে নিয়োজিত। ঈদে সেবা দেয়ার জন্য কাউকে ছুটি দেয়া হয়নি। আমরা সর্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছি। সারা দেশে করোনার সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত ১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। এ বিধিনিষেধ ছিল ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত। পরে বিধিনিষেধের মেয়াদ আরো ৭ দিন অর্থাৎ ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে বিধিনিষেধেও বিশেষ ব্যবস্থায় রপ্তানিমুখী পোশাক ও শিল্প কারখানা খোলা ছিল। এরপর ঈদুল আজহার কারণে ১৫ জুলাই থেকে লকডাউন শিথিল করা হয়। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ঈদের ছুটি শেষে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত আবারো কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এই সময় সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত মানতে হবে যেসব বিধিনিষেধ:
১. সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। ২. সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। ৩. শপিংমল/মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে। ৪. সব পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। ৫. সব ধরনের শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকবে। ৬. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক [বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান (ওয়ালিমা), জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি] ৭. রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ৮ দিন শিথিল, ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফের কঠোর বিধিনিষেধ ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট মানতে হবে যেসব বিধিনিষেধ ৭. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। ৮. ব্যাংকিং/বিমা/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। ৯. সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং দাফতরিক কাজ ভার্চুয়ালি (ই-নথি, ই-মেইল, এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য মাধ্যম) সম্পন্ন করবেন। ১০. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন-কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন/বিক্রয়, ত্রাপ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রম, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম, সিটি করপোরেশন/পৌরসভা (পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়কের বাতি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কার্যক্রম), সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ফার্মেসি ও ফার্সাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More