স্বপ্নের পদ্মাসেতু নির্মাণ করে বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছি আমাদের সক্ষমতা
চুয়াডাঙ্গা জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান
স্টাফ রিপোর্টার: ২৫ জুন থেকে সপ্তাহব্যাপী চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশে জনগণনা শুরু হচ্ছে। জাতীয় এ কর্মসূচি সর্বাত্মক সফল করার জন্য নিজ নিজ এলাকার তথ্য সংগ্রহকারীদের সার্বিক সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক বলেছেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে সিসি ক্যামেরার গুরুত্ব অনেক। জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। প্রয়োজনে আরও সংযুক্ত করা হবে। বিশেষ উদ্যোগে শহর ও শহরতলীর মানুষ নিজ নিজ বাড়ির সদর দরজা, ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেন।’
গতকাল রোববার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে অনুুষ্ঠিত জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপরোক্ত আহ্বান জানানো হয়। আগামী ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে সামনে রেখে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাঙালী জাতি নিজস্ব তহবিল থেকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ^বাসীকে অবাক করেছে। আমরা দেখাতে পেরিছি আমাদের সক্ষমতা। পদ্মাসেতু উদ্বোধন এবং উদ্বোধন পূর্ব নানা আয়োজন যাতে শান্তিপূর্ণ ও উৎসব মুখর হয় সে বিষয়ে সর্বাত্মক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া হবে। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহার আগে পশুহাটগুলোতে আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে এবং জালটাকা কারবারী, অজ্ঞানপার্টির অপতৎপরতা রুখতেও জেলা পুলিশসহ গোয়েন্দা বিভাগে কর্মরতদের আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিছুজ্জামান, ৪ উপজেলার নির্বাহী অফিসারগণ, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক গোলাম ইয়াসীন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, মুফতি মাসুদুর রহমান লিটু, প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক শওকত মাহমুদ, প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন, সাংবাদিক শাহ আলম সনি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় কার্যবিবরণী উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত রহমান। সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান আইন শৃঙ্খলা কমিটির পক্ষে দৈনিক মাথাভাঙ্গা সম্পাদককে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, দৈনিক মাথাভাঙ্গা দীর্ঘ ৩১ বছর পেরিয়ে ৩২ বছরে পদার্পণ করায় মাথাভাঙ্গা পরিবারকে আমাদের পক্ষে শুভেচ্ছা। দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সাথে পত্রিকাটি আঞ্চলিক পত্রিকা হিসেবে চালু রয়েছে। আমাদের তরফে পত্রিকার সার্বিক সহযোগিতার ধারা অবশ্যই অব্যাহত থাকবে।
আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভার শেষ প্রান্তে চুয়াডাঙ্গা পরিবহন সেক্টরের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে জেলা শহরে জানজট নিরসনসহ কয়েকটি স্থানে পরিবহন মালিক সমিতির কর্তৃক চেকপোস্ট বসানো এবং অটো চালক আরোহীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘিœত হওয়ার প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়। জেলা পরিবহন মালিক সমিতি, মালিক গ্রুপ, শ্রমিক ইউনিয়ন, অটো চালক সমিতিসহ পরিবহন সেক্টরের বিভন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে পরিস্থিতির আলোকে বিষদে আলোচনা করেন। অটোচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম সাজু তার বক্তব্যে বলেন, চুয়াডাঙ্গা-ভালাইপুর সড়কের বঙ্গজের নিকট, চুয়াডাঙ্গা-দামুড়হুদা সড়কের উজিরপুরসহ কয়েকটি স্থানে মালিক সমিতির লোকজন মারমুখি আচরণ করে। যাত্রী হয়রানী করে। আমরা টাকা দিয়ে অটো কিনে চালায়। শান্তিপূর্ণভাবে সড়কে যাত্রীবহন করার পরিবেশ চাই। চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস মিনিবাস মালিক গ্রুপের সভাপতি মো. সালাউদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম, চুয়াডাঙ্গা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি একেএম মঈনুদ্দিন মুক্তা, চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এম জেনারেল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রিপন ম-ল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। পরিবহন শ্রমিক ও মালিকপক্ষ জানান, চুয়াডাঙ্গায় দিন দিন বেড়েই চলেছে অবৈধ যান। অটোও বাড়ছে। এসব অবৈধ যান তো আর সরকারের রাজস্ব দেয়া না। অথচ দেদারছে যাত্রী বহন করে। আমাদের বাস মালিকদের ট্যাক্স দিতে হয়। লোকবলও খাটে। শহরের অটো যদি দূরের যাত্রীও বহন করে তাহলে বাস শিল্প টিকবে কীভাবে? তাছাড়া শহরের বাইরের অটো শহরে এলে শহরে জানজট ভয়াবহ রূপ নেবে। এ কারণে পূর্বের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় রোগী বহন ছাড়া দূরের সাধারণ যাত্রী অটো আনা নেয়া করতে পারবে না। এ জন্যই কয়েকটি স্থানে আমরা চেক করি।
উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার বলেন, সময়ের প্রয়োজনে পরিবর্তন মানতে হবে। কোথাও অসৌজন্যমূলক আচরণ করা চলবে না। সমাজে বেকারত্ব বেড়ে গেলে কোনো ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয় তা আমাদের সকলকেই বুঝতে হবে। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক বলেন, যাত্রী সাধারণের চলাচলের স্বাধীনতা রয়েছে যেমন, তেমনই প্রধান প্রধান সড়কের নিরাপত্তাকেও আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের সকলকেই জনস্বার্থকেই সর্বাত্মক গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। শক্তি প্রয়োগ করে নয়, সেবার মান বাড়িয়ে সময়ের মূল্য দিতে পারলে অবশ্যই বাসগুলো যাত্রী পাবে। বাস নিরাপদ পরিবহন। এরপরও কেনো বাস থেকে যাত্রী সাধারণ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে তা অবশ্যই মালিকপক্ষকে ভাবতে হবে। পূর্বের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অটো চলবে। উভয়কেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অক্ষুণœ রাখতে হবে। পরবর্তীতে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের মতামত নিয়ে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নেয়া হবে।