চুয়াডাঙ্গায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের উদ্বোধনকালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক
স্টাফ রিপোর্টার: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ঘটনা নতুন প্রজন্মের জানা খুবই জরুরি। এ জন্য শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে শিডিউল করে এখন থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা স্কুল-মাদরাসায় যাবেন এবং ছেলেমেয়েদের যুদ্ধকালীন সংগ্রামের কথা শোনাবেন। গতকাল শনিবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর ও জীবননগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ ক ম মোজাম্মেল হক এসব কথা বলেন। এ সময় শহরের এতিমখানা সড়কে অবস্থিত সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স সরাসরি এবং সেখান থেকে ভার্চুয়ালি জীবননগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স উদ্বোধন করেন মন্ত্রী। নবনির্মিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে আয়োজিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে মন্ত্রী বলেন, সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তৈরি সব কটি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ক্যাপসুল লিফট স্থাপন করা হবে। প্রাথমিকভাবে প্রতিটি লিফটের প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। এ ছাড়া ‘বীরের কণ্ঠে বীর গাথা’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে প্রত্যেক বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্য ধারণ করা হবে। সব মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্য সেখানে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা কী সেøাগান দিয়েছিলেন, কার কথায় মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন, কীভাবে ৯ মাস যুদ্ধ করলেন, কোথায় ট্রেনিং নিয়েছেন, এগুলো সব বর্ণনা থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড নির্বাচনের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা কেউ কাউকে মানেন না। আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। অল্প দিনের মধ্যেই কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। জীবিত মুক্তিযোদ্ধারা ভোটার হবেন। ভোটার তালিকায় কোনো মুক্তিযোদ্ধার নাম যদি ভুল থাকে বা কোনো অমুক্তিযোদ্ধার নাম এসে থাকে, প্রমাণ সাপেক্ষে তা সংশোধন করা হবে।’ মন্ত্রী বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরেন এবং নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ায় আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বীরমুক্তিযোদ্ধারা এখন ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। এছাড়া অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ হাজার বীর নিবাস নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিনামূল্যে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, জেলা, উপজেলাসহ দেশের বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা, ওষুধ, টেস্ট যা প্রয়োজন সবই বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকারই সবসময় কাজ করেছে। আর অন্যরা যখন ক্ষমতায় ছিলো শুধু লুটপাট করেছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি মো. আলী আজগর টগর, পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল-মামুন, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ-সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দার, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মালিকসহ সদর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দ সরাসরি উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া জীবননগর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন।
এদিকে জীবননগর মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স ভবনে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম ইশা, আয়েশা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতানা লাকি, জীবননগর থানার ওসি আব্দুল খালেক, জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম, জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল, সমাজসেবা কর্মকর্তা জাকির হোসেন মোড়ল, জীবননগর উপজেলা প্রকৌশলী তাওহিদ আহমেদসহ প্রমুখ। এছাড়াও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার দলিল উদ্দিন দোলু, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাইদুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মর্তুজা, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বদরুদ্দীন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক জেলা কমান্ডের সদস্য সোজা উদ্দিন সহ প্রমুখ। ভার্চুয়ালের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর সাথে মতবিনিময়কালে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাইদুর রহমান ও দেলোয়ার হোসেন দুলু বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বেতন ২০ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা, জীবননগর মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স ভবনের লিফট স্থাপনসহ মনোহরপুর ইউনিয়নে মাধবখালীতে অবস্থিত ছয় কবর উঠিয়ে নিয়ে এসে ধোপাখালি বিজেপি ক্যাম্পের নিকট স্থাপন করার দাবি উপস্থাপন করেন।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে এসব মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। দেশের ৬৩ জেলা ও ৪৭০ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে প্রায় ১৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৩ জেলা ও প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৪২১ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধবিষযক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক শনিবার বিকেলে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা শহরের বাস টার্মিনাল সংলগ্ন এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য আব্দুল হাই, ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মনিরা বেগম, পুলিশ পুপার (এসপি) আশিকুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।