অনশনকারী মৌমিতার বিরুদ্ধে মেয়রের মানহানি মামলা
গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলা পরিষদ শহীদ মিনারে অনশনকারী মৌমিতা পলির নামে মানহানির মামলা দায়ের করেছেন পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম। মিথ্যা, ভিত্তিহীন অভিযাগ তুলে সম্মানহানির অভিযোগে তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার মেহেরপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি ৫ কোটি টাকার মানহানির মামলাটি দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত মেয়রের অভিযোগটি গ্রহণ করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন মেয়র। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মৌমিতা অনশন ভঙ্গ করেছেন। পরিবার ও শুভাকাক্সিক্ষরা তাকে অনশন ভঙ্গ করিয়ে বাড়িতে নিয়ে গেছেন বলে জানায় তার পারিবারিক সূত্র। মৌমিতা ও তার পিতা শাহাবুদ্দিন ওরফে বাহাদুর এবং স্বামী মোমিনুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে মেয়রের মামলার আর্জিতে।
মেয়র আশরাফুল ইসলাম তার মামলার আর্জিতে বলেছেন, মৌমিতার সাথে মোমিনুর বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে বসবাস শুরু করেন। মৌমিতা পলির পিতার অনুরোধে তাকে পৌরসভায় মাস্টাররোলে সহকারী কর আদায়কারী এবং তার স্বামীকে মেয়রের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজারের চাকরি দেয়া হয়। পৌর কর্মচারীদের সাথে অসদাচরণের জন্য মৌমিতা চাকুরিচ্যুত হয়। এতে মেয়র আশরাফুল ইসলামের ওপর ক্ষিপ্ত হয় মৌমিতা। এরপরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দিলে ২০১৮ সালের ডিমেম্বরে হিসাব-নিকাশ বুঝিয়ে না দিয়ে মৌমিতার স্বামী মেয়রের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে তার নিজ জেলায় চলে যান। পরবর্তীতে মৌমিতা সহকারী কর আদায়কারী পদে পৌরসভায় পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অনৈতিকভাবে নিয়োগ নেয়ার জন্য মেয়রের ওপর চাপ দেয়। এরপরে একটি মামলায় হাজতে ছিলেন মেয়র। ভারপ্রাপ্ত মেয়র নবীর উদ্দীন সহকারী কর আদায়কারী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলেন। এর আগে মৌমিতার ঘুষের প্রস্তাবে মেয়র আশরাফুল ইসলাম রাজি না হলে ক্ষিপ্ত হন মৌমিতা। মেয়রের অনিষ্ট সাধনের জন্য মেয়রের রাজনৈতিক বিরোধীদের উস্কানি ও ষড়যন্ত্রে শহীদ মিনারে মেয়রের বিরুদ্ধে অনশন শুরু করে। মৌমিতা, পিতা ও তার স্বামীর সহযোগিতায় শহীদ মিনারে বসে পরিকল্পিতভাবে মেয়রের সম্মানহানী করার জন্য স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক ও জনগণের সামনে প্রচার করছে যে, মৌমিতা সহকারী কর আদায়কারী পদে চাকরির জন্য মেয়রকে ১৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। এ টাকা আদায় করার জন্য তিনি অনশন করছেন বলে দাবি করেন। এছাড়াও মেয়রকে অশ্রাব্য গালিগালাজ ও খুন জখমসহ যে কোন ধরনের ক্ষতি করার হুমকি দেয়। শহীদ মিনারে অনশনের সময় মেয়রের বিরুদ্ধে আসামিদের প্রদত্ত বিবৃতি অসত্য, মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং একজন সম্মানীয় ব্যক্তি জানা সত্বেও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও জনগণের সামনে প্রচার করে মানহানি করেছেন মৌমিতা। যার ক্ষতির পরিমাণ ৫ কোটি টাকা। তাই আসামিদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৫০০/৫০১/৫০৫ ধারায় গ্রেফতারী পরোয়ানা চেয়েছেন মেয়র আশরাফুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, ২০ আগস্ট মৌমিতা অনশন শুরু করলে অনেকে ছিলেন তার পাশে। অনশন ভঙ্গ করে থানায় আলোচনায় বসলেও তার স্বামী উপস্থিত ছিলেন না। স্বামী মেয়রের কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগে করেছিলেন মেয়র। পরবর্তীতে তিন দিন ধরে মৌমিতা অনশন করলেও তার পাশে তেমন কাউকে দেখা যায়নি। তাই কোন গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য মৌমিতা অনশন করছেন এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো গাংনীর মানুষের মনে।
অবশ্য মৌমিতার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরিবারের সিদ্ধান্তে মৌমিতা অনশন ভঙ্গ করেছেন। পরিবারের লোকজন উদ্যোগ নিয়েছে বিষয়টি কিভাবে নিরসন করা যায়।
এ বিষয়ে মেয়র আশরাফুল ইসলাম বলেন, সামনে পৌর নির্বাচন। প্রতিপক্ষের লোকজন আমাকে ঘায়েল করতে মৌমিতাকে দিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমাকে রাজনৈতিক হেনস্ত করার জন্য অনশনের নাটক সাজিয়েছে। এখন মামলায় যা হয় তাই মেনে নেবো। মামলা করা ছাড়া আমার কাছে কোনো উপায় ছিলো না।