স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় বিএনপি-জামায়াতের ২৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার দুপুরে নাশকতা মামলায় তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে জেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে আলমডাঙ্গায়-১১ জন, চুয়াডাঙ্গা সদরে-৩জন, দামুড়হুদায়-৫ জন ও দর্শনায়-৪জন গ্রেফতার করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ জানায়, নাশকতার অভিযোগে বিএনপি ও জামায়াতের তিনজনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হলেন মেহেদী হাসান (২৮), মাহফুজুর (৩৩), আফজালুর রহমান (৩৩)। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মাহবুুবুর রহমান জানান, আটককৃতদের নাশকতা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক দেখিয়ে শুক্রবার আদালতে পাঠানো হয়েছে।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, জামায়াত ও বিএনপি’র ১১ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে জেলার আলমডাঙ্গা আইলহাস ইউনিয়নের বলেশ্বরপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। আলমডাঙ্গা থানার ওসি বিপ্লব কুমার নাথ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গ্রেফতারকৃত হলেন আলমডাঙ্গার কালিদাসপুর উত্তরপাড়ার বজলুল হকের ছেলে মহাবুল হক (৫৫), কামালপুর গ্রামের চরপাড়ার মৃত হাজি মোফাজ্জেল ম-লের ছেলে সাইদুর রহমান সাকের (৫৫), আলমডাঙ্গা জহুরুলনগর গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে ইমাদুল হক একদুল (৫৫), আলমডাঙ্গা বুড়াপাড়া গ্রামের আসাদুল হকের ছেলে সাগর রহমান (৩৬), আলমডাঙ্গা বলেশ্বরপুর গ্রামের মৃত নুর মহাম্মদ বিশ্বাসের ছেলে সাইফুর রহমান (৪৪), আলমডাঙ্গা টাকপাড়া গ্রামের মৃত শাহাদৎ হোসেন মল্লিকের ছেলে আনোয়ার হোসেন মল্লিক (৪৫), আলমডাঙ্গা পাইকপাড়া ঘোলদাড়ী গ্রামের মৃত আওলাদ আলী ম-লের ছেলে আব্দুল ওহাব মাস্টার (৫৮), আলমডাঙ্গা চরশ্রীরামপুর গ্রামের মৃত জোয়াদ আলী ম-লের ছেলে মঈন উদ্দিন (৫৮), আলমডাঙ্গা কয়রাডাঙ্গা মাঝেরপাড়া গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে আলমগীর হোসেন (৪৫), আলমডাঙ্গা নারায়নপুর গ্রামের মৃত আইজুদ্দিন শেখের ছেলে তাহাজুদ্দি (৫০), আলমডাঙ্গা শ্রীরামপুর গ্রামের মৃত মতলেবের ছেলে নাকিব উদ্দিন আহম্মেদ (৪৭)।
আলমডাঙ্গা থানার ওসি বিপ্লব কুমার নাথ জানান, গোপন সংবাদে জানা যায় আলমডাঙ্গা বলেশ্বরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের ফাঁকা মাঠের দক্ষিণ পাশের নতুন ভবনের সামনে ফাঁকা মাঠের মধ্যে বিএনপি এবং জামায়াতের কর্মীরা কেন্দ্র ঘোষিত ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ উপলক্ষ্যে আলমডাঙ্গা এলাকায় পিকেটিং ও নাশকতামূলক কাজ করাসহ, সরকারি স্থাপনা ধ্বংস, শান্তি প্রিয় জনসাধারণের জান মালের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে অবৈধ অস্ত্র গুলি, বোমাসহ দেশীয় অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ওই স্থানে গোপন বৈঠক করছে। খবর পেয়ে রাতে পুলিশ গেলে, পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দৌড়ে পালানোর সময় তাদের গ্রেফতার করা হয় এবং ঘটনাস্থল থেকে কালো স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো টিনের তৈরি জর্দ্দার কৌটার হাত বোমা সাদৃশ্য বস্তু ৮টি, বিস্ফোরিত পদার্থের গন্ধযুক্ত লোহার জালের কাঠি ১০টি, বিস্ফোরিত এবং বিস্ফোরক পদার্থের গন্ধযুক্ত ৩ টুকরা টিনের তৈরি জর্দ্দার কৌটার বিস্ফোরিত বোমার অংশ বিশেষ, ২২টি বাঁশের লাঠি উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আলমডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা ও দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ বিএনপি-জামায়াতের ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে জেলার বিভিন্ন যায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার হয়। এর মধ্যে দামুড়হুদায় ৫জন ও দর্শনায় ৪জন গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে নাশকতা মামলায় তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। দর্শনা থানা পুলিশ জানায় নাশকতামূলক কার্যকলাপ প্রতিরোধকল্পে বিএনপি জামায়াতের ৫ জন নেতাকর্মী আটক হয়েছে। আটককৃতরা হলেন দর্শনা থানা বিএনপির সভাপতি খাজা আবুল হাসনাত (৭১) সাবেক পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মহিদুল ইসলাম (৬০) সদস্য মহাম্মদ আলী (৩৬) কামরুজ্জামান (৪০) মিজানুর রহমান (৩৮)। দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ জানায় নাশকতার অভিযোগে বিএনপি জামায়াতের ৫ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে আটককৃতরা হলেন জামায়াতের ইউনিয়ন আমির নাহিদ আলী (৩৮), আবু বকর (৫০), আব্দুর রউফ (৪৮) ও আনোয়ার হোসেন (৩৯) খোকন (৩৫)।
এদিকে নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদল। গতকাল শুক্রবার জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিন এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, অবৈধ সরকারের পদত্যাগসহ ১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামকে দমন করার জন্য গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় গতকাল ও পরশু গ্রেফতার হয়েছে দামুড়হুদা উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক আফজালুর রহমান সবুজ, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্মআহ্বায়ক আসিফ মিয়া, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি মেহেদী হাসান অনিক ও জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের সিনিয়র সহসভাপতি তুহিন আহমেদকে। চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদল অহেতুক হয়রানিমূলক এই সকল গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এভাবে গ্রেফতারের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক আন্দোলন কে একটি ভীতিকর পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে যা দেশ ও জাতির জন্য অশনি সংকেত। জেলা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে অবিলম্বে এই গ্রেফতারি অভিযান বন্ধের আহবান জানানো হচ্ছে সেই সাথে ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.