ভালো ফলন হলেও পেঁয়াজের দরপতনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা
চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে পেঁয়াজ ওঠাতে ব্যস্ত কৃষক
স্টাফ রিপোর্টার: পশ্চিমের জেলাগুলোতে এখন পেঁয়াজের ভরা মরসুম। মাঠে মাঠে চাষিরা পেঁয়াজ ওঠাতে ব্যস্ত। তবে পেঁয়াজের দরপতনে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, ভরা মরসুমে পেঁয়াজ আমদানির ফলে দরপতন হয়েছে। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের যশোর আঞ্চলিক অফিস স‚ত্রে জানা যায়, চলতি রবি মরসুমে যশোর জেলায় ১ হাজার ৩৪৭ হেক্টর, ঝিনাইদহ জেলায় ১০ হাজার ৭৯১ হেক্টর, মাগুরা জেলায় ১১ হাজার ৯৪৪ হেক্টর, কুষ্টিয়া জেলায় ১৩ হাজার ৭৩৪ হেক্টর, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১ হাজার ৫৯৪ হেক্টর ও মেহেরপুর জেলায় ৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে।
চাষিরা জানায়, এবার বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলা করে পেঁয়াজ চাষ করতে হয়েছে। পেঁয়াজ বীজের দাম ছিলো চড়া। হাইব্রিড পেঁয়াজ বীজ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কেজি দরে কিনতে হয়। দেশি ও অন্যান্য পেঁয়াজ বীজের প্রতি কেজির দাম ছিলো ২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। এবার আবহাওয়াও ছিলো বৈরী। বীজ বপনের পর অক্টোবর মাসে বৃষ্টি অনেক বীজতলা নষ্ট হয়। ফের বীজ কিনে বীজতলা তৈরি করেন চাষি। চারা লাগানোর পরও বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমে। এতে ক্ষতি হয়। চাষও নাবি হয়।
শৈলকুপা উপজেলার হাজরামিনা গ্রামের বড় চাষি তোফাজ্জেল হোসেন জানান, প্রতি বছর ১৪-১৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেন। এবার ১৬ বিঘাতে চাষ করেছেন। সব উপকরণের দাম চড়া, উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ফলনও ভালো হচ্ছে না। নতুন পেঁয়াজ ওঠার পর প্রতি মণ ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত দরে কেনাবেচা হয়। হাটবাজারে আমদানি বৃদ্ধির পর দর কমতে থাকে। বর্তমানে এক মণ (৪০ কেজি) পেঁয়াজ ৭০০ টাকা থেকে সাড়ে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ দরে পেঁয়াজ বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠবে না বলে তিনি জানান।
শনিবার শৈলকুপা হাটে চাষি আতিয়ার মিয়া বলেন, ৭ মণ পেঁয়াজ ৭৩০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। তার অভিযোগ হাটের ফড়িয়া, ব্যাপারী ও আড়তদাররা সবাই চাষিকে ঠকায়। ঢলতার নামে মণপ্রতি ২ কেজি করে বেশি নেয়। ওজনেও কারচুপি করে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার তেরঘরিয়া গ্রামের চাষি জিয়াউর রহমান বলেন, তাদের এলাকায় পেঁয়াজ ওঠানো শেষ হয়েছে। এবার দেড় বিঘাতে পেঁয়াজ চাষ করেন। ফলন ভালো হয়নি, দামও কম। তাদের এলাকায় ভারতীয় সুখ সাগর জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়। পাইকারি প্রতি মণ পেঁয়াজ ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে।
পশ্চিমের জেলাগুলোতে পেঁয়াজের বড় হাট হচ্ছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা, ভাটই, রয়েড়া ও শেখপাড়া। মাগুরা জেলার লাঙ্গলবাঁধ, শ্রীপুর, সচিলাপুর, নাকোল, রাজাপুর, নৌহাটা ও শুজিতপুর। কুষ্টিয়া জেলার পান্টি, বাঁশগ্রাম, চৌরঙ্গী ও রাজারহাট। মেহেরপুর সদর ও গাংনী হাটে প্রচুর পেঁয়াজ উঠেছে।
পেঁয়াজের ব্যবসায়ীরা বলেন, পাইকারী পেঁয়াজের হাটগুলোতে প্রতি মণ ৭০০ টাকা থেকে সাড়ে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে খুচরা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা দরে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক হৃদয়শ্বর দত্ত বলেন, তারা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। বাজারের ব্যাপারে কিছু বলতে পারেন না। বর্তমানে পেঁয়াজের ভরা মরসুম চলছে, দাম কমে গেছে। এতে চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়েছে।