পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ : সকল ওসি ইউএনওকে বদলির নির্দেশ ইসির
জনপ্রশাসন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বদলির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আলাদা চিঠি
স্টাফ রিপোর্টার: আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে দেশের সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে জনপ্রশাসন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বদলির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পৃথক পৃথক চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে বর্তমানে দেশে ৬৫২টি থানা রয়েছে। এসব থানার বেশির ভাগ ওসির বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। কোনো কোনো ওসির বিরুদ্ধে নির্বাচনের দিন প্রার্থীর লোকজনকে ভোটকেন্দ্র দখলে সহায়তা করার আশ্বাস দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে ইসি বিষয়টি আমলে নিয়ে খতিয়ে দেখে। এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পর শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গণমাধ্যমের কাছে সব থানার ওসিদের বদলির নির্দেশ দেয়ার তথ্য জানান। তিনি জানান, বর্তমান কর্মস্থলে ছয় মাসের বেশি দায়িত্বে আছেন, এমন ওসিদের ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বদলির প্রস্তাব চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের উপসচিব মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত নির্দেশনাটি বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে পাঠিয়েছেন। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সকল থানার ওসিদের পর্যায়ক্রমে বদলি করার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে। প্রথম পর্যায়ে যে সকল থানার ওসিদের বর্তমান কর্মস্থলে ছয় মাসের অধিক চাকরিকাল সম্পন্ন হয়েছে তাদেরকে অন্য জেলায় অথবা অন্যত্র বদলির প্রস্তাব ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করতে হবে। এর আগে বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ সচিব, আইজিপির সঙ্গে নির্বাচন কমিশন বৈঠক করে। ঐ বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বেশির ভাগ ওসিদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক অভিযোগ আসার বিষয়টি জানানো হয়। এরপরই ওসিদেরকে বদলি করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বদ্ধপরিকর। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো পুলিশ বা স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কারো পক্ষ অবলম্বন করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, থানার ওসিদেরকে তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে কারো বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে ব্যত্যয় ঘটলে, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারা দেশে পুলিশের ৬৫২টি থানা রয়েছে। প্রত্যেক থানায় তিন জন পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) দায়িত্ব পালন করেন। এদের মধ্যে পরিদর্শক (অপারেশন্স) ও পরিদর্শক (তদন্ত) দুই জন পৃথক দায়িত্ব পালন করেন। থানার মূল দায়িত্ব পালনকারী পদকে ওসি (অফিসার ইনচার্জ) বা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে একজন জ্যেষ্ঠ পরিদর্শক দায়িত্ব পালন করেন। সব মিলিয়ে পুলিশের বর্তমানে ৭ হাজার পরিদর্শক রয়েছে। ওসিই থানা এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন। মূলত একটি থানায় ওসিই হলেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির হর্তাকর্তা।
ইতিমধ্যে অনেক ওসির বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ এসেছে। কোনো কোনো ওসি প্রার্থীদের জনসভার মঞ্চে উঠে বক্তব্যও দিয়েছেন। আবার প্রভাবশালী প্রার্থীদের রাজনৈতিক অফিসে যাতায়াত করার অভিযোগ রয়েছে। কেউ কেউ প্রার্থীদেরকে ভোটের দিন কেন্দ্র দখল করতে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—এমন অভিযোগ রয়েছে।
থানাগুলোতে দুই-তিন বছর ধরে দায়িত্ব পালনকারী ওসিদের পূর্বের কার্যক্রমের ফাইল যাচাই-বাছাই করেছে। অনেক ওসি আবার একটি জেলা বা মেট্রোপলিটন থানা এলাকায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। অর্থাৎ একজন ওসি চার-পাঁচ বছর ধরে মেট্রোপলিটন পুলিশ বা জেলা পুলিশের পর্যায়ক্রমে চার-পাঁচটি থানায় দায়িত্ব পালন করেছেন। এসব ওসিদের বিরুদ্ধে কোনো কোনো প্রার্থীর কাছ থেকে আগাম টাকাও নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বেশির ভাগ থানার ওসিরা অনেক বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচন কমিশনের সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অভিযুক্ত ওসিদের বদলি করা হবে। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বদলি করা হবে। কাউকে বদলি করে পাশের থানায় দেওয়া হবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, দেশের বেশির ভাগ থানায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসিরা ২০০২ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পুলিশের এসআই পদে যোগদান করেছেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত যোগদান করা এসআইদের যারা পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন—তারা বর্তমানে পরিদর্শক (তদন্ত) ও পরিদর্শক (অপারেশন্স) পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এক্ষেত্রে ওসিদের বেশির ভাগই বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলের। এ কারণেই এরা যে কোনো সময় নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে যে কোনো প্রার্থীর পক্ষে পক্ষপাতমূলক অবস্থান নিতে পারেন।
এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গণমাধ্যমকে বলেন, কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে ইসি বদ্ধপরিকর। একটা ক্যাটাগরি নির্ধারণের সুবিধার্থে এ উদ্যোগ। যখনই দরকার হবে তখনই ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.