মেহেরপুরের গাংনীতে যুবদল নেতা খুনের নেপথ্যে যা জানালো পুলিশ

পাওনা টাকা নয় দলীয় কোন্দলের কারণে হত্যার শিকার আলমগীর

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরের গাংনীতে যুবদল নেতা আলমগীর হোসেন হত্যাকা- কোন পাওনা টাকাকে কেন্দ্র করে নয় বরং যুবদলের দলীয় কোন্দলের কারণে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন মেহেরপুর পুলিশ সুপার মাকসুদা আখতার খানম।
পুলিশ সুপার বলেন, গাংনী পৌর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি নিহত আলমগীর হোসেন রাজনৈতিক কারণে দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকায় ওয়ার্ডের যুবদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করতেন মাফিকুল ইসলাম মাফি। গত ৫ আগস্টের পরে নিহত আলমগীর দেশে আসে এবং রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। তার এই সক্রিয়তার কারণে মাফিকুল রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়ে।
তিনি আরো বলেন, রবিউল ইসলাম বিপ্লব আগামীতে গাংনী পৌর যুবদলের সম্পাদক হওয়ার চেষ্টা করে আসছিল। এ কারণে ১নং ওয়ার্ড কমিটির সভাপতির সমর্থন প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আলমগীর বিপ্লবকে সমর্থন না দিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। আলমগীরের জনপ্রিয়তার কারণে তাকে সভাপতি পদ থেকে সরানোও সম্ভব হচ্ছিল না। এ কারণে পথের কাটা আলমগীরকে সরিয়ে যে কোন মূল্যে মাফিকে সভাপতির চেয়ারে বসানোর পরিকল্পনা করে বিপ্লব।
মেহেরপুর পুলিশ সুপার আরো বলেন, হত্যাকা-ের মাস্টারমাইন্ড রবিউল ইসলাম বিপ্লব ও মাফিকুল ইসলাম মাফি ঘটনার ৮-১০ দিন পূর্ব থেকেই তাদের নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যাকা-ের জন্য তারা উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের সহড়াবাড়িয়া মাঠের ইয়ারুল কাটা নামক নির্জন স্থান বেছে নেয়। রবিউল ইসলাম বিপ্লব তার সহযোগী শফিকুল ইসলাম শফিকে ৩ হাজার টাকা জবাই করার জন্য ধারালো ছুরি কেনা ও অন্যান্য খরচ বাবদ দেয়। রবিউল ইসলাম বিপ্লব অপর সহযোগী জনি ইসলাম ও হাসিবুল ইসলামকে গাংনী বাজারের একটি দোকান হতে সাদা নাইলনের দড়ি কিনে দেয়।
নিহত আলমগরী হোসেন তাদের বন্ধু ও ঘনিষ্ঠজন হওয়ার কারণে গত ১ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখ সন্ধ্যায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে। রবিউল ইসলাম বিপ্লব ও মাফিকুল ইসলাম মাফি সহযোগী আলমগীর ও শফিকুল শফিকে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। পূর্ব হতেই পাহারা দেয়ার জন্য ঘটনাস্থলে জনি ইসলাম ও হাসিবুল ইসলাম অপেক্ষারত ছিল।
ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর সাথে সাথেই আসামিরা ভিকটিম আলমগীরকে জাপটে ধরে পার্শ্ববর্তী কাঁচা রাস্তায় নিয়ে দড়ি দিয়ে হাত বাঁধে, মাফলার দিয়ে মুখ বাঁধে এবং ভিকটিমের গলায় দড়ি পেঁচিয়ে টানাটানি করে। ভিকটিম আলমগীর নিস্তেজ হয়ে পড়লে বিপ্লব মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য গলা কেটে জবাই করার নির্দেশ দেয়।
শফিকুল শফি তার নিকট থাকা ধারালো ছুরি বের করে আসামি আলমগীরের হাতে দিলে আসামি আলমগীর জনিকে জবাই করার জন্য বলে। জনি গলা কেটে জবাই করার পর রক্তমাখা ছুরি ঘাসে মুছে শফিকুলকে দিয়ে দেয়। মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য বিপ্লব তার কাছে থাকা হাতে লেখা চিরকুট লাশের পাশে রেখে দেয়।
হত্যাকা- শেষে আসামিরা গাংনী ফিরে আসে। শফিকুল তার কাছে থাকা ছুরি বিপ্লবকে দিয়ে বাড়ি চলে যায়। হত্যাকা-ের মাস্টারমাইন্ড রবিউল ইসলাম বিপ্লবের দেখানো মতে হত্যার কাজে ব্যবহৃত ধারালো ছুরি এবং মাফিকুল ইসলাম মাফির দেখানো মতে নিহতের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
এ পর্যন্ত হত্যাকা-ের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ৬ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে যাদের মধ্যে ৫ জন নৃশংস হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেছে এবং তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
হত্যাকা-ে জড়িত আটককৃত ৬ আসামিরা হলো গাংনী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড চৌগাছা গ্রামের রইচ উদ্দিনের ছেলে মো. রবিউল ইসলাম (বিপ্লব) (৩৬), গাংনী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড বাশবাড়িয়া পশ্চিমপাড়ার আব্দুল আউয়ালের ছেলে মফিকুল ইসলাম (৩৯) ও গাংনী উপজেলার কোদাইলকাটি গ্রামের জামাত আলীর ছেলে মো. আলমগীর হোসেন (৪০), গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের মিনাপাড়া গ্রামের মো. লোকমান ইসলামের ছেলে হাসিবুল ইসলাম (২১) ও মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের ট্যাঙ্গারমাঠ শিশিরপাড়ার মৃত হযরত আলী ছেলে মো. শফিকুল ইসলাম শফি (৪২)।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More