হাসিনা ও রেহেনাসহ পরিবারের সদস্যদের ১২৪ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
সুধা সদনসহ ৫৮৭ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ : দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
স্টাফ রিপোর্টার: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও তাদের সন্তান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল জাদুঘর, সূচনা ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচন তহবিল, আওয়ামী লীগের সেন্টার অব রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনসহ (সিআরআই) তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান মিলে মোট প্রায় ৫৮৭ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ এবং বাড়ি ও জমি ক্রোকের আবেদন করেন। আবেদন মঞ্জুর করে বিচারক মো. জাকির হোসেন ব্যাংক হিসাবগুলো অবরুদ্ধ ও সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেন। অবরুদ্ধে আদেশ দেয়া মোট ১২৪টি ব্যাংক হিসাবে রয়েছে ৫৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে শেখ হাসিনার নামে ১৩টি ব্যাংক হিসাবে রয়েছে ৭৫ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯৩ টাকা, আর শেখ রেহানার তিনটি ব্যাংক হিসাবে জমা রয়েছে ৮১ লাখ ৫ হাজার ৬৩২ টাকা। তাদের দুজনের চারটি যৌথ ব্যাংক হিসাবে রয়েছে মোট ২ কোটি ৭২ লাখ ১৪ হাজার টাকা। তবে অধিকাংশ টাকা রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল জাদুঘর, সূচনা ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচন তহবিল, আওয়ামী লীগের সেন্টার অব রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)-এর ব্যাংক হিসাবগুলোতে। এছাড়া সুধা সদনসহ ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বাড়ি ও জমি ক্রোক করা হয়েছে। দুদকের আবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন ব্যাংকে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল জাদুঘর, সূচনা ফাউন্ডেশন, আবু সিদ্দিক মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, শফিক আহমেদ সিদ্দিক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচন তহবিল, আওয়ামী লীগের সেন্টার অব রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নামে ১২৪টি ব্যাংক হিসাবে ৫৭৮ কোটি টাকা রয়েছে, যা অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। দুদক বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছে, এসব ব্যাংক হিসাবে রাখা অর্থ যে কোনো মুহূর্তে তারা হস্তান্তর/স্থানান্তর করতে পারেন। এক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ এবং দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে এগুলো অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন। জমি ও ফ্ল্যাট সম্পর্কে দুদকের আবেদনে দেখা যায়, সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ১৬ কাঠা জমিসহ সুধা সদন নামে যেই ভবন, যার পরিচিত মূল্য ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা, টিউলিপ সিদ্দিকের নামে গুলশানের ৭১ নম্বর রোডের ইস্টার্ন হারমনি ভবনের একটি ফ্ল্যাট, যার মূল্য ৪৩ লাখ ২৪ হাজার ৯২০ টাকা, শেখ রেহানার নামে গাজীপুরের কালিয়াকৈর মৌজায় ১০ শতাংশের দুটি জমি, যার মূল্য ১১ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং সেগুনবাগিচার ইস্টার্ন বেলার একটি ফ্ল্যাট, যার মূল্য ১৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০০ টাকা এবং শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট, যার মোট মূল্য ৪ কোটি ৮২ লাখ ১০ হাজার টাকা ক্রোক করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের স্থাবর সম্পত্তি দেখাশোনার জন্য প্রশাসক (রিসিভার) নিয়োগের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এ আদেশ দেন। আবেদনে জয় ও পুতুলের মালিকানাধীন ধানমন্ডির সুধা সদন, টিউলিপের মালিকানাধীন গুলশানের একটি ফ্ল্যাট, রেহানার মালিকানাধীন সেগুনবাগিচার একটি ফ্ল্যাট ও ববির মালিকানাধীন গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট দেখাশোনায় প্রশাসক নিয়োগের অনুমতি চাওয়া হয়। শুনানি শেষে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন। শেখ হাসিনাসহ সাত জনকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে একই আদালত। নিষেধাজ্ঞা পাওয়া অন্যান্যরা হলেন, তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, তার ছোট বোন শেখ রেহানা, শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেয়। দুদকের পক্ষে দুদকের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.