কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া মডেল থানা ও কুমারখালী থানার পৃথক দুটি হত্যা মামলায় চার জেএমবি সদস্যসহ ৬জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ অতিরিক্ত আদালত-১এর বিচারক তাজুল ইসলাম এবং বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আশরাফুল ইসলাম জনাকীর্ণ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের উপস্থিতিতে এই রায় দেন। রায়ে কারাদন্ডসহ ২৫ হাজার টাকা এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর সাজার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ডা. সানাউর রহমানকে (৫৭) হত্যায় চাঞ্চল্য সৃষ্টির মামলায় যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্তরা হলেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খাজানগর গ্রামের বাসিন্দা মজিবর রহমান ব্যাপারীর ছেলে আজিজুল ইসলাম (২৫), আব্দুর রহমান ওরফে কালা কাজীর ছেলে সাইজুদ্দিন কাজী (৩০), কবুরহাট দোস্তপাড়ার আব্দুস সামাদ সরদারের ছেলে জয়নাল সরদার (৩৮) এবং খাজানগর মাদরাসাপাড়ার আজিজুল হক খানের ছেলে সাইফুল ইসলাম খান (৩০)।
অপরদিকে কুমারখালী থানার ব্যবসায়ী রিয়াজুল উপজেলার বাড়াদী গ্রামের বাসিন্দা মৃত আইনুদ্দিন বিশ^াসের ছেলে সিফাত বিশ^াস (৫০) এবং ভাতিজা মৃত জয়েন বিশ^াসের ছেলে ওয়াসিম আলী (৩৭)।
মামলাসূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২০ মে, সকাল পৌনে ১০টায় সদর উপজেলার মৃত বজলুর রহমানের ছেলে হোমিও চিকিৎসক মীর সানাউর রহমান (৫৭) তার সহযোগী কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. সাইফুজ্জামানসহ নিজ দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র বটতৈল শিশির মাঠ এলাকায় পৌঁছুলে পেছন থেকে পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা আসামিরা পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। আসামিরা ধারালো চাপাতিসহ রড ও লাঠিসোটা ব্যবহার করে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয়রা টের পেলে গুরুতর রক্তাক্ত জখম আহত দুইজনকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মীর সানাউর রহমানকে মৃত ঘোষণা করে। গুরুতর আহত ইবি শিক্ষক আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মীর আনিসুর রহমান বাদী হয়ে ২১ মে কুষ্টিয়া মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল কুষ্টিয়া মডেল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক আজিজুর রহমান আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। সেখানে তদন্ত প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক উস্কানি থেকে কতিপয় ধর্মান্ধ ব্যক্তিদের দ্বারা ঘটেছে বলে রহস্য উন্মোচিত হয়েছে মন্তব্য করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
অপরদিকে ২০১৭ সালের ২৩ এপ্রিল বিকেল ৫টার সময় কুমারখালী থানার বাড়াদী গ্রামে প্রতিবেশী ব্যবসায়ী বিয়াজুল (৫৫) কে উচ্চশব্দে সাউন্ড বক্স বাজানোকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের জেরে প্রতিবেশীর হামলায় ও ধারালো চাকুর আঘাতে ঘটনাস্থলেই হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ২৪ এপ্রিল কুমারখালী থানায় ৯জনের নামোল্লেখসহ হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে কুমারখালী থানা পুলিশের উপ-পুলিশ পরিদর্শক দিলীপ কুমার বিশ^াস ২০১৭ সালে ১০ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যাকা-ে জড়িত বলে অভিযোগপত্র দাখিল করেন আদালতে। বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ বিশেষ আদালতের সরকারি কৌসুলি অ্যাড. রফিকুল ইসলাম জানান, ব্যবসায়ী রিয়াজুল হত্যা মামলায় স্বাক্ষ্য শুনানী শেষে দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের যাবজ্জীবন কারাদ-সহ ১০হাজার টাকা অর্থদ- অনাদায়ে আরও ৬মাসের কারাবাসের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাড. অনুপ কুমার নন্দী জানান, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হোমিও ডাক্তার সানাউর রহমান হত্যা মামলায় পুলিশের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে দীর্ঘ সাক্ষ্য শুনানী শেষে ৪ আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-সহ প্রত্যেকের পৃথকভাবে ২৫ হাজার টাকা করে অর্থ দ-াদেশ অনাদায়ে আরও ১ বছরের সাজা দ-াদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত।