তথ্য জালিয়াতি করায় ৩৭ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল : কাল অপেক্ষমাণ ভর্তি শুরু
চুয়াডাঙ্গার দুটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ডিজিটাল লটারিতে নির্বাচিতদের ভর্তি সম্পন্ন
স্টাফ রিপোর্টার: ডিজিটাল লটারিতে নির্বাচিত তালিকা থেকে যাচাই-বাছাই শেষে ‘নির্ভুল’ মেধাতালিকা ধরে চুয়াডাঙ্গার দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৪৮০ আসনের বিপরীতে ৩০৬ শিক্ষার্থীকে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়েছে। তথ্য জালিয়াতি করায় মাউশির সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৩৭ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করেছে। আগামীকাল শনিবার থেকে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি শুরু হবে বলে বিদ্যালয়সূত্রে জানা গেছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শিক্ষা ও আইসিটি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুর পেয়ারা বেগম, সহকর্মী সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাঈমা জাহান সুমাইয়া এবং মো. আব্দুর রহমানকে নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গার ভিক্টোরিয়া জুবিলি (ভি.জে) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে যান। তারা সকল আবেদনকারীর তথ্য এবং মেধাতালিকা ও অপেক্ষমাণ তালিকা নিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষা শুরু করেন।
সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৮ ডিসেম্বর সকাল থেকে ১৯ ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত প্রভাতী শাখায় ৮৯ এবং দিবা শাখায় ১০২ জনকে ভর্তি করা হয়। ওইদিন বিকেলে মাউশি থেকে সকল আবেদনকারীর লিংক পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং বলা হয় যে, যারা একাধিকবার আবেদন করেছেন তাদের মধ্যে কেউ ভর্তি হয়ে থাকলে তা বাতিল বলে গণ্য করা হবে। নতুন করে তথ্য যাচাইকালে ভর্তির পর প্রভাতী শাখায় ১১ এবং দিবা শাখায় আরও ১১ জনের নাম একাধিক জায়গায় পাওয়া যায়।
ভিক্টোরিয়া জুবিলি ( ভি.জে) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, দুই শিফটে ২৪০ আসনের মধ্যে ১১৫ আসনে ভর্তি সম্পন্ন হয়েছে। যার মধ্যে ১৫ জনের ভর্তি বাতিল করা হয়েছে।
শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা ভুল তথ্য দিয়ে একজনের নামে একাধিক জন্মনিবন্ধন তৈরি, লটারিতে অংশ নিতে জন্মনিবন্ধন নম্বর নয়ছয় করে অনলাইনে ইচ্ছেমতো দরখাস্ত জমা দিয়েছেন। এতে লটারিতে শিক্ষার্থী দুই থেকে ছয়টি আসনে নির্বাচিত এবং ছেলেদের স্কুলে মেয়ে ও মেয়েদের স্কুলে ছেলের নাম আসায় জটিলতা দেখা দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিক্টোরিয়া জুবিলি (ভি.জে) সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ২৪০ আসনের বিপরীতে লটারিতে ২ হাজার ২৪৫টি দরখাস্ত জমা পড়ে। অপর দিকে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৪০ আসনের বিপরীতে ২ হাজার ১৭৬টি দরখাস্ত জমা পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার সারাদেশে ৫৫০টি সরকারি বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১ লাখ ৭ হাজার ৮৯টি শূন্য আসনে ছয় লাখ ২৬ হাজার ৫৯টি আবেদন করা হয়। গত ১২ ডিসেম্বর লটারির মাধ্যমে সাধারণ, ক্যাচমেন্ট, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আলাদাভাবে সফটওয়্যারের মাধ্যমে লটারি করা হয়। লটারির মাধ্যমে একটি নির্বাচিত ও আরেকটি অপেক্ষমাণ তালিকা তৈরি করা হয়। ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচিত তালিকার ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি নেওয়া হয়। যেসব আসনে ভর্তি হয়নি সেখানে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, সারাদেশে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য একাধিক আবেদন করেছে। সেসব শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্কুলে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তাদের আবেদন বাতিল করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজারের বেশি এমন আবেদন বাতিল করা হয়েছে। কোথাও কোথাও একজন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য দেড় শতাধিক আবেদন করেছে বলেও চিহ্নিত হয়েছে।
একাধিক আবেদন করা শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকে কম্পিউটার দোকান থেকে আবেদন করেছেন। তথ্য ভুল হওয়ায় দোকানদার না জানিয়ে একাধিক আবেদন করেছেন। অনেকের আবেদন করার সময় তথ্যগত ভুল হওয়ায় তারা একাধিক আবেদন করেছেন। কেউ কেউ আবার লটারিতে নির্বাচিত হতে ইচ্ছা করেই একাধিক আবেদন করেন।
জানতে চাইলে মাউশি’র পরিচালক বেলাল হোসাইন বলেন, যাদের একাধিক আবেদন চিহ্নিত হচ্ছে তাদের ভর্তি বাতিল করা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এটি করা হচ্ছে। এ জন্য টেলিটকের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। ভর্তি নীতিমালার বাইরে কারও কিছু করার নেই।
তিনি বলেন, আবেদন করার সময় কেউ ভুল করলে সেটির জন্য তাকে মাসুল দিতে হবে। এসব ভুল সংশোধন করার মতো আমাদের কোনো ক্ষমতা নেই। নির্বাচিত ছাত্র-ছাত্রীর আবেদনে সব তথ্য সঠিক না পাওয়া গেলে তার ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। ভুল করে যদি কেউ ভর্তিও হয় পরে সেটি চিহ্নিত হলে তার ভর্তি বাতিল করা হবে বলেও জানান তিনি। মাউশির বিদ্যালয় (সরকারি) শাখার সহকারী পরিচালক দূর্গা রানী জাগো নিউজকে বলেন, সারাদেশে এ পর্যন্ত ১০ হাজারের মতো ছাত্র-ছাত্রী লটারিতে নির্বাচিত হলেও একাধিক আবেদন চিহ্নিত হওয়ায় তা বাতিল করা হয়েছে। অধিকাংশ অভিভাবক ভতির্র আবেদন কম্পিউটারের দোকানির মাধ্যমে করে। দোকানদার ভুল করেও এমন কা- ঘটাচ্ছে। সেটি হয়তো আবেদনকারী জানতেও পারে না।
এদিকে সরকারি ও বেসরকারি স্কুল এবং বেসরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ফি বেশি নেয়া ও ভর্তি সংক্রান্ত অনিয়ম বন্ধে তদন্তে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। ২১ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চারজন উপ-সচিবের নেতৃত্বে পৃথক চারটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়।