জীবননগর ব্যুরো: জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন খাঁন সুরোদ্দিন সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে পুকুর খনন করার নামে ইটভাটায় মাটি বিক্রি করছিলেন। এ অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ আইনে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। গত শনিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহিউদ্দিন এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতি টের পেয়ে এক্সকেভেটর ফেলে ঘটনাস্থল থেকে শ্রমিকরা পালিয়ে যায়। ভ্রাম্যমাণ আদালত ঘটনাস্থল থেকে একটি মাটি খনন করার যন্ত্র এক্সেভেটরসহ মাটি ভর্তি দুটি ট্রাক্টর জব্দ করেন। জীবননগর থানা পুলিশের একটি দল ভ্রাম্যমাণ আদালতকে সার্বিক সহযোগিতা করেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলার ধোপাখালী গ্রামের পশ্চিমপাড়ার মৃত গোলাম হোসেনের ছেলে এবং মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন খাঁন সরকারি কোনো অনুমতি ছাড়াই ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ধোপাখালী গ্রামের পশ্চিমপাড়া বিলের মাঠে পুকুর খননের নামে এক্সেভেটর দিয়ে মাটি উত্তোলন করছিলেন এবং ওই উত্তোলনকৃত মাটি পেয়ারাতলা মা-বাবা ইটভাটায় বিক্রি করছিলেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০-১২টি মাটি বোঝায়কৃত ট্রাক্টর বেপরোয়া গতিতে গ্রামের ভেতর দিয়ে যাওয়া আসা করতো। এতে গ্রামবাসী অতিষ্ঠ হয়ে অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধ করার জন্য জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। গ্রামবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহিউদ্দিন গত শনিবার দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতি টের পেয়ে মাটি কাটা শ্রমিকরা এক্সেভেটর ফেলে রেখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন খাঁন এবং তার চাচতো দুলাভাই ধোপাখালী গ্রামের আবুল হোসেন মৃধার ছেলে রবিউল ইসলাম ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির হন। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন খাঁন আদালতকে জানান, তার পুকুর খননের তদাকরি করছেন রবিউল ইসলাম। পুকুর খননের নামে ইটভাটায় মাটি বিক্রি করার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত রবিউল ইসলামকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং একই সাথে ওই জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধের নির্দেশ দেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারিক হাকিম মো. মহিউদ্দিন জানান, অবৈধভাবে কেউ কৃষি জমির মাটি কেটে এবং পুকুর খননের নামে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করলে ভ্রাম্যমাণ আদালত তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে ধোপাখালী গ্রামের রব্বানি হোসেন নামে এক ব্যক্তি জানান, মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন খাঁন ধোপাখালী গ্রামের মৃত নেপাল ম-লের ছেলে ময়েজ উদ্দীনের কাছ থেকে ৩ বছর আগে পশ্চিমপাড়া বিলের মধ্যে ওই জমি কেনেন। গত ৩-৪ দিন থেকে পুকুর খননের নামে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি উত্তোলন করে ইটভাটায় বিক্রি করছেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে আটক হওয়া ইটভাটায় মাটি বহনকারী ট্রাক্টর চালক ধোপাখালী গ্রামের কলিমোদ্দিনের ছেলে আজাদ জানান, বিলের মাঠ থেকে মাটি নিয়ে পেয়ারা তলায় মা-বাবা ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন খাঁন ওরফে সুরোদ্দিন তার ট্রাক্টর ভাড়া নিয়েছিলেন। একই কথা বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের হাতে আটক হওয়া অপর ট্রাক্টর চালক উথলী গ্রামের মহির উদ্দীনের ছেলে ডালিম, তিনি বলেন, চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন মাটি বহনের জন্য তার ট্রাক্টর ভাড়া নিয়েছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধোপাখালী গ্রামের এক ব্যক্তি জানান, প্রতিদিন ট্রাক্টরে ওভার লোডিং মাটি নিয়ে ইটভাটায় সরবরাহ করায় সদ্যনির্মিত পাঁকারাস্তা দেবে যাচ্ছে এবং রাস্তার পাশের অংশ ভেঙে যাচ্ছে। এছাড়া বেপরোয়া গতিতে ট্রাক্টর চলাচলের কারণে রাস্তায় শিশু ও বৃদ্ধদের অবাধ যাতায়াতে নিরাপত্তার অভাব দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে শনিবার দুপুরে ইটভাটায় অবৈধভাবে মাটি বিক্রি করার অপরাধে একই আইনে উথলী গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে আমিনুর রহমানকে ১৫ হাজার টাকা এবং বাঁকা গ্রামের মকছেদ বিশ্বাসের ছেলে ট্রাক্টর চালক ফরহাদ হোসেনকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ